বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমী
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমী বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ক্যাডার কর্মকর্তাদের আইন ও প্রশাসন বিষয়ক মৌলিক প্রশিক্ষণ দানের একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৭ সালের ২১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত এই একাডেমী গোড়ার দিকে কেবল বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের তরুণ ও মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করত। শাহবাগে অবস্থিত এই একাডেমী সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত। এটি পাকিস্তান আমলে গেজেটড অফিসার্স ট্রেনিং একাডেমী এবং স্বাধীনতার পর সিভিল অফিসার্স ট্রেনিং একাডেমী নামে পরিচিত ছিল। ঢাকার সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে আবশ্যিক বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপ্তির পর অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডারের প্রশিক্ষণার্থীগণ একাডেমীর নির্ধারিত পেশাদার কোর্সে পরবর্তীকালে অংশগ্রহণ করে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমীর প্রধান লক্ষ্য হলো: (ক) বিসিএস (প্রশাসনিক) ক্যাডারের সদস্যদের ফৌজদারি আইন, ভূমি আইন, কতিপয় গৌণ আইন, নানা বিধি ও প্রবিধি, লোকপ্রশাসন, উন্নয়ন প্রশাসন ও সুশাসন সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতাবৃদ্ধির জন্য পেশাগত প্রশিক্ষণ দান; (খ) তরুণ কর্মকর্তাদের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান ও অন্যান্য মৌলিক আইন অনুশীলনের এবং জনসেবক হিসেবে সেগুলির আদর্শ প্রয়োগ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ প্রদান; (গ) লোকপ্রশাসন ও আর্থসামাজিক বিষয়সমূহের উপর আলোচনাসভা ও কর্মশালা ইত্যাদির মাধ্যমে তরুণ ও ঊর্ধ্বতন সদস্যদের মধ্যে ধ্যানধারণা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ে সহায়তা প্রদান; (ঘ) প্রশিক্ষণার্থী যাতে যৌথভাবে চিন্তা, পরিকল্পনা, সংগঠন ও কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে সেজন্য তাদের মধ্যে দলানুগত্য বৃদ্ধি; (ঙ) প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নয়নের জন্য স্থানীয় ও বৈদেশিক উভয় প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রক্ষা; (চ) লোকপ্রশাসন ব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারকে পরামর্শ ও উপদেষ্টা সেবা প্রদান এবং প্রশিক্ষণ ও মানবসম্পদ উন্নয়নের নীতিসমূহ নির্ধারণে চাহিদামতো সরকারকে সাহায্য যোগান; এবং (ছ) একাডেমী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্ষেত্র সম্পর্কিত ঘটনা-সমীক্ষা ও পর্যালোচনা এবং গবেষণাপত্র, সাময়িকী, পেশাগত গ্রন্থাদি প্রণয়ন ও প্রকাশনা।
বিসিএস (প্রশাসন) একডেমীর পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে : (ক) সহকারি কমিশনার/সহকারি সচিবদের জন্য আইন ও প্রশাসন বিষয়ক ৫ মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ; (খ) সহকারি কমিশনারদের জন্য ফৌজদারি আদালত ব্যবস্থাপনা, ভূমিরাজস্ব আইন ও দেওয়ানি আইনের স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ; (গ) ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য আইন বিষয়ক স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ; (ঘ) সহকারি কমিশনার ও বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সচিবালয় কার্যবিধি সম্পর্কে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ; (ঙ) অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ডেপুটি রাজস্ব কালেক্টর, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও সাধারণ সার্টিফিকেট কর্মকর্তাদের জন্য আইন ও প্রশাসন বিষয়ক প্রাগ্রসর পাঠ্যক্রম; (চ) উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ডেপুটি কমিশনার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য পরিচিতিমূলক প্রশিক্ষণ। অধিকন্তু এ একাডেমী প্রতি প্রশিক্ষণবর্ষে ব্যবস্থাপনা ও আইন সম্পর্কে বেশ কিছু কর্মশালা ও আলোচনাসভার আয়োজন করে থাকে। প্রতিটি কর্মসূচিতে প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। অংশগ্রহণকারীরা যাতে ব্যবহারিক জ্ঞান আহরণ করতে পারে সেজন্য নিয়মিত শিক্ষাসফর ও বিভিন্ন শিক্ষায়তন/সংস্থার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত রাখা হয়।
একাডেমীর প্রধান হলেন মহাপরিচালক। সরকারের অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের প্রশাসনিক ক্যাডারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তার অধীনে থাকেন সরকারের উপসচিব পদর্মযাদার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত ৩ জন পরিচালক। শিক্ষকরা একাডেমী পরিচালিত পাঠ্যক্রমের পরিচালক, সমন্বয়ক ও সহকারি সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন। অধিকন্তু তাদের উপর একাডেমীর প্রশাসন, পরিকল্পনা, উন্নয়ন, গবেষণা, পরামর্শ ও প্রকাশনার সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে।
একাডেমীর রয়েছে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। পাঠাগারে সংগৃহীত আছে আইন, বিধিমালা, লোকপ্রশাসন, কূটনীতি, অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা, সমাজবিজ্ঞান ও মানবিক বিষয়ের বিপুল গ্রন্থসম্ভার। দেশের প্রায় সবগুলি সংবাদপত্র, সাময়িকপত্র এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বেশ কিছু বিদেশী সাময়িকী এখানে রাখা হয়। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য এখানে আছে লোকপ্রশাসন, ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ফৌজদারি বিচার ও অন্যান্য আর্থসামাজিক বিষয়ের ওপর নিয়মিত গবেষণা এবং প্রশিক্ষণকালে নিজেদের নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর স্বল্পকালীন গবেষণার সুযোগ। এখানে অভিজ্ঞতা ও গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে লোকপ্রশাসন ও আর্থসামাজিক বিষয়ের ওপর গ্রন্থাদি প্রকাশনার ব্যবস্থা আছে। একাডেমীর প্রকাশনা কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে প্রশিক্ষণ বিষয়ক জার্নাল, বুলেটিন ও সাময়িকপত্র। পাঠক্রম ও তাতে অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ তথা প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের সাফল্য বিচারের জন্য একাডেমীতে একটি দ্বিমুখী মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসৃত হয়ে থাকে। [মোহাম্মদ এহসান]