বাবা সালেহ
বাবা সালেহ বাংলায় স্বাধীন সুলতানদের অধীনে একজন উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী। তিনি সুলতান জালালউদ্দিন ফতেহ শাহের শাসনামল (১৪৮১-১৪৮৭ খ্রি) থেকে আলাউদ্দিন হোসেন শাহের শাসনকাল (১৪৯৪-১৫১৯ খ্রি) পর্যন্ত দীর্ঘ সময় সোনারগাঁ অঞ্চলে কর্মরত ছিলেন।
শিলালিপিসূত্রে জানা যায় যে, বাবা সালেহ তিনটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এগুলো হলো সুলতান জালালউদ্দিন ফতেহ শাহের শাসনামলে নির্মিত নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর এলাকায় অবস্থিত বন্দর শাহী মসজিদ (১৪৮১ খ্রি), সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের শাসনামলে আজিমনগরে নির্মিত একটি মসজিদ (১৪৯৫ খ্রি) এবং বন্দর শাহী মসজিদের দক্ষিণ-পশ্চিমে অর্ধমাইল দূরে অবস্থিত বাবা সালেহ মসজিদ (১৫০৫ খ্রি)।
মসজিদের শিলালিপির সাক্ষ্যমতে, বাবা সালেহ আল-মালিক আল-মুয়াজ্জম আল-মুকাররম খেতাবে ভূষিত একজন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি এবং ‘রাসূলের (সা) পায়বন্দ (খাদেমুন নবী) যিনি হজ্জব্রত পালন করেছেন (হাজী আল-হারামাইন) এবং রাসুলের (সা) পদচিহ্ন (কদম রসুল) প্রত্যক্ষ করেছেন।’
সুলতানি শাসনে বাবা সালেহর ভূমিকা ও কার্যক্রম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায় নি। এমনকি একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর পদমর্যাদার কোনো উল্লেখও পাওয়া যায় নি। ’আল-মালিক আল-মুয়াজ্জম আল-মুকাররম’ খেতাব থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, তিনি একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। অধিকন্ত সোনারগাঁ অঞ্চলে তাঁর দীর্ঘ কর্মপরিধি (১৪৮১-১৫০৬ খ্রি) থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলার সুলতানদের অধীনে প্রাদেশিক প্রশাসনে তিনি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
বাবা সালেহর নামেই বন্দর থানার বর্তমান সালেহনগর এলাকার নামকরণ হয়েছে। তিনি ১৫০৬ খ্রিস্টাব্দে (৯১২ হিজরি) সোনারগাঁয়ে পরলোক গমন করেন। বাবা সালেহ মসজিদ সন্নিহিত উত্তর-পূর্ব দিকে তাঁকে সমাহিত করা হয়। মৃত্যুর বছরই তাঁর সমাধির উপর একটি সৌধ নির্মিত হয়। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]