আলাপ
আলাপ নান্দনিক অভিব্যক্তি, ধ্যানগাম্ভীর্য ও সৃষ্টিশৈলীর সমন্বিত এক ধারার উচ্চাঙ্গসঙ্গীত। প্রচুর বিবর্তনের মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ ও পরিশীলিতরূপের এ পরিণত সঙ্গীতে পারদর্শিতা অর্জন মূলত উত্তর-ভারতের সঙ্গীত শিল্পীদের আরাধ্য হলেও আলাপ বাংলাদেশ ও পশ্চিবঙ্গসহ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও সমাদৃত।
আলাপের ব্যঞ্জনা সহজ সরল এবং এর অভিব্যক্তির একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো আছে। তবে ধ্রুপদ, ধামার বা খেয়ালে যেমন কথা ও ধ্বনির সমন্বয় থাকে আলাপে তেমন থাকে না, আলাপ মূলত ধ্বনিনির্ভর এবং নাদ নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে এতে ব্যবহূত হয় সুর, শ্রুতি, স্বর, গুপ্ত-স্বর, গুপ্ত লয়, নীর, সম্পূর্ণ আকর, মিঁদ, সুত, কম্পিত আন্দোলন, গমক, হুদক, ধুরণ, চুরণ ইত্যাদি। নির্দিষ্ট রস বা বৈচিত্র্যময় ও গভীর রসমালা পরিবেশনের জন্য আলাপিয়া (আলাপশিল্পী) আধো বা পূর্ণভাবে সপ্তকের ব্যবহার করেন।
আলাপের সৃষ্টি ও বিবর্তনের উৎস হচ্ছে গুরু-শিষ্য পরম্পরা তথা শিষ্য কর্তৃক গুরুর আলাপ সাধনার অনুসরণ ও অনুনিবন্ধন। মূলত ঘরোয়াভাবে শিষ্য পরম্পরাতেই এর বিস্তার ঘটে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্কুল-কলেজে আলাপ শিক্ষাদানের কোনো ব্যবস্থা নেই।
আলাপ পরিবেশনের অনুষ্ঠানে সাধারণত অন্য কোনো উচ্চাঙ্গসঙ্গীত পেশ করা হয় না। তবে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানে আলাপ পরিবেশিত হলে আলাপের পর ধ্রুপদ, ধামার বা খেয়াল পরিবেশনা একেবারে বিরল নয়। [তৌফিক নেওয়াজ]