আনসার-ভিডিপি একাডেমি
আনসার-ভিডিপি একাডেমি আনসার ও গ্রামরক্ষী বাহিনীর সর্বোচ্চ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। এটি গাজীপুর জেলার সফিপুরে ঢাকা-টাংগাইল সড়কের পাশে অবস্থিত।
১৯৪৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আনসার বাহিনী গঠিত হয় এবং তখন থেকে এ বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে ঢাকার শাহবাগে অনুষ্ঠিত হতো। স্বাধীনতা উত্তরকালে ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ঢাকার অদূরে সাভারে আনসার বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। ১৯৭৬ সালে গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি) ও ১৯৮০ সালে শহর প্রতিরক্ষা দলের (টিডিপি) সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে এ দুটি বাহিনীই আনসার বাহিনীর সঙ্গে একীভূত হয়। ১৯৭৬ সালে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরে জাতীয় আনসার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (এনএটিসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ সালে এর নামকরণ হয় আনসার ট্রেনিং স্কুল। ১৯৮৬ সালে আনসার ট্রেনিং স্কুলকে আনসার একাডেমিতে উন্নীত করা হয়। ১৯৯৫ সালে এর নামকরণ হয় আনসার-ভিডিপি একাডেমি।
আনসার-ভিডিপি একাডেমিতে আনসার ও গ্রামরক্ষী বাহিনীর প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। এখানে প্রধানত মৌলিক শিক্ষাক্রম, দক্ষতা বৃদ্ধি, পরিকাঠামো উন্নয়ন ও নবতর পেশাগত প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়। প্রশিক্ষণের বিষয় হলো ড্রিল, শৃঙ্খলা, অস্ত্রচালনা, যুদ্ধকৌশল, মাঠকৌশল, সরকারি চাকুরি বিধি ও আইন, অফিস ব্যবস্থাপনা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ইত্যাদি। সংগঠনের উৎসাহী ও সম্ভাবনাময় সদস্যদের বিভিন্ন পেশাগত উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ ছাড়া এখানে অনিয়মিত যুদ্ধ, নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন, পুনঃপ্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার, নারী ও শিশু পাচার রোধ প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
একাডেমির নিয়মিত সকল প্রশিক্ষণ ছাড়াও পুরুষ ও মহিলা ব্রাস ও পাইপ ব্যান্ড দল এখানে সারা বছর অনুশীলন করে থাকে। আনসার ভিডিপির বার্ষিক জাতীয় সমাবেশ, কুচকাওয়াজ ও হস্তশিল্প প্রদর্শনী একাডেমিতেই অনুষ্ঠিত হয়। একাডেমিতে আনসার বাহিনীর ক্রীড়াদলের নিয়মিত অনুশীলন করার ব্যবস্থা রয়েছে। এর ফলে আনসার বাহিনী বিগত ১৯৯২, ১৯৯৬ ও ২০০২ সালে বাংলাদেশ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হয়। ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদানের জন্য এ বাহিনীকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ২০০৪ প্রদান করা হয়।
একাডেমির প্রশিক্ষণ ও জাতীয় কুচকাওয়াজের জন্য রয়েছে প্যরেড গ্রাউন্ড। এর দৈর্ঘ্য ৬০০ ফুট এবং প্রস্থ ৪০০ ফুট। এই প্যারেড গ্রাউন্ডে একসাথে ২০০০ সদস্য কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করতে পারে। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী আনসার দলের অধিনায়ক প্লাটুন কমান্ডার ইয়াদ আলীর নামে এ গ্রাউন্ডের নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনীর ৯ জন কর্মকর্তা এবং ৬৩৫ জন প্লাটুন অফিসার ও আনসার শহীদ হন। তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্যারেড গ্রাউন্ডের দক্ষিণ পাশে প্রায় ৮০০০ বর্গফুট আয়তনের ভূমির উপর ৪৫ ফুট উচুঁ একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে।
বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষণের মান, প্রশিক্ষণার্থীদের সংখ্যা, ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধা এবং প্রশিক্ষকদের ঐকান্তিকতা ও কর্মতৎপরতা একাডেমিকে একটি আদর্শ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। প্রশিক্ষণের উৎকর্ষ সাধনই একাডেমির উদ্দেশ্য। [এম. ওয়াজিউল্লাহ]