কিষ্ণনগর মসজিদ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৩৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

কিষ্ণনগর মসজিদ  বাগেরহাট থেকে ষাটগম্বুজ যাওয়ার রাস্তার দক্ষিণে কিষ্ণনগর গ্রামে অবস্থিত। এটি দক্ষিণ বাংলার সংরক্ষিত বহুগম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদগুলির মধ্যে অন্যতম। স্থানীয় জনসাধারণের দ্বারা সংস্কারের ফলে এর মূল বৈশিষ্ট্য অনেকখানিই নষ্ট হয়ে গেছে।

মসজিদটির বহির্ভাগে প্রতিটি কোণে অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ রয়েছে। মসজিদটির মাপ উত্তর-দক্ষিণে ২৩.৪৭ মি ও পূর্ব পশ্চিমে ১৯.২০ মি এবং দেয়াল ১.৮৩ মি পুরু। পূর্বদিকের সম্মুখভাগে পাঁচটি এবং উত্তর দক্ষিণে দুটি করে দ্বিকেন্দ্রীক খিলানপথ রয়েছে। কেন্দ্রীয় খিলানটি পার্শ্ববর্তীগুলির থেকে সামান্য বড়। মসজিদের অভ্যন্তরে পশ্চিম পার্শ্বস্থ দেয়ালে পাঁচটি খিলানযুক্ত মিহরাব পূর্ব দেয়ালের পাঁচটি প্রবেশপথের একেবারে মুখোমুখি। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি পার্শ্বস্থ মিহরাবগুলি থেকে কিছুটা আকারে বড় এবং বাইরের দিকে বাড়ানো। মসজিদের প্রবেশপথ বর্তমানে লোহার গ্রিল দ্বারা সংরক্ষিত। এ ছাড়া উত্তর-দক্ষিণ দেয়ালের প্রবেশপথও বর্তমানে ইট দ্বারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ইমারতটির অভ্যন্তর এক সারি ইট নির্মিত খাটো বারো কোণবিশিষ্ট স্তম্ভ দ্বারা লম্বালম্বিভাবে দুটি আইলে এবং পাশাপাশি দুটি ‘বে’-তে বিভক্ত। মসজিদের অভ্যন্তরে মোট দশটি স্বতন্ত্র বর্গক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, যার প্রতিটির উপরে রয়েছে একটি করে অবতল গম্বুজ। মোট গম্বুজের সংখ্যা দশটি, যেগুলি সচরাচর ব্যবহূত বাংলার স্থানীয় পেন্ডেন্টিভের সমন্বয়ে পরস্পর ছেদকারী খিলানের উপর নির্মিত।

মসজিদটির অলংকরণে শুধু পোড়ামাটির নকশা রয়েছে, যা বর্তমানে শুধু মিহরাব ও বহির্ভাগে উত্তর ও কিবলা দেয়ালে বিদ্যমান। বাকি অংশগুলি আধুনিক সিমেন্ট প্লাস্টার দ্বারা আবৃত করা হয়েছে। সবগুলি মিহরাবই খিলানযুক্ত। সর্বদক্ষিণের মিহরাবের স্প্যান্ড্রিলে গোলাপের নকশা দেখা যায়, অন্যান্য মিহরাব কুলঙ্গি ঝুলন্ত নকশা দ্বারা সজ্জিত। মিহরাবকে ঘিরে আয়তক্ষেত্রাকার ফ্রেম বর্তমানে সম্পূর্ণ অবলুপ্ত। কিন্তু এ ধারার চূড়ায় রয়েছে অলংকৃত মোটিফ, যা বাংলার স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের সুস্পষ্ট সাক্ষ্য বহন করে। লম্বালম্বিভাবে সারিবদ্ধ নিবিষ্ট প্যানেল দ্বারা মসজিদের কিবলা দেয়াল ও উত্তরদিকের দেয়াল অলংকৃত। নিচের দিকের এক জোড়া প্যানেলে লজেন্স নকশা করা ব্যান্ড অলংকরণ রয়েছে। প্যানেলের সারির অন্তর্বর্তী স্থানে লতাপাতার নকশা রয়েছে। সুন্দর নকশাযুক্ত অলংকৃত ইট দ্বারা নির্মিত পেন্ডেন্টিভের উপর গম্বুজগুলি স্থাপিত।

এ মসজিদের নির্মাণকাল সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে এর স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যাবলি, যেমন পার্শ্ববুরুজের অষ্টকোণাকৃতি নকশা, অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা ও বারো কোণবিশিষ্ট স্তম্ভ পরবর্তী ইলিয়াসশাহী বা হোসেনশাহী যুগে নির্মিত সন্নিকটস্থ ছয়গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের সাথে মিল রয়েছে। স্থানীয় জনশ্রুতিতে ইমারতটিকে হোসেনশাহী যুগের বলে উল্লেখ করা হয়। বিদ্যমান স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যাবলি এ ধারণাকে সমর্থন দেয়।  [এম.এ. বারি]