চৌধুরী, এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:৪৮, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

চৌধুরী, এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা  ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ২০০২ সালের ২১ জুন পর্যন্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ১৫তম রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। প্রফেসর চৌধুরী মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগরের (বিক্রমপুর) মজিদপুর দয়হাটার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। তিনি ১৯৩২ সালের ১ নভেম্বর কুমিল্লার মুন্সিফ বাড়িতে (নানা বাড়ি) জন্মগ্রহণ করেন।

কফিলউদ্দীন চৌধুরী (পূর্ব পাকিস্তানের মন্ত্রী এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের অন্যতম রূপকার) ও মিসেস সুফিয়া খাতুনের দ্বিতীয় পুত্র এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ঢাকার সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এবং ব্রিটেনের ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি এডিনবার্গ, লন্ডন ব্রোম্পটন চেস্ট ইন্সটিটিউট, লন্ডনের হ্যামার স্মিথ পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিক্যাল স্কুল থেকে স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা গ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবনে সব সময়ই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র বদরুদ্দোজা চৌধুরী এম.বি.বি.এস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি এডিনবার্গ (১৯৬১) ও গ্লাসগোর (১৯৬১) রয়্যাল কলেজ অব ফিজিসিয়ানস থেকে এম.আর.সি.পি এবং ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (১৯৫৯) টিডিডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশের এফ.সি.পি.এস-এর সম্মানিত ফেলো (১৯৭৮) এবং এডিনবার্গ ও গ্লাসগোর রয়্যাল কলেজ অব ফিজিসিয়ানস-এর ফেলো (এফ.আর.সি.পি.ই, এফ.আর.সি.পি.জি) নির্বাচিত হন।

এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী


প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরী চিকিৎসা পেশায় নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (১৯৬৪) এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে (১৯৬৪-৭০) মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক এবং সিলেট মেডিক্যাল কলেজে (১৯৭০) মেডিসিনের প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অচিরেই দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। প্রফেসর চৌধুরী বেশ কয়েকবার ন্যাশনাল অ্যান্টি-টিউবারকিউলোসিস অ্যাসোসিয়েশনের (এন.এ.টি.এ.বি) প্রেসিডেন্ট এবং প্যারিসে অবস্থিত এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন এগেইনস্ট টিউবারকিউলোসিস অব লাঙ ডিজিজের (আই.ইউ.এ.টি.এল.ডি) প্রেসিডেন্ট ছিলেন। দেশি ও বিদেশি জার্নালে তাঁর বেশ কিছু সংখ্যক চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।

প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৭৯ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন যখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেন। তিনি ছিলেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কেবিনেটে উপ-প্রধানমন্ত্রী (সিনিয়র) হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তাঁর ওপর স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল। ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার কেবিনেটে প্রবীণতম মন্ত্রী হিসেবে তিনি শিক্ষা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। নিজের নির্বাচনী এলাকা মুন্সীগঞ্জ-১ থেকে তিনি ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি জাতীয় সংসদের উপনেতা (১৯৭৮-৮২, ১৯৯১-৯৬) এবং জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা (১৯৯৬-২০০১) হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পূর্বে ২০০১ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে তিনি খালেদা জিয়ার সরকারে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর নির্বাচিত হন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এবং শপথ গ্রহণের পূর্বে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-এর (বিএনপি) সকল পদ ও দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর কার্যকাল ক্ষণস্থায়ী হয়। নিজ দলের সাথে বিরোধের কারণে তিনি ২০০২ সালের ২১ জুন প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি ‘বিকল্প ধারা’ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন; উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে সন্ত্রাস-মুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা। এছাড়া হেল্থ এন্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট নামে স্বপ্রতিষ্ঠিত জনকল্যাণমূলক ট্রাস্টের বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে তিনি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে জড়িত আছেন। পাশাপাশি তিনি চিকিৎসকের পেশায় নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন এবং উত্তরায় উইমেনস্ মেডিক্যাল কলেজে অনারারি প্রফেসর অব মেডিসিন হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। উল্লেখ্য যে এটিই দেশের প্রথম মহিলা মেডিকেল কলেজ এবং এ কলেজটি তাঁর ‘হেল্থ এন্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত।

প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরী তাঁর দীর্ঘ কর্মময় জীবনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ১৯৭৪ সালে নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘টিউবারকিউলোসিস অ্যান্ড চেস্ট ডিজিজ’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৬ সালে কোরিয়ার সিউল; ১৯৭৭ সালে ইস্তাম্বুল; ১৯৭৮ সালে ব্রাসেলস; এবং ১৯৭৮ সালে ইংল্যান্ডের ব্রাইটনে অনুষ্ঠিত একই বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও তিনি বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৮ ও ১৯৭৯ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনেও তিনি অংশ নেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে। ১৯৮১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পর্যায়ক্রমিক নেতা। তিনি জাতিসংঘের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগদানকারী বাংলাদেশ দলের একজন সদস্য ছিলেন।

চিকিৎসা ও রাজনীতি ছাড়াও প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরী একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুপরিচিত। নাট্যকার, প্রবন্ধকার, লেখক, উপস্থাপক, এবং সুবক্তা প্রফেসর চৌধুরী ১৯৭৬ সালে জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করেন।  [আবদুল মমিন চৌধুরী]