আলী, চৌধুরী মোহাম্মদ
আলী, চৌধুরী মোহাম্মদ (১৯০৫-১৯৮৩) সরকারি আমলা, রাজনীতিক, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ১৯০৫ সালের ১৫ জুলাই জলন্ধরে (বর্তমান পূর্ব পাঞ্জাবের অন্তর্ভূক্ত) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লাহোরে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৭ সালে রসায়ন বিজ্ঞানে এম.এস.সি ডিগ্রি লাভ করেন।
লাহোরের ইসলামিয়া কলেজে তিনি কিছুদিন কেমিস্ট্রি বিভাগে লেকচারার হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি ১৯২৮ সালে ভারতীয় অডিট ও অ্যাকাউন্টস সার্ভিসে যোগদান করেন। ১৯৩২ সালে তাঁকে ভাওয়ালপুর রাজ্যে অ্যাকাউন্ট্যান্ট-জেনারেল হিসেবে ডেপুটেশনে নিয়োগ করা হয়। মোহাম্মদ আলী ১৯৩৪ সালে অর্থবিভাগে আন্ডার-সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ১৯৩৬ সালে অর্থমন্ত্রী স্যার জেমস গ্রিগ-এর একান্ত সচিব নিযুক্ত হন। ১৯৩৯ সালে তিনি ডেপুটি ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার (১৯৩৯), মিলিটারি ফাইন্যান্স-এর জয়েন্ট ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার এবং ১৯৪৩ সালে সরবরাহ বিভাগের অতিরিক্ত ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার (১৯৪৩) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি যুদ্ধ ও সরবরাহ বিভাগের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার এবং ১৯৪৭ সালের জুন মাসে দু-সদস্য বিশিষ্ট পার্টিশন কাউন্সিলের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। ওই পার্টিশন কাউন্সিলের দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানের জন্য একটি প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করা।
দেশ বিভাগের পর মোহাম্মদ আলী পাকিস্তান সরকারের সেক্রেটারি জেনারেল নিযুক্ত হন এবং ১৯৫১ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত এ পদে বহাল ছিলেন। মোহাম্মদ আলী ১৯৫৩ সালের অক্টোবর মাসে সরকারি চাকরি ত্যাগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর (বগুড়া) মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন। এ পদে তিনি চার বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৫ সালের জুন মাসে তিনি গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ সালের আগস্ট মাসে চৌধুরী মোহাম্মদ আলী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত হন।
চৌধুরী মোহাম্মদ আলী ১৯৫৭ সালে তেহরিক ইস্তিখাম-ই-পাকিস্তান (পাকিস্তান রক্ষার আন্দোলন)-এর ব্যানারে নতুন আন্দোলন শুরু করেন। এ দল ১৯৫৮ সালে নিজাম-ই-ইসলাম পার্টির সাথে যুক্ত হয়। তিনি সংযুক্ত দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালের অক্টোবর মাসে সামরিক আইন জারি হলে চৌধুরী মোহাম্মদ আলী বর্ষীয়ান স্টেটসম্যান-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং আইয়ুব খানের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন। ১৯৬৪ সালে সম্মিলিত বিরোধী দল গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এ দল ১৯৬৫ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফাতিমা জিন্নাহকে মনোনয়ন দেয়। ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ সেনাবাহিনী পুনরায় প্রশাসনে হস্তক্ষেপ এবং সামরিক আইন জারি করলে চৌধুরী মোহাম্মদ আলী রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৮৩ সালে লাহোরে তাঁর মৃত্যু হয়। [আবু জাফর]