ইকলিম
ইকলিম সুলতানি আমলের প্রথমদিকে বাংলার একটি প্রশাসনিক বিভাগ। তেরো শতকের প্রথমভাগে ‘ইকলিম’ শব্দটি বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষেত্রে ব্যবহূত হত।
তেরো এবং পনেরো শতকের মধ্যবর্তী সময়ের মুদ্রা এবং শিলালিপিতে দুটি ইকলিমের নাম পাওয়া যায়, ইকলিম মুয়াজ্জমাবাদ এবং ইকলিম মুবারকাবাদ। শিলালিপির সূত্রে দেখা যায় যে, ইকলিম মুয়াজ্জমাবাদ ছিল সর-ই-লস্কর ওয়া ওয়াজির এর অধীনে। হোসেন শাহী শাসনামলের শিলালিপিতেও ইকলিম একজন ওয়াজিরের অধীনে শাসিত হতো বলে উল্লেখ রয়েছে। তবে হোসেন শাহী শাসনামলে ইকলিম ছিল একটি প্রদেশ। ইলিয়াস শাহের শাসনামলে আরসাহ, ইকলিম, এবং মুলক অভিধা মুদ্রা এবং শিলালিপিতে ব্যবহূত হয়েছে। সমকালীন দিল্লির ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দীন বরনী বাংলাকে ইকলিম এবং আরসাহ উভয় নামেই উল্লেখ করেছেন। মুহম্মদ বিন তুঘলকের মুদ্রায় ‘আরসা সাতগাঁও’-এর উল্লেখ রয়েছে। ইলিয়াস শাহী শাসনামলে আরসাহ এবং মুলক সমার্থক ছিল এবং তা দ্বারা রাজ্যের প্রদেশ বুঝানো হত। প্রশাসনিক বিভাগ ইকলিম ছিল আরসাহর অনুরূপ এবং উভয়ই সর-ই-লস্কর ওয়া ওয়াজির নামক কর্মকর্তার অধীনস্ত ছিল। কখনো কখনো প্রশাসনিক বিভাগ ইকলিম এবং আরসাহ শব্দ দুটি অঞ্চলভেদেও ব্যবহূত হত। যেমন, দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার ক্ষেত্রে আরসাহ এবং পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ক্ষেত্রে ইকলিম শব্দটি ব্যবহূত হত।
ইকলিম এবং আরসাহ উভয়ই প্রশাসনিক বিভাগ নির্দেশ করলেও তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা যায় না। প্রতীয়মান হয় যে, ইকলিমের সীমা আরসাহ অপেক্ষা বৃহত্তর ছিল। ইকলিমকে আধুনিক বিভাগ এবং আরসাহকে আধুনিক জেলার সমান ধরে নেয়া যায়। [আবদুল করিম]