অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। বিনাবিচারে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির লক্ষ্যে নিবেদিত এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি ১৯৬১ সালের ২৮ মে ব্রিটিশ আইনজীবী পিটার বেনেনসেন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। কালক্রমে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংরক্ষণের জন্য এটি একটি সোচ্চার সংগঠনে পরিণত হয়। অবশ্য বিশ শতকের সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন এই সংগঠনের কর্মকান্ড শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত এটি বাংলাদেশে তেমন সাড়া জাগাতে পারে নি। কিন্তু সংগঠনটি সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নিযুক্ত হওয়ার কারণে সম্ভবত এখানে আন্দোলনের কর্মকান্ড থমকে দাঁড়ায়। আশির দশকের গোড়ার দিকে কিছু আগ্রহী সমাজকর্মীর উদ্যোগে ঢাকায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কর্মকান্ড পুনরায় শুরু হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আন্তর্জাতিক সচিবালয় ১৯৮৫ সালের ২৮ জুন এই ঢাকা গ্রুপকে স্বীকৃতি দেয়। পরবর্তী সময়ে আরও কিছু গ্রুপ গড়ে ওঠে এবং এদের মধ্যে ১৯৮৯ সালের জানুয়ারি মাসে মাদারীপুর গ্রুপ, ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসে রাজৈর গ্রুপ এবং ১৯৯১ সালের আগস্ট মাসে কালকিনি গ্রুপ স্বীকৃতি লাভ করে। অতঃপর আইনজীবী গ্রুপ, মহিলা গ্রুপ ও চিকিৎসক গ্রুপের মতো কিছু কিছু স্থানীয় ও পেশাজীবী গ্রুপ গড়ে ওঠে। বর্তমানে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ অংশে প্রায় ৪০টি স্থানীয় ও পেশাজীবী গ্রুপে সর্বমোট সহস্রাধিক সদস্য রয়েছেন। ১৯৯২ সালের ২৮ আগস্ট ঢাকায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ শাখার প্রথম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে একজন সভাপতি, একজন সহসভাপতি, একজন কোষাধ্যক্ষ এবং ৭ জন সদস্য সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রথম নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। একজন সার্বক্ষণিক পরিচালক বাংলাদেশ শাখার দাপ্তরিক কাজকর্ম পরিচালনা করেন। ঢাকার কমলাপুরে কবি জসীমউদ্দীন রোডের ২৮ নং বাড়িতে সংস্থার দপ্তর অবস্থিত।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ শাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধের কৌশলের ওপর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দানের জন্য কর্মশালার আয়োজন করে থাকে। মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধের জন্য এই প্রতিষ্ঠান সভা, সেমিনার ও শোভাযাত্রা ইত্যাদিরও আয়োজন করে। এই প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ১ মে মে দিবস এবং ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানিবাধিকার দিবস উদযাপন করে থাকে। ভিন্নমতাদর্শী হিসেবে আটককৃতদের আশু ও নিঃশর্ত মুক্তি, রাজবন্দিদের স্বচ্ছ ও দ্রুত বিচারকার্য সম্পাদন, সব ধরনের উৎপীড়ন ও নির্যাতনের অবসান এবং মৃত্যুদন্ড রহিতকরণের জন্য এই সংগঠন কাজ করে চলেছে। এই প্রতিষ্ঠান মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাসম্বলিত তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করে এবং এই করে এ ধরনের লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য জনগণ ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নিয়মিত বুলেটিন, প্রচারপত্র ও পোস্টার প্রকাশ করছে। [কাজী এবাদুল হক]