আহমেদ, শামসুদ্দীন১

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৮:৫০, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

আহমেদ, শামসুদ্দীন১  (১৮৮৯-১৯৮৭)  প্রত্নত্ববিদ, লিপিতত্ত্ববিদ। তিনি ১৮৮৯ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার দেওয়ানপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শামসুদ্দীন আহমেদ রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসা থেকে ১৯০৫ ও ১৯০৯ সালে যথাক্রমে জুনিয়র ও সিনিয়র মাদ্রাসা পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ১৯১১ সালে ম্যাট্রিক এবং ১৯১৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল স্কুলে শিক্ষকতাকালীন প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে তিনি বি.এ (১৯২২) এবং আরবিতে এম.এ (১৯২৫) পাস করেন।

শামসুদ্দীন আহমেদ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ১৯২৭ সালে কলকাতায় ভারতীয় জাদুঘরের সহকারী কিউরেটর পদে যোগ দেন। এই জাদুঘরের চাকরি তাঁকে মুসলমান আমলের লিপি ও মুদ্রা বিষয়ে পড়াশুনার সুযোগ এনে দেয়, কেননা জাদুঘরে ছিল আরবি ও ফারসি পান্ডুলিপি এবং অসংখ্য মুদ্রার সমৃদ্ধ সংগ্রহ। সহকারী সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে তিনি নতুন দিল্লি, বেরেলী ও হায়দ্রাবাদে (দক্ষিণাত্য) সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ড. গোলাম ইয়াজদানীর তত্ত্বাবধানে হায়দ্রাবাদে তিনি লিপি ও মুদ্রা বিষয়ে দুই বছরের দীর্ঘ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পূর্বাঞ্চলীয় সার্কেলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।

১৯৪৭ সালে শামসুদ্দীন আহমেদ রাজশাহীতে বসবাস শুরু করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি করাচিতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এখান থেকেই ১৯৫৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরকালীন সময়ে তিনি রাজশাহী সিটি নৈশ কলেজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন এবং ১৯৫৫-৫৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈতনিক কোষাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন এবং এগারো বছর এ দায়িত্ব পালন করেন। স্বাস্থ্যগত কারণে ১৯৭১ সালে তিনি এ দায়িত্ব ত্যাগ করেন।

শামসুদ্দীন আহমেদ বাংলা লিপিমালা ও মুদ্রা বিষয়ে তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের জন্য সুপরিচিত। তিনি কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্লিমেন্টারি ক্যাটালগ অব কয়েন্স ইন ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম’, নামে দুটি ভল্যুম (ভল্যুম-১: সুলতান অব দিল্লি; ভল্যুম-২: সুলতান অব বেঙ্গল) সংলকন করেন। ‘এপিগ্রাফিয়া ইন্দো-মোসলেমিকা’য় লিপি ও মুদ্রার ওপর রচনাবলির জন্য ‘অল ইন্ডিয়া নিউমিসম্যাটিক সোসাইটি’ তাঁকে পদকে ভূষিত করে। ১৯২৯ থেকে ১৯৪১ সালের মধ্যে এই সাময়িকীতে তাঁর ৫০টিরও অধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।

লিপিতত্ত্ববিদ হিসেবে শামসুদ্দীন আহমেদ স্থায়ী খ্যাতি লাভ করেছেন ১৯৬০ সালে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর থেকে প্রকাশিত ‘দি ইন্সক্রিপশন অব বেঙ্গল’ (ভল্যুম-৪) প্রবন্ধের মাধ্যমে। তিনি বাংলার মুসলিম শাসকদের প্রাপ্ত প্রায় সব লিপিরই মোটামুটিভাবে পাঠোদ্ধার ও সম্পাদনা করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সরকারের একটি সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে তুরস্ক ও ইরান সফর করেন। তাঁর পান্ডিত্য ও পান্ডিত্যপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ঢাকাস্থ বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৯৮০ সালের ২৭ নভেম্বর শামসুদ্দীন আহমেদকে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার’ ও সনদ প্রদান করে। ইতঃপূর্বে বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটি ও তাঁকে পদক ও সনদ প্রদান করেছিল। ১৯৮৭ সালের ৭ জুন তাঁর মৃত্যু হয়।  [নাজিমউদ্দীন আহমদ]