আদিনাথ মন্দির

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৮:০২, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
আদিনাথ মন্দির, মহেশখালী

আদিনাথ মন্দির সমুদ্রস্তর থেকে ৮৫.৩ মিটার উচুঁ মৈনাক পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত। মন্দিরটির অবস্থান কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলাধীন গোরখঘাটা  ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামে।

নাথ সম্প্রদায়ের গুরু গোরক্ষনাথের সঙ্গে গোরখঘাটার বা মন্দিরের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা সে সম্পর্কে তেমন কিছু প্রামাণিক সূত্র এখনও পাওয়া যায় নি। তবে গোরক্ষনাথের কোনো শিষ্য তাঁর গুরুর নামে মহেশখালীর গোরখঘাটা নামকরণ করতেও পারেন। শৈব ও বৌদ্ধধর্মীয় দর্শনের দীর্ঘকালীন বিবর্তনের অন্যতম ফল এ নাথ দর্শন। দশ-এগারো শতকে শৈব ও বৌদ্ধ দর্শনের ক্রমবিবর্তনের এক পর্যায়ে আবির্ভূত হয় তন্ত্রশাস্ত্র। আর এ বিবর্তনের ধারাতেই সৃষ্টি হয় আদিনাথ (মতান্তরে মৎস্যেন্দ্রনাথ বা মীননাথ) প্রবর্তিত নাথ ধর্ম। মন্ত্রতন্ত্র, তপজপ ও বৈরাগ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত নাথ ধর্মই বাংলার লোকজ ধর্ম।

আদিনাথ মন্দির নির্মাণশৈলীতে নাথদের সম্পৃক্ততা সুস্পষ্ট। মন্দিরটির দৈর্ঘ্য ১০.৫০ মিটার, প্রস্থ ৯.৭৫ মিটার, উচ্চতা ৬ মিটার। অভ্যন্তরের দেয়াল ১.০৫ মিটার এবং বহির্দেয়াল ০.৬০ মিটার চওড়া। মন্দিরটির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। উত্তরের অংশ প্রাচীন। পরবর্তী সময়ে আরও দুটি অংশ তৈরি করা হয়েছে। উত্তর অংশের প্রথম ভাগে ৩.৩৫ মিটার বর্গাকৃতির দুটি পূজাকক্ষ, পূর্বকক্ষে আদিনাথ বাণলিঙ্গ শিবমূর্তি এবং পশ্চিমকক্ষে অষ্টভুজা দুর্গামূর্তি। সম্মুখের প্রবেশপথ ধনুকাকৃতির। উত্তর ও দক্ষিণের অনুরূপ প্রবেশপথ ইটের গাঁথুনি‘ দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্বে দুটি জানালা। দুটি কক্ষের উপরিভাগে অর্ধগোলাকার পেন্ডেন্টিভ পদ্ধতিতে স্থাপিত দুটি গম্বুজ।


গম্বুজের উপরিভাগে ফুটন্ত পদ্ম, কলসচূড়া ও চক্রের সমন্বয়ে গঠিত ফিনিয়াল সজ্জিত রয়েছে। অষ্টভুজাকৃতির স্তম্ভের উপরের অংশে রয়েছে কলস ও স্ক্রল বা পাক-খাওয়া লতা নক্শা। পশ্চিম অংশে ধনুকাকৃতির সন্ধিস্থলে পুষ্পকলির ন্যায় অলঙ্করণ এবং পূর্ব পার্শ্বের সন্ধিস্থলে ত্রিশুলের অলঙ্করণ। দক্ষিণ দেয়ালে দুটি কুলুঙ্গি আছে। মন্দিরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগ আধুনিককালে নির্মিত।

মন্দির উদ্বোধনের সময় থেকেই ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চর্তুদশী অর্থাৎ শিব চর্তুদশী উপলক্ষে আদিনাথ মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল মেলা। দেশের ধর্মপ্রাণ তীর্থযাত্রীসহ ভারত, নেপাল ও মায়ানমার থেকে বহু তীর্থযাত্রী এখানে আগমন করেন। মেলা ৮-১২ দিন স্থায়ী হয়।  [মুহাম্মদ আব্দুল বাতেন]