গোপচন্দ্র
গোপচন্দ্র স্বাধীন বঙ্গ রাজ্যের সম্ভাব্য প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম গুরুত্বপূর্ণ শাসক। ছয় শতরে প্রথমার্ধে তাঁর সময় নির্ধারিত। গুপ্ত সাম্রাজ্যের ভিত্তি শিথিল হয়ে যাওয়ার সুযোগে পূর্ব এবং দক্ষিণ বাংলা এবং পশ্চিম বাংলার দক্ষিণ অংশে গোপচন্দ্র স্বাধীন বঙ্গ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
ফরিদপুর জেলার কোটালিপাড়া থেকে আবিষ্কৃত ৫টি তাম্রশাসন, বর্ধমান জেলার মল্লসারুলে প্রাপ্ত ১টি এবং বালেশ্বর জেলার জয়রামপুরে প্রাপ্ত অপর ১টি তাম্রশাসন থেকে স্বাধীন বঙ্গ রাজ্যের তিনজন শাসকের নাম জানা যায়। এঁরা হলেন গোপচন্দ্র, ধর্মাদিত্য, সমাচারদেব। কিন্তু তাদের সম্পর্কে অতি অল্পই জানা যায়।
‘মহারাজাধিরাজ’ উপাধি ধারণ থেকে মনে হয়, গোপচন্দ্র স্বাধীন এবং শৌর্য-বীর্যের অধিকারী ছিলেন। তাঁর শাসনাধীনে ‘বর্ধমান ভুক্তি’ ও ‘নব্যাবকাশিকা’ নামে দুটি প্রদেশ দুজন গভর্নর শাসন করতেন। ফরিদপুর জেলার কোটালিপাড়ায় সম্ভবত গোপচন্দ্রের শাসনকেন্দ্র অবস্থিত ছিল। গোপচন্দ্রের মল্লসারুল তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে, ‘মহারাজা’ বিজয়সেন ছিলেন বর্ধমানভুক্তির একজন সামন্ত অধিপতি। যদি মল্লসারুল তাম্রশাসনে উল্লিখিত বিজয়সেন এবং বৈন্যগুপ্তের গুনাইগড় তাম্রশাসনের দূতক বিজয়সেন অভিন্ন হন তাহলে একথা ধরা যেতে পারে যে, বৈন্যগুপ্ত (৫০৭-০৮ খ্রিস্টাব্দ) এবং গোপচন্দ্রের সময়ের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। আবার যদি ধরে নেওয়া যায় যে, গোপচন্দ্রের অধীনে বিজয়সেন বর্ধমানভুক্তি শাসন এবং বৈন্যগুপ্তের অধীনেও একই দপ্তর ব্যবহার করছেন তবে যুক্তিসঙ্গতভাবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে যে, বৈন্যগুপ্ত বাংলার পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশ শাসন করতেন। গুপ্তদের এ প্রদেশেই পরবর্তীকালে গোপচন্দ্র ও তাঁর বংশধরগণ স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
গোপচন্দ্রের জয়রামপুর তাম্রশাসন থেকে প্রমাণ হয় যে, দন্ডভুক্তি (দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলা ও উড়িষ্যার সীমান্তবর্তী এলাকা) তাঁর শাসনাধীন ছিল। মল্লসারুল তাম্রশাসনের মাধ্যমে বর্ধমানভুক্তিতে ভূমি দান করা হয়। এ থেকেও মনে হয় যে, পশ্চিম বাংলার দক্ষিণাংশও এ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
উপাত্তের স্বল্পতার কারণে গোপচন্দ্র সম্পর্কে খুব অল্প তথ্যই জানা যায়। কিন্তু তাম্রশাসন-এর ভিত্তিতে একথা বলা যেতে পারে যে, তিনিই বঙ্গ রাজ্যের প্রথম স্বাধীন ও সার্বভৌম অধিপতি। [আকসাদুল আলম]