খান-ই-সামান

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:০৭, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

খান-ই-সামান  মুগল দরবারের রাজকর্মচারী। তিনি ছিলেন রাষ্ট্রীয় আসবাবপত্র সংক্রান্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। প্রথমদিকে এই কর্মকর্তার পদবী ছিল মীর-ই-সামান। পরে এ পদের গুরুত্ব বিবেচনা করে সম্মানসূচক পদবী খান-ই-সামান প্রদান করা হয়। মীর-ই-সামান বা খান-ই-সামান সকল প্রকার সরকারি সম্পত্তি, বাজেয়াপ্তকৃত সম্পত্তি, রাজপরিবারের সদস্যদের বিয়ের অনুষ্ঠানের সার্বিক আয়োজন, বায়েতাত এর সাধারণ তত্ত্বাবধান এবং প্রাসাদের ভৃত্যদের মাসিক বেতনের সনদপত্র প্রদান ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করতেন। মুগল আমলে একাজের জন্য কারখানা শব্দটির ক্ষেত্রে বায়েতাত শব্দটি ব্যবহার করা হত। মূলত এটি আরবি ‘বাইত’ বা বাড়ি শব্দ থেকে উদ্ভুত। মুগল প্রশাসনে বাড়ির মধ্যে আসবাবপত্রের সমাবেশের ও তার রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে বায়েতাত শব্দটির ব্যবহূত হয়। দীউয়ান-ই-বাইয়াত কর্তৃক পরিচালিত বায়োতাত-এর ব্যবস্থাপনায় খান-ই-সামান সহযোগিতা প্রদান করতেন, এবং তিনি তাঁর অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিলেন। পরে নাজির-ই-বাইতাত নামের একজন কর্মচারীকে এ বিভাগের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। কোনো কোনো বিষয়ে খান-ই-সামান ছিলেন দীওয়ানের অধিনস্ত এবং তাঁর দায়িত্বের অধিকাংশ কাজ প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। কিন্তু এ কাজসমূহ  ছিল বিবেচনাসাপেক্ষ এবং নিছক আনুষ্ঠানিকতা। খান-ই-সামান অর্থ বিষয়ে শুধু ওয়াজির-এর উপর নির্ভরশীল ছিলেন। তাঁর সহযোগীরাও ওয়াজিরের অধিনস্ত ছিলেন এবং প্রত্যেকের সম্রাটের নিকট সরাসরি প্রবেশাধিকার ছিল। খান-ই-সামান শুধু বাইতাত-এর দায়িত্বপ্রাপ্তই ছিলেন না, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজও তাঁকে করতে হতো। প্রাসাদের ভৃত্য ও গৃহ সামগ্রীর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িতে নিয়োজিত বেতনভূক রাজ কর্মচারীবৃন্দ, প্রত্যেকের মাসিক বা বাৎসরিক বেতন খান-ই-সামান প্রদত্ত সনদের উপর ভিত্তি করে প্রদান করা হত। তাছাড়াও তিনি প্রাসাদের বিভিন্ন কারখানা ও  বিভিন্ন বিভাগের তত্বাবধায়ক ও হিসাবরক্ষক ছিলেন এবং খাজাঞ্চি প্রমুখদের নিয়োগ প্রদান করতেন। কারখানায় যে জিনিসপত্র তৈরি হতো তা যথাযথভাবে তালিকাভুক্ত ও গুদামজাত করার কাজ তত্ত্বাবধানের দায়িত্বও খান-ই-সামান এ এখতিয়ারে ছিলো। সরকারি কোষাগারে সংরক্ষিত মূল্যবান বস্ত্তর তালিকা, রাজকীয় বাগান, দোকান ও বাড়ি থেকে আয়ের বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ, রাজকীয় আস্তাবলের পশুদের জন্য সরবরাহকৃত দৈনিক খাদ্য নির্ধারণ এবং প্রাসাদের রমণীদের বিয়ের সকল প্রকার আয়োজন প্রভৃতির দায়িত্বও খান-ই-সামান পালন করতেন। নির্মাণ বিভাগের কাজও খান-ই-সামান বা মীর-ই-সামানের সাধারণ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো।

মুগল প্রশাসনে খান-ই-সামান ছিলো নিঃসন্দেহে একটি দায়িত্বপূর্ণ পদ এবং বিশ্বস্ত ও যোগ্য ব্যক্তিকেই এই পদ প্রদান করা হতো। এই দফতরের প্রধান সাধারণত ওয়াজির পদে পদোন্নতি লাভ করতেন।  [নাসরীন আক্তার]