জগন্নাথপুর উপজেলা
জগন্নাথপুর উপজেলা (সুনামগঞ্জ জেলা) আয়তন: ৩৬৮.২৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪০´ থেকে ২৪°৩১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২৭´ থেকে ৯১°৪১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ছাতক ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা, দক্ষিণে নবীগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে দিরাই উপজেলা।
জনসংখ্যা ২২৫২৭১; পুরুষ ১১৬৪৮৩, মহিলা ১০৮৭৮৮। মুসলিম ২০১৮০৪, হিন্দু ২৩৩৬৫, বৌদ্ধ ৩০, খ্রিস্টান ২৯ এবং অন্যান্য ৪৩।
জলাশয় প্রধান নদী: কুশিয়ারা ও ডাহুকা। হাওর ২৫, বিল ৯৮; গাজিয়ালা গ্রুপ, পিংলার হাওর, নলুয়ার হাওর ও পারুয়ার হাওর এবং জামাইকাটা বিল, বোরাট বিল, ফিওরা বিল, কুমারিয়া বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন ১৯২২ সালে জগন্নাথপুর থানা গঠন করা হয় এবং উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৯৯ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৮ | ২৬৩ | ৩১০ | ৩৪৯০৮ | ১৯০৩৬৩ | ৬১২ | ৪৭.৬২ | ৪৪.৮৬ |
পৌরসভা | |||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
২৫.৪৫ | ৯ | ৪৩ | ৩৪৯০৮ | ১৩৭২ | ৪৭.৬২ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
পুরুষ | মহিলা | |||
আশারকান্দি ১৭ | ১২৬০৮ | ১২০৮০ | ১১১৬২ | ৪৬.১৮ |
কলকলিয়া ৩৮ | ১৩৪৬৩ | ১৪০৫৭ | ১৩২৩৬ | ৪০.৯৬ |
পাইলগাঁও ৫৭ | ১০৩৪৬ | ১৩৩৫১ | ১৩১৬২ | ৪৩.৩৩ |
পাটালী ৬৬ | ৮০৩৪ | ৯৩২৪ | ৮৭০১ | ৪৭.৮১ |
মীরপুর ৪৭ | ৭১৪২ | ১০৭২৫ | ৯৬৩৩ | ৫১.৫৪ |
রাণীগঞ্জ ৭৬ | ১২১৯৪ | ১৬৮২৮ | ১৫৮৬৯ | ৩৯.৮৮ |
সৈয়দপুর ৮৫ | ৫৪৮৭ | ১০২৮৬ | ৯৪৬১ | ৪৯.২২ |
হলদিপুর ১৯ | ১৫১৬৮ | ১১৪৬৩ | ১১০২৫ | ৪৪.৬৮ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ হযরত শাহজালাল (র) এর সঙ্গী শাহ কামাল (র) মাযার (শাহ্র পাড়া), রাধারমণের স্মৃতিসৌধ (কেশবপুর), বিষ্ণুমন্দির (পাইলগাঁও) ও গোবিন্দ রায়ের বাড়ি (হরিপুর)।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ৩১ আগস্ট শান্তি সভার নামে রাজাকাররা শ্রীরামসী হাইস্কুলে স্থানীয় শিক্ষক, কর্মচারী, ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্য ও সাধারণ লোকজনের একটি সমাবেশের আয়োজন করে। রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকসেনারা উক্ত সভার ১২৬ জন লোককে হত্যা করে এবং গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয়। ৮ সেপ্টেম্বর পাকসেনারা উপজেলার রাণীগঞ্জ বাজারে ৩০ জন লোককে হত্যা করে এবং ১৫০টি দোকান জ্বালিয়ে দেয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ১; গণকবর ১ (শ্রীরামসী)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৬০, মন্দির ২১, মাযার ৭। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ইকড়ছই জামে মসজিদ, বাসুদেব মন্দির।
শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৫.৩%; পুরুষ ৪৮.১%, মহিলা ৪২.৩%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: জগন্নাথপুর মহাবিদ্যালয়, জগন্নাথপুর স্বরূপচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), পাইলগাঁও বি,এন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), মীরপুর পাবলিক বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩১), সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৩), নয়াবন্দর দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭৫), ইসহাকপুর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮২) সৈয়দপুর সৈয়দিয়া শামছিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯০৩), আশারকান্দি জাকির মোহাম্মদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৭, প্রাক্তন মধ্যবঙ্গ ও এম.ই স্কুল)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: জগন্নাথপুর কণ্ঠ; পাক্ষিক: জগন্নাথপুর, জগন্নাথপুর দর্পন; মাসিক: জগন্নাথপুরের কথা, জগন্নাথপুর টাইমস (বর্তমান), জগন্নাথপুর। এছাড়া মেঠোপথ, কথকথা, জগন্নাথপুর বার্তা, ইসহাকপুর বার্তা প্রভৃতি পত্রিকা অনিয়মিত ভাবে প্রকাশিত হতো।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ২০, লাইব্রেরি ১১, নাট্যমঞ্চ ১, নাট্যদল ১, মহিলা সংগঠন ৩০, আর্ট স্কুল ১, সংগীত বিদ্যালয় ১, সাংস্কৃতিক সংগঠন ২।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৭.১১%, অকৃষি শ্রমিক ৬.৮৭%, শিল্প ০.৪২%, ব্যবসা ৯.৪২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.৯৬%, চাকরি ৩.৭৯%, নির্মাণ ০.৮৮%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৯.৭০% এবং অন্যান্য ১০.৫১%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৩৮.৪৪%, ভূমিহীন ৬১.৫৬%। শহরে ৩১.৫১% এবং গ্রামে ৩৯.৬২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান।
বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় ফসল রোপা আমন।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, সুপারি।
মৎস্য, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার ও হ্যাচারি রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২০ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৭৮.১৫ কিমি; নৌপথ ১১ নটিক্যাল মাইল।
বিলপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, বরফকল, অটো-রাইস মিল।
কুটিরশিল্প বাঁশ ও বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩১, মেলা ৩। জগন্নাথপুর, রাণীগঞ্জ, নয়াবন্দর, সৈয়দপুর ও কেশবপুর বাজার এবং বাসুদেব বাড়ির মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য মাছ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৫.৩০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৭০.৬৫%, পুকুর ২১.৫৩%, ট্যাপ ১.৩৬% এবং অন্যান্য ৬.৪৬%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলায় ৩৭.৪২% (গ্রামে ৩৫.১১% ও শহরে ৫০.৯৯%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৯.৪২% (গ্রামে ৫১.২০% ও শহরে ৩৮.৯১%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৩.১৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৩, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫, ব্র্যাক পরিচালিত যক্ষ্মা চিকিৎসা কেন্দ্র ১, হীড বাংলাদেশ পরিচালিত কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্র ১, ক্লিনিক (প্যাথলজি) ২।
এনজিও ব্র্যাক, এসডিএস, মসজিদ মিশন, বার্ডস, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, ভিলেজ কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সংস্থা।
[জীবন কুমার চন্দ]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; জগন্নাথপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।