করোনাভাইরাস
করোনাভাইরাস (Coronavirus) হলো ঢেকে রাখা, পজিটিভ সেন্স, একক-স্ট্র্যান্ডেড আরএনএ জুটোনিক (জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট যা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া) ভাইরাস। আলফা, বিটা, গামা এবং ডেল্টা নামে পরিচিত করোনাভাইরাসের চারটি জেনারা (Genera বা প্রজন্ম) রয়েছে। এদের মধ্যে আলফা এবং বিটা ধরণগুলি রোগসৃষ্টিকারী (Pathogenic, প্যাথোজেনিক) যাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল বাদুড়ের মধ্যে সনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও পাম-সিভেট এবং উট মানুষের মধ্যে SARS সংক্রমণের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে বলে মনে করা হয়। সাতটি করোনাভাইরাসের মধ্যে অত্যন্ত সংক্রামক সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস (SARS-CoV) ২০০২ সালে আবির্ভুত হয়েছিল। ২০১২ সালে মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস (MERS-CoV) এবং ২০১৯ সালে আবির্ভূত হয় নভেল করোনাভাইরাস বা SARS-CoV-2। কিন্তু SARS-CoV বা MERS-CoV উভয়ই SARS-CoV-2 এর মতো মানবজাতির বিশাল অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারেনি। এগুলি SARS-CoV hCoV-HKU1 এবং hCoV-OC43 সহ বিটা জেনারার অন্তর্গত, আর hCoV-NL63 এবং hCoV-229E আলফা জেনারার অন্তর্গত। করোনাভাইরাস মানুষের মধ্যে মুখ, নাক এবং চোখের মাধ্যমে প্রবেশ করে যা নিম্ন শ্বাসনালীর গুরুতর প্রদাহ সৃষ্টি করে যার ফলে ফুসফুসে মারাত্মক ক্ষত হয় এবং বিভিন্ন অঙ্গে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। SARS-CoV এবং MERS-CoV-এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, শুকনো কাশি এবং শ্বাসকষ্ট। কিছু লোকের ডায়রিয়া এবং বমি বমি ভাব বা বমিও হয়। সা¤প্রতিকতম মহামারী SRAS-CoV-2 দ্বারা সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগ বিভিন্ন মানুষকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে এবং বেশির ভাগ সংক্রমিত ব্যক্তির জ্বর, শুকনো কাশি এবং ক্লান্তির সাধারণ লক্ষণগুলির সাথে হালকা থেকে মাঝারি থেকে গুরুতর অসুস্থতা প্রকাশ পায়। অন্যান্য উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে ব্যথা এবং যন্ত্রণা, গলা ব্যথা, ডায়রিয়া, কনজেক্টিভাইটিস, মাথাব্যথা, স্বাদ হ্রাস, গন্ধ হ্রাস, ত্বকে ফুসকুড়ি, বা আঙ্গুল বা পায়ের আঙ্গুলের বিবর্ণতা। তবে, শ্বাস নিতে অসুবিধা বা শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা চাপ, নড়াচড়া করতে অসুবিধা হলো কোভিড-১৯ এর গুরুতর লক্ষণ। SARS-CoV-2 একজন সংক্রমিত ব্যক্তির কাশি, হাঁচি, কথা বলা বা গান গাওয়ার সময় কাছাকাছি থাকা সুস্থ ব্যক্তির মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। বায়ু চলাচলে প্রতিবন্ধক এবং/অথবা ভিড়যুক্ত পরিবেশে দীর্ঘ সময় কাটালেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রাথমিকভাবে, উপসর্গ ও লক্ষণ ব্যবহার করে কোভিড-১৯ রোগ সম্পর্কে ধারণা করা হয়। রিয়েল-টাইম পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (RT-PCR) করোনাভাইরাস শনাক্তে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হয়। রক্তের নমুনা ব্যবহার করে অ্যান্টিবডি এবং অ্যান্টিজেন ভিত্তিক পরীক্ষা দ্বারাও সনাক্ত করা যেতে পারে। তাছাড়া, নিউমোনিয়ার লক্ষণ জানার জন্য বুকের এক্সরে বা সিটি স্ক্যান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনাভাইরাসগুলির জিনোমের (বংশগতির উপাদান) দৈর্ঘ্য ২৭,০০০ থেকে ৩২,০০০ নিউক্লিওটাইড বেস পর্যন্ত হয়ে থাকে।
জিনোম ট্রান্সক্রিপশন এবং প্রতিলিপির সাথে জড়িত ননস্ট্রাকচারাল পলিপ্রোটিন 1a এবং 1b জিনোমের ৫′-টার্মিনালের দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে অবস্থিত। এনভেলপ গ্লাইকোপ্রোটিন স্পাইক (S), এনভেলপ (E), মেমব্রেন (M) এবং নিউক্লিওক্যাপসিড (N) স্ট্রাকচারাল প্রোটিনগুলো ৩′-টার্মিনাল প্রান্তে উপস্থিত নিউক্লিওটাইড সিকোয়েন্স তৈরি হয়। S প্রোটিনের সাহায্যে ভাইরাস তার হোস্টের সাথে যোগাযোগ সৃষ্টি ও ভেতরে প্রবেশ করে। SARS-CoV এবং SARS-CoV-2 উভয়ই মানবদেহের এনজিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ২ (ACE2)-কে রিসেপ্টর হিসেবে ব্যবহার করে।
টিকা প্রদানের মাধ্যমে করোনভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষার প্রচেষ্টা চলছে। অন্যদিকে অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ঔষধগুলি ফুসফুস এবং অন্যান্য অঙ্গগুলির জটিলতাগুলিকে দূর করতে সাহায্য করে। গুরুতর ক্ষেত্রে অক্সিজেন সরবরাহ বা ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হতে পারে। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পরে সুস্থ ব্যক্তির প্লাজমা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার আরেকটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে। [এ.এইচ.এম নুরুন নবী]