বুনোশস্য আবাদ
বুনোশস্য আবাদ (De Novo Crop Domestication) মানব নির্বাচনের মাধ্যমে বন্য প্রজাতির উদ্ভিদে বিবর্তন সাধন। যেহেতু এটি একটি বিবর্তনীয় প্রক্রিয়া, ফসলের প্রজাতি তাদের বন্য পূর্বপুরুষদের থেকে তাদের পরিবর্তনের ক্রমানুযায়ী জিনগতভাবে পরিবর্তিত হয়। এই প্রক্রিয়া প্রথম প্রায় ১২,০০০ বছর আগে উর্বর ক্রিসেন্ট এবং মধ্যপ্রাচ্যে ঘটেছিল। পরে চীন, মেসোআমেরিকা, উত্তর আমেরিকার পূর্ব অংশ, আন্দিজ, ওশেনিয়ার কাছে, সাব-সাহারান আফ্রিকা, তারপর বিশ্বের অন্যান্য অংশে প্রচলিত হয়। সাধারণত, যেসব ফসল উদ্ভিদ বেঁচে থাকার জন্য মানুষের উপর নির্ভরশীল এবং অত্যন্ত পরিবর্তিত জিনগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেসব ফসল উদ্ভিদকে চাষযোগ্য বিবেচনা করা হয়। কৃত্রিম নির্বাচনের মাধ্যমে বন্য ফসল উদ্ভিদকে চাষযোগ্য করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কৃত্রিম নির্বাচনের শুরু, নির্বাচকের দক্ষতা এবং নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বুনোশস্য আবাদে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
বুনোশস্য আবাদ বলতে বোঝায় কৃষির উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে নতুন উদ্ভিদ প্রজাতি চাষযোগ্য করার প্রক্রিয়া। এটি গতানুগতিক থেকে ভিন্ন চাষযোগ্যকরণ প্রক্রিয়া, যা মূলত বন্য গাছপালা খুঁজে বের করে সেগুলির পরিবর্তন করার উপর মনোনিবেশ করে। বুনো আবাদের লক্ষ্য হলো মানুষের ব্যবহারের জন্য ফসলের বৈচিত্র্য বাড়ানো এবং জলবায়ু পরিবর্তন, কীটপতঙ্গ, রোগ এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা। বন্য উদ্ভিদ প্রজাতি গবেষনা করে গবেষকরা নতুন বৈশিষ্ট্য এবং জেনেটিক বৈচিত্র্য উন্মোচন করতে পারেন, যা ফসলের সহনশীলতা, উতপাদনশীলতা এবং পুষ্টির মান উন্নত করতে পারে।
ফসলের জিনগত ভিত্তি সংকীর্ণ। ফসলের বন্য আত্মীয়দের জিনগত বৈচিত্র্যকে কাজে লাগানো নতুন এবং দরকারী জেনেটিক বৈশিষ্ট্যগুলি সজ্জিত করতে পারে, যা অভিজাত জাতের মধ্যে প্রবেশ করা যেতে পারে। একটি সম্পূরক পন্থা হতে পারে বন্য শস্যের আত্মীয়দের সরাসরি বাণিজ্যিক জাত উৎপাদনের জন্য গৃহপালিত করা। ঐতিহ্যগত গৃহপালন প্রক্রিয়া ধীর, সহস্রাব্দের প্রয়োজন, কারণ বিবর্তন স্বতঃস্ফূর্ত মিউটেশনের ক্রমান্বয়ে সঞ্চয়ের মাধ্যমে অগ্রসর হয়। প্রতিষ্ঠিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের আত্মীয়দের মধ্যে এই ধরনের জেনেটিক পরিবর্তন করা অবাস্তব, যদি অসম্ভব না হয়। যাইহোক, শস্য উৎপাদনের জেনেটিক্স সম্বন্ধে জ্ঞান সম্প্রসারণের ফলে আবাদ প্রক্রিয়াকে গতিশীল করার জন্য জিন এডিটিং প্রযুক্তির ব্যবহার অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়েছে।
বন্য প্রজাতির শস্য আবাদের একটি অভিনব কৌশল হলো জিনোম এডিটিং, যা এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত উদ্ভিদ প্রজনন প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে অনন্য। সাম্প্রতিক উদ্ভাবিত বন্য ধান এবং টমেটো-এর সফল উদাহরণ। সংক্ষেপে এটা বলা যেতে পারে, বুনোশস্য আবাদ ফসলের বৈচিত্র্য বাড়ানো এবং কৃষির বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলার জন্য উদ্ভাবনী পদ্ধতি প্রদান করে। বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত টেকসই স্থায়িত্বের জন্য, গবেষকরা বন্য উদ্ভিদ প্রজাতির জেনেটিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আরও শক্তিশালী এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।
বন্য ফসলের আত্মীয় ছাড়াও, বর্তমানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফসল সম্পূর্ণরূপে আবাদের আওতায় আসেনি। তাই বলা হয় পরম্পরাহীন ফসল এবং অবহেলিত এবং অব্যবহৃত প্রজাতিরসমূহের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো হয়নি। অনেকগুলি কঠোর পরিবেশ এবং অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়, অনেকগুরি প্রান্তিক জমিতে জন্মানো বা মান ফসল চাষের জন্য অনুপযুক্ত। জরি, বাজরা, কাউপিয়া এবং কুইনোয়া এর মতো পরম্পরাহীন ফসলের উপযোগিতা বাড়ানোর জন্য জিন এডিটিং-এর প্রয়োগ অনুসন্ধান করা হয়েছে। [মো. তোফাজ্জল ইসলাম]