মুরাদনগর উপজেলা
মুরাদনগর উপজেলা (কুমিল্লা জেলা) আয়তন: ৩৪০.৭৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৩০´ থেকে ২৩°৪৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫২´ থেকে ৯১°০৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নবীনগর উপজেলা, দক্ষিণে চান্দিনা ও দেবীদ্বার উপজেলা, পূর্বে দেবীদ্বার, ব্রাহ্মণপাড়া ও কসবা উপজেলা, পশ্চিমে দাউদকান্দি, হোমনা ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলা।
জনসংখ্যা ৫২৩৫৫৬; পুরুষ ২৪৭৫৯১, মহিলা ২৭৫৯৬৫। মুসলিম ৪৮৫৬৮৯, হিন্দু ৩৭৭৮৩, বৌদ্ধ ১৯, খ্রিস্টান ১৪ এবং অন্যান্য ৫১।
জলাশয় গোমতী ও বুড়ি নদী এবং কার্জন খাল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন মুরাদনগর থানা গঠিত হয় ১৮৫৮ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ২২ | ১৫৪ | ৩০৫ | ৩২৬৪৪ | ৪৯০৯১২ | ১৫৩৭ | ৫২.৮ | ৪৮.৫ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
১৩.৪১ | ৪ | ৩২৬৪৪ | ২৪৩৪ | ৫২.৮ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আকুবপুর ১০ | ৬৩১৬ | ১৫৯২৬ | ১৮৭২৯ | ৫৭.৮ | ||||
আন্দিকোট ১১ | ৫৮৩৫ | ১৪০১১ | ১৬০৫৭ | ৪৯.৬ | ||||
কানাল্লা ৪৯ | ৩৩৮৫ | ৮৬৮০ | ১০১১৩ | ৪০.৩ | ||||
চাপিতলা ২২ | ২৭৯৫ | ৭১৩৯ | ৮০৩১ | ৫৩.৫ | ||||
ছালিয়াকান্দি ৩১ | ২৮৮৫ | ৭৯৩০ | ৮৯২৩ | ৪১.১ | ||||
জাঁহাপুর ৪০ | ৪৩৫৩ | ১৫২২৬ | ১৫৭৭০ | ৪৫.৭ | ||||
টঙ্কী ৯১ | ২৪৮৭ | ৮২৬১ | ৯৬৮৫ | ৪৫.৮ | ||||
দারোরা ২৭ | ২৯২২ | ৮০০৫ | ৯৩৬৫ | ৪৫.৮ | ||||
ধামগড় ৩৬ | ৫৯১১ | ১৭৪৫৯ | ১৯৭৭৪ | ৬০.৯ | ||||
পশ্চিম নবীপুর ৬৩ | ২১৭৫ | ১৪০৬৫ | ১৪২৬১ | ৫২.৮ | ||||
পূর্ব নবীপুর ৫৮ | ৩৪২৮ | ১৫৩৫৪ | ১৫৫৪২ | ৫৩.৫ | ||||
পাহাড়পুর ৬৭ | ৩৬৪৯ | ৯৩২৭ | ১০৬৮১ | ৪৩.৩ | ||||
পশ্চিম পূর্বধৈর ৮১ | ২৭৪০ | ৮১৫৫ | ৯০৮৯ | ৪৮.২ | ||||
পূর্ব পূর্বধৈর ৭৬ | ৩১৭৪ | ৭৪০৯ | ৮৩২৩ | ৪৬.৪ | ||||
পশ্চিম বাঙ্গড়া ১৮ | ৪৪০৮ | ৯২৭৬ | ১০৪৫৩ | ৫৭.২ | ||||
পূর্ব বাঙ্গড়া ১৩ | ২৭৫২ | ৮১৪৮ | ৯৩৫৮ | ৫৮.০ | ||||
বাবুটিপাড়া ৭২ | ৩৪৫২ | ১০৭৪২ | ১২১৮৮ | ৪৭.৭ | ||||
মুরাদনগর ৫৪ | ৪৯২০ | ১৭৮৪০ | ২০০০১ | ৪৭.১ | ||||
যাত্রাপুর ৪৫ | ৩৫৬৫ | ৯৮৫৫ | ১১৩৩১ | ৪৪.৩ | ||||
উত্তর রামচন্দ্রপুর ৮৫ | ২৪৯৫ | ৯৭৯১ | ৯৯২৭ | ৪২.৯ | ||||
দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর ৯০ | ২৯৮৫ | ৮১০৬ | ৯১৯৪ | ৩১.৩ | ||||
শ্রীকাইল ৯৪ | ৭৬৩৫ | ১৬৮৮৬ | ১৯১৭০ | ৪৩.৩ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ১ গম্বুজ বিশিষ্ট পাহাড়পুর মসজিদ, শেখ লালের মসজিদ (পূর্বধৈর), পীর কাশিমপুর মসজিদ, বরদেশ্বরীর মূর্তি (মুরাদনগর)।
ঐতিহাসিক ঘটনা মুগল আমলে মুরাদনগর বলদা খাল পরগনার অন্তর্ভূক্ত ছিল। এ উপজেলা কৃষক আন্দোলন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীদের সঙ্গে পাকবাহিনীর বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুরাদনগরে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যে দু’টি উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হয় সেগুলি হচ্ছে পান্তিবাজার যুদ্ধ এবং চাপিতলা যুদ্ধ। পান্তিবাজার যুদ্ধে একজন ক্যাপ্টেনসহ ২৯ জন পাকসেনা ও ৫ জন রাজাকার নিহত হয়।
বিস্তারিত দেখুন মুরাদনগর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৮।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৮০, মন্দির ৪৬, মাযার ৮, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ভুতাইল সরকারবাড়ি মসজিদ, সোনাকান্দা পীরবাড়ি মসজিদ, কাশিমপুর পীরবাড়ি মসজিদ, মুরাদনগর মসজিদ, নবীপুর মন্দির, শ্রীকাইল কালীবাড়ি, রামচন্দ্রপুর কালীবাড়ি।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.৮%; পুরুষ ৫০.০%, মহিলা ৪৭.৮%। কলেজ ২২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯২, কমিউনিটি বিদ্যালয় ২৯, মাদ্রাসা ৪৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: জাহাপুর কে.কে. একাডেমী এন্ড কলেজ (১৯১৪), শ্রীকাইল কলেজ (১৯৪২), ডি.আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৪), বাঙ্গড়া হাইস্কুল (১৮৮৭), গোমতা ইসহাকিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), রামচন্দ্রপুর হাইস্কুল (১৯১৮)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী মাসিক: বিহঙ্গ, মুরাদনগর।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, প্রেসক্লাব ২, সিনেমা হল ৫, ক্লাব ৪০, খেলার মাঠ ৩২।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫০.২৪%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫৫%, শিল্প ১.৩৪%, ব্যবসা ১৬.২৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৭২%, চাকরি ৮.৪৭%, নির্মাণ ১.০৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৪২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৪.৮% এবং অন্যান্য ১২.১২%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৬.৪৪%, ভূমিহীন ৩৩.৫৬%। শহরে ৫৮.৭% এবং গ্রামে ৬৬.৮৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, মসুর, কলাই, সরিষা, তিল, তিসি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, জাম, কলা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১, গবাদিপশু ২, নার্সারি ১৪।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪২৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৪০ কিমি; নৌপথ ৩৫ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।
শিল্প ও কলকারখানা রাইস মিল, আইস ফ্যাক্টরি, বিড়ি কারখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৮০। রামচন্দ্রপুর, কোম্পানীগঞ্জ, হাটখোলা ও পিপড়িয়া হাট উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য চাল, সরিষা।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৮.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.৭%, ট্যাপ ০.৮% এবং অন্যান্য ৪.৫%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৩.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৩.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৩.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৭, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৭, ক্লিনিক ৪২।
এনজিও ব্র্যাক। [গোলাম কিবরিয়া ভূইয়া]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মুরাদনগর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।