চন্দনাইশ উপজেলা
চন্দনাইশ উপজেলা (চট্টগ্রাম জেলা) আয়তন: ২০১.৯৯ বর্গ কিমি। অবস্থান:২২°০২´ থেকে ২২°০৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৪৯´ থেকে ৯২°০৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা, দক্ষিণে সাতকানিয়া উপজেলা, পূর্বে বান্দরবন সদর ও সাতকানিয়া উপজেলা, পশ্চিমে আনোয়ারা উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৩৩০১৭; পুরুষ ১১৭৪১৮, মহিলা ১১৫৫৯৯। মুসলিম ২০০০৭২, হিন্দু ২৭১৬২, বৌদ্ধ ৫০৪৬, খ্রিস্টান ৫৬৪ এবং অন্যান্য ১৭৩।
জলাশয় প্রধান নদী: সাঙ্গু।
প্রশাসন চন্দনাইশ থানা গঠিত হয় ১৯৭৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ২ জুলাই ১৯৮৩।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৯ | ৩৯ | ৪৬ | ৩৫২৪৮ | ১৯৭৭৬৯ | ১১৫৪ | ৬১.৪ | ৫২.২ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
২৬.৮৩ | ৯ | ১২ | ৩৫২৪৮ | ১৩১৪ | ৬১.৪ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কাঞ্চনাবাদ ৮৫ | ৫৬৯১ | ১৩০৬০ | ১১৬৪১ | ৪৮.৭ | ||||
জোয়ারা ৭৬ | ১৬৫৩ | ৫৩৬৬ | ৫০১৫ | ৬৩.৮ | ||||
দোহাজারী ৪৭ | ৮১০৬ | ২০৩৭৩ | ১৯৭৭৪ | ৪৯.৩ | ||||
ধোপাছড়ি ৩৮ | ১৪২৭৭ | ৫০৭৫ | ৫১০০ | ৩০.৩ | ||||
বরকল ১৯ | ৬২৫৭ | ১০৭১২ | ৯৭৪৮ | ৬২.০ | ||||
বরমা ২৮ | ২৩৭৫ | ১১৬১২ | ১১৩৭৩ | ৬২.২ | ||||
বৈলতলী ১৩ | ২৩৫৯ | ১১১৭১ | ১১৪৮১ | ৫৩.৪ | ||||
সাতবাড়িয়া ৯৫ | ২৮৭৯ | ১১৭৮৬ | ১২৫৪১ | ৪৯.৮ | ||||
হাশিমপুর ৬৬ | ৬৮৩৫ | ১১২৪৯ | ১০৬৯২ | ৪৬.৯ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ তিন গম্বুজ বিশিষ্ট খান মসজিদ (বাগিচা হাট), নবরত্ন বিহার (সাতবাড়িয়া), বুড়ি কালি মন্দির (বরমা), খান দিঘি (বাগিচা হাট)।
ঐতিহাসিক ঘটনা ১৬৬৬ সালে মুগলবাহিনী উত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল দখল করে। পরে মোর্তজা খাঁর নেতৃত্বে মুগলবাহিনী কর্ণফুলি নদী পার হয়ে শঙ্খ নদীর উত্তর তীরে এসে অবস্থান নেয়। আধু খাঁ, লক্ষ্মণ সিংহ ও দু’জন হাজারী মনসবদারকে সেখানকার সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কথিত আছে যে, এ দুজন হাজারী মনসবদারের নামানুসারে এখানকার নাম হয় দোহাজারী। পরবর্তীতে দোহাজারীতে দু’টি দুর্গ নির্মিত হয়। ব্রিটিশরা দোহাজারীতে একটি বিমান ঘাটি নির্মাণ করে।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে দোহাজারীতে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রচ- যুদ্ধে পাকবাহিনীর পরাজয় ঘটে। যুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম শহর থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র দোহাজারীতে স্থানান্তর করা হয়। উপজেলায় ২টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে।
বিস্তারিত দেখুন চন্দনাইশ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৭৫, মন্দির ৭০, কিয়াং ১১, মাযার ২০, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: সাতবাড়িয়া শাস্তি বিহার ও গাছবাড়িয়া সার্বজনীন হরি মন্দির, বরুমতি খালে বারুণী স্নান।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৩.৬%; পুরুষ ৫৪.২%, মহিলা ৫৩.০%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: গাছবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ, সাতবাড়িয়া কলেজ, আমানতছফা বদরুন্নেছা মহিলা কলেজ, জামিজুরী কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ, বরমা ত্রাহিমেনকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), গাছবাড়িয়া নিত্যানন্দ গৌরিচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, বরকল এস. জেড উচ্চ বিদ্যালয়, শুচিয়া হাইস্কুল, কাঞ্চননগর উচ্চ বিদ্যালয়, জোয়ারা সিনিয়র মাদ্রাসা।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী বরুমতি, আজকের চন্দনাইশ, চন্দনাইশ দর্পন, সেইদিনের চন্দনাইশ, শঙ্খ চিল, দর্পন।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৯, ক্লাব ২০, প্রেসক্লাব ২, সিনেমা হল ২, মহিলা সংগঠন ১, স্টেডিয়াম ১।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৬.৪১%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৭৫%, শিল্প ০.৬০%, ব্যবসা ১৯.১১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৯৮%, চাকরি ১৬%, নির্মাণ ১.৪৮%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৩.৩২% এবং অন্যান্য ১৪.৯৭%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৮.১০%, ভূমিহীন ৫১.৯০%। শহরে ৫৩.৩২% এবং গ্রামে ৪৭.৭৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আখ, আলু, মরিচ, সরিষা, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, শন, চা, তরমুজ, তামাক, মিষ্টিআলু।
প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা, লেবু।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁসমুরগির খামার, হ্যাচারি ও কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৪১ কিমি, কাঁচারাস্তা ২০২ কিমি; নৌপথ ৫ কিমি; রেলপথ ২০ কিমি, রেলস্টেশন ৩ (দোহাজারী, হাশিমপুর, গাছবাড়ীয়া খান হাট)।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি ও গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা গার্মেন্টস, হিমাগার, বরফকল, প্রিন্টিং প্রেস, স’মিল, ওয়েল্ডিং কারখানা, ময়দাকল, ধানকল।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প,তাঁতশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ, বেকারি, সেলাই কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৪। উল্লেখযোগ্য হাটবাজার ও মেলা: খোদার হাট, বাগিচা হাট, গাছবাড়ীয়া খান হাট, দোহাজারী বাজার, মৌলভীবাজার ও বারুণী মেলা।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য রেলওয়ে স্লিপার, কাঠের আসবাবপত্র, দুধ, মুরগি, পেয়ারা, লেবু, আনারস, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসুচির আওতাধীন। তবে ৭৪.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ সাদা মাটি ও বিভিন্ন ধরনের পাথর।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.০%, ট্যাপ ০.৫% এবং অন্যান্য ৪.৫%। এ উপজেলার ০.০২% অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৫.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২২.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে । ২.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৫, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, কমিউনিটি ক্লিনিক ১০।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, উদ্দীপন, কারিতাস, পল্লী প্রগতি সংস্থা। [এস.এম আবু জাকের]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; চন্দনাইশ সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।