হোসেন, আনোয়ার
হোসেন, আনোয়ার (১৯৩১-২০০৭) বাংলাদেশের পারমাণবিক পদার্থবিদ এবং লেখক-গবেষক। ১৯৩১ সালে টাঙ্গাইলের নাল্লাপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, নাম বেলায়েত হোসেন। আনোয়ার হোসেন ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতকোত্তর (এম.এস.সি) ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৫৫ সালে যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে পিএইচ.ডি করেন। তিনি ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত ইউরোপিয়ান নিউক্লিয়ার রিসার্চ ল্যাবরেটরি (CERN)-এর ভিজিটিং সায়েন্টিস্ট এবং ১৮৬৭ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত স্টুডসভিক (সুইডেন)-এ অতিথি বিজ্ঞানী ছিলেন।
ড. আনোয়ার হোসেন ১৯৬০ সালে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৭৬ সালে এর চেয়ারম্যান হন। তিনি ১৯৮৮ সালে অবসরগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানের পাশাপাশি, তিনি ১৯৮০ সাল থেকে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন সংস্থার (SPARRSO) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ড. আনোয়ার হোসেন ১৯৮০ সালে জাতিসংঘের পরামর্শক হিসাবে ESCAP (ব্যাংকক) এ তিন মাস কাজ করার সময় এশিয়ায় রিজিওনাল রিমোট সেন্সিং প্রোগ্রাম তৈরি করেন।
তিনি অবসর গ্রহণের পরেও UNDP/FAO-এর পরামর্শদাতা হিসেবে স্পারসোতে (SPARRSO) (১৯৯০-১৯৯১) কাজ করেন। এছাড়া এলজিইডি-এর উইন্ড এনার্জিতে (১৯৯৯) এবং বিশ্বব্যাংকে (২০০০) পরামর্শদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আনোয়ার হোসেন বায়োএনার্জির জন্য জাতীয় FAO পরামর্শক (২০০৫) এবং এর জন্য টেকসই শক্তি পরামর্শক হিসাবেও জিটিজেড (২০০৬) কাজ করেছেন।
আনোয়ার হোসেন ইংল্যান্ড থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন শেষে দেশে ফেরার পর বাংলাদেশে নিউক্লিয়ার ফিজিক্স চালু করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রশিক্ষিত নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট, যিনি দেশে নিউক্লিয়ার ফিজিক্স গবেষণার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পারমাণবিক অপ্রসারণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন এবং সাভারে প্রথম এবং একমাত্র পারমাণবিক গবেষণা চুল্লি স্থাপনে সহায়তা করেন। আনোয়ার হোসেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে এনার্জি, রিমোট সেন্সিং, ইকোলজি এবং বিজ্ঞান নীতির উপর ১০০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া তিনি ৩টি বিজ্ঞান বিষয়ক বই লেখেন। বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
ইনস্টিটিউট অফ ওরিয়েন্টাল ফিলোসফি (জাপান) কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে সনদসহ স্বর্ণপদক প্রদান করে। তিনি বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের ফেলো, বাংলাদেশ হিউম্যান ইকোলজি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং লন্ডনের কমনওয়েলথ হিউম্যান ইকোলজি কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান ছিলেন।
ড. আনোয়ার হোসেন ৭৬ বছর বয়সে ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। [ইয়ারুল কবীর]