ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর উপজেলা

Banglapedia admin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৭:৩৩, ৫ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর উপজেলা (ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা)  আয়তন: ২৩৭.৩৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৫১´ থেকে ২৪°০৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৩´ থেকে ৯১°১৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সরাইল ও নাসিরনগর উপজেলা, দক্ষিণে আখাউড়া, কসবা ও নবীনগর উপজেলা, পূর্বে মাধবপুর উপজেলা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পশ্চিমে আশুগঞ্জ ও নবীনগর উপজেলা।

জনসংখ্যা ৫২১৯৯৪; পুরুষ ২৫৮৫০৩, মহিলা ২৬৩৪৯১। মুসলিম ৪৮৫৭৩২, হিন্দু ৩৫৮০৯, বৌদ্ধ ৮০, খ্রিস্টান ২৭৮ এবং অন্যান্য ৯৫।

জলাশয় তিতাস নদী এবং বোয়ালিয়া বিল, কাজলা বিল, কোদালিয়া বিল, সিঙ্গার বিল, ধুপাজুড়ি বিল ও লইস্কা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। ১৮৬৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া শহরটি পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১১ ১০৩ ১৪৬ ১৯৩৮১৪ ৩২৮১৮০ ২১৯৯ ৬১.৪৩ (২০০১) ৪৬.৬
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৭.৫৮ (২০০১) ১২ ৩৪ ১৭২০১৭ ৭৩৫৪ (২০০১) ৬৬.০
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৪.৮৯ (২০০১) ২১৭৯৭ ৩২৭৬ (২০০১) ৫১.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উত্তর নাটাই ৯৩ ২৯৪৬ ১৭৮৫০ ১৬৫৫৬ ৪৮.০
দক্ষিণ নাটাই ৪৮ ২৬৮৩ ১৪৭৫৬ ১৫০৪০ ৩৯.০
সুহিলপুর ৫০ ৭৬৫২ ২১১৭৪ ২১২৭৮ ৪৪.৭
পূর্ব তালশহর ৮১ ৩১৫৩ ১২২৫৫ ১৩০৯১ ৪২.১
বাসুদেব ১৭ ৬৪৪১ ১৭০৫০ ১৮৮২৩ ৪৯.৪
বুধল ৯৪ ২১৭৬ ১৩২২৩ ১২২৯২ ৩৮.৬
মাছিহাটা ৫৯ ৭৮৯৯ ১৯২২৪ ২১২৮৫ ৬১.১
মজলিশপুর ৬১ ৭৫৪৭ ১৩৯৩৩ ১৪৯১৪ ৩৯.৮
রামরাইল ৮৩ ৩৪৯০ ১৫৮৬২ ১৬৪৭৯ ৪৮.৬
সাদেকপুর ৮৬ ২৯৮৩ ১১৮৪১ ১০৮৮১ ৪৫.০
সুলতানপুর ৮৮ ৭৩৩৬ ১৬০১২ ১৬১৫৮ ৫০.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ উলচাপাড়া জামে মসজিদ, ভাদুঘর জামে মসজিদ, কাল ভৈরব মন্দির, আনন্দময়ী কালীমন্দির, শ্রী শ্রী শিবমন্দির, নৃসিংহ জিউর মন্দির, মৌড়াইল কালীমন্দির, হরষপুর জমিদার বাড়ি ও হাম্মামখানা।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে এ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খ- যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী এ উপজেলার কাউতলী, পৈরতলা, সিঙ্গারবিল, নাটাই, মজলিশপুর, বিজেশ্বর, রামরাইল এবং আটলায় ২০৪ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। এছাড়াও পাকবাহিনী উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের বীরপাশা গ্রামের ২২ জন লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়ীয়া শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে স্মৃতিস্তম্ভ ও ১টি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৯২, মন্দির ২১, গীর্জা ৪। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: উলচাপাড়া জামে মসজিদ, ভাদুঘর জামে মসজিদ, চিনাইর দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ, ইউনুছিয়া জামে মসজিদ, আনন্দময়ী কালীবাড়ি মন্দির, নৃসিংহ জিউর মন্দির, মৌড়াইল কালীমন্দির, হযরত কাজী মাহমুদ শাহ (রহঃ) মাযার, হযরত ডাঃ আব্দুল্লাহ (রহঃ) মাযার, সৈয়দ আবদুল বারী শাহের (রহঃ) মাযার, সৈয়দ মুসলেহ উদ্দিনের (রহঃ) মাযার, ভাদুঘরের মঠ, ব্যাপ্টিস্ট গির্জা, রামকৃষ্ণ আশ্রম, রঘুনাথ জিউর আখড়া।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৩.৪%; পুরুষ ৫৩.৬%, মহিলা ৫৩.৩%। আইন কলেজ ১, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ১, কলেজ ১০, ভোকেশনাল স্কুল ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৩০, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১৯, কিন্ডার গার্টেন ৩৬, মাদ্রাসা ১৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরকারি কলেজ (১৯৪৮), ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৬৪), মিরাসানী পলিটেকনিক একাডেমী (১৯৪৮), রামকানাই হাই একাডেমী (১৯০১), নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), সাতবর্গ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩১), ব্রাহ্মণবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬০), অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৫), মডেল সরকারি গার্লস হাইস্কুল (১৯৩৬), মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১০), ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ইন্ডাষ্ট্রিয়াল স্কুল (১৯৪১), সূর্যমুখী কিন্ডার গার্টেন (১৯৮৩), আদমপুর ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১৭), জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, প্রজাবন্ধু, আজকের হালচাল (অবলুপ্ত); সাপ্তাহিক: ঊষা, তিতাস; মাসিক: হিরা, মান্দাস, পরিচয়।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১৪, থিয়েটার গ্রুপ ২, সিনেমা হল ৩, খেলার মাঠ ৩৩, মহিলা সংগঠন ৪৫।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৭.৯৭%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৭৩%, শিল্প ১.০০%, ব্যবসা ১৭.৯৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৯৬%, চাকরি ৮.২৩%, নির্মাণ ১.৮৮%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৬, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.৭৪% এবং অন্যান্য ১২.১৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৬.৫২%, ভূমিহীন ৪৩.৪৮%। শহরে ৪০.০২% এবং গ্রামে ৬১.৩৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, সরিষা, তিল, বাদাম, কলাই, খেসারী, মুগ, ছোলা, ফুটি, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আখ, মটর, ধুন্দুল।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেঁপে, পেয়ারা, তরমুজ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৪, গবাদিপশু ৬, হাঁস-মুরগি ১০৯, নার্সারি ২০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৪০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪.৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৩০ কিমি; নৌপথ ৪০ কিমি; রেলপথ ৩২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, ময়দাকল, বরফকল, তেলকল, ছাপাখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা, সার কারখানা, স’মিল।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৬১, মেলা ৩। আনন্দ বাজার, জগৎ বাজার, সুহিলপুর বাজার, নন্দনপুর বাজার, গোকর্ণঘাট বাজার, চিনাইর বাজার, ফারুকী বাজার, সাতবর্গ বাজার এবং বিজয় মেলা, ভাদুঘরের বান্নি মেলা, মধ্যপাড়ার রাধারমান ও কেটকেডি মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, পাট, গম, প্রাকৃতিক গ্যাস।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৯০.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ তিতাস গ্যাস।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.৪ %, ট্যাপ ৬.৮ % এবং অন্যান্য ১.৮ %। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। এখানে আর্সেনিক আক্রান্ত রুগী ১১ জন।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৫.৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২২.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ৩৯, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ২০, ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক ৫, মাতৃসদন ক্লিনিক ১, দন্ত চিকিৎসালয় ৪।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ও বন্যা, ১৯৬১ ও ২০০৩ সালের ঘূর্ণিঝড়, ১৯৬৪ সালের মোহাজের সমস্যা এবং ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যায় এ অঞ্চলের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, শাপলা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, ভিডিসি, সুহূদ, গণজাগরণ কেন্দ্র, নব জাগরণী সংস্থা প্রভৃতি।  [মো. মাহবুবুর রহমান]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।