এগারসিন্ধুর দুর্গ
এগারসিন্ধুর দুর্গ ঈসা খানের নাম বিজড়িত মধ্যযুগীয় একটি দুর্গ। এটি কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার অধীনে এগারসিন্ধুর গ্রামে অবস্থিত। ‘এগারসিন্ধু’ শব্দটি এখানে ‘এগারটি নদী’ অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। এ দুর্গ এ নামে পরিচিত হওয়ার কারণ হলো, এক সময় এটি অনেকগুলি নদীর (বানার, শীতলক্ষা, আড়িয়াল খাঁ, গিয়র সুন্দা ইত্যাদি) সংযোগস্থলে অবস্থিত ছিল।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, বেবুধ (ইবনঁরফুধ) নামে একজন কোচ উপজাতি প্রধান দুর্গটি নির্মাণ করে এটিকে তাঁর রাজধানীতে পরিণত করেন। এখানে পুরনো একটি দিঘি রয়েছে যেটিকে ‘বেবুধ রাজার দিঘি’ বলা হয়ে থাকে। ধারণা করা হয় যে, এ দিঘির পাড়েই রাজপ্রাসাদ অবস্থিত ছিল। ঈসা খান দুর্গটি দখল করেছিলেন। দুর্গটিকে সংস্কার করে একটি শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটিতে উন্নীত করার কৃতিত্ব ঈসা খানের। ৫৮৯ খ্রিস্টাব্দে মানসিংহ দুর্গটি আক্রমণ করেন, কিন্তু ঈসা খানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করে তিনি ফিরে যান। সতেরো শতকের শুরুর দিকে ‘অহম’রা এ দুর্গটি দখল করে নেয়। ইসলাম খান তাদের পরাজিত করে দুর্গটিকে ধ্বংস করে দেন। ১৮৯৭ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে এ ধ্বংসপ্রাপ্ত দুর্গের বশিষ্টাংশও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সতেরো শতকে এখানে দুটি মসজিদ নির্মিত হয়, সাদী মসজিদ (১৬৫২ খ্রি.) এবং শাহ মুহম্মদ মসজিদ (১৬৮০ খ্রি.)।
দুর্গটি মাটির দেয়ালে ঘেরা ছিল, যার ভিত ছিল প্রায় ৬০ ফুট চওড়া। দুর্গটির পশ্চিমদিকে মানুষের তৈরি পরিখা এবং অন্য তিনদিকে নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। সম্ভবত শাহ মুহম্মদের মসজিদে ব্যবহূত পাথরগুলি দুর্গের ধ্বংসাবশেষ থেকে সংগ্রহ করা। অসংখ্য ইট (সাধারণত ৭দ্ধ ৭দ্ধ ১.৫ পরিমাপের), ইটের টুকরা, মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ, কিছু পাথর এবং কয়েকটি মাটির ঢিবি এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, দুর্গের কোনো কাঠামোগত চিহ্নই বর্তমানে নেই। [শাহনাজ হুসনে জাহান]