কোটালিপাড়া উপজেলা
কোটালিপাড়া উপজেলা (গোপালগঞ্জ জেলা) আয়তন: ৩৫৫.৯০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৫২´ থেকে ২৩°০৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৫´ থেকে ৮৯°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে রাজৈর ও মাদারীপুর সদর উপজেলা, দক্ষিণে নাজিরপুর ও উজিরপুর উপজেলা, পূর্বে আগৈলঝারা, গৌরনদী ও কালকিনি উপজেলা, পশ্চিমে গোপালগঞ্জ সদর ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৩০৪৯৩; পুরুষ ১১৩৪৯২, মহিলা ১১৭০০১। মুসলিম ১০৯৩৪৪, হিন্দু ১১৫১২৫, খ্রিস্টান ৫৯৬২, বৌদ্ধ ৯ এবং অন্যান্য ৫৩।
জলাশয় ঘাঘর ও বিষারকান্দি নদী এবং জানিহানিয়া খাল ও গোপালগঞ্জ বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন কোটালিপাড়া উপজেলা গঠিত হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১২ | ১০১ | ২০৮ | ১১৮৪৪ | ২১৮৬৪৯ | ৬৪৮ | ৫৩.৬ (২০০১) | ৫৮.৫ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
২.০৬ | ৯ | ৯ | ৫৮০৮ | ২৮১৯ | ৭৮.০ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজার সংখ্যা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৫.১২ (২০০১) | ৫ | ৬০৩৬ | ১০৫৭ (২০০১) | ৬৪.৫ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আমতলী ১৩ | ৪৫৯০ | ৮৪৩৬ | ৯৪০১ | ৫৫.১ | ||||
কলাবাড়ী ৩৯ | ১১৪৮৪ | ১২১৫১ | ১২১০৪ | ৫৮.৯ | ||||
কান্দি ৪৭ | ১৩১৯১ | ৮৭৪৬ | ৮৫৫২ | ৫২.১ | ||||
কুশলা ৫৫ | ৬৮০১ | ১০২১৯ | ১১০৪২ | ৪৯.৫ | ||||
ঘাঘর ২৩ | ২১১২ | ৫৬৩২ | ৫৫৮৮ | ৬৩.৩ | ||||
পিনজুরি ৬৩ | ৮৩৯৫ | ১০৪৬৩ | ১০৯১০ | ৬২.৯ | ||||
বান্ধাবাড়ী ১৫ | ৩৮৩২ | ৫২৮৫ | ৫৭৮০ | ৫৩.৫ | ||||
রাধাগঞ্জ ৭১ | ৭১৮৯ | ১০৫১০ | ১১০৪২ | ৬৫.১ | ||||
রামশীল ৭৯ | ৭২১৩ | ৮৬৬১ | ৮৮৮১ | ৬১.০ | ||||
সুয়াগ্রাম ৯৪ | ৪৬৫১ | ৪০৫০ | ৪১১৮ | ৫৯.৪ | ||||
সদুল্লাপুর ৮৭ | ১৩০৩২ | ১৫৪২২ | ১৫২৬২ | ৬২.০ | ||||
হিরণ ৩১ | ৪৯৪৮ | ১০৯৬৪ | ১১৪৬৬ | ৫৮.২ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কোটালিপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন (১৮৯৮), বহুতলী সিকদার বাড়ি মসজিদ (২০০ বছরের পুরাতন), দীঘলিয়া দক্ষিণা কালীবাড়ি।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৪ মে পাকবাহিনী কলাবাড়ী এলাকায় প্রায় ১৫০ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে এবং ঘরবাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। ১৭ জুন পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের (হেমায়েত বাহিনী) রাজাপুর ক্যাম্প আক্রমন করে, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিআক্রমণ করলে তারা পিছু হটে। ১৪ জুলাই পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং হেমায়েত উদ্দীন মারাত্মকভাবে আহত হন। ১২ অক্টোবর পাকবাহিনী কলাবাড়ী এলাকায় প্রায় ২০০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ২ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে পাকবাহিনী পরাজিত হয়। ৩ ডিসেম্বর ১২০ জন স্থানীয় রাজাকার এবং ৬০০ জন পাকসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্ধী হয় এবং এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলায় ১৬ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন কোটালিপাড়া উপজেলা, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২২০, মন্দির ২২৮, গির্জা ৩৯, মাযার ১, তীর্থস্থান ২।
শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৯.২%; পুরুষ ৬২.১%, মহিলা ৫৬.৪%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫২, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৪, কেজি স্কুল ৪, মাদ্রাসা ২৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ, রামশীল ইউনিয়ন কলেজ, শেখ হাসিনা আদর্শ কলেজ, কোটালিপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন, কোটালিপাড়া এস এন ইনস্টিটিউশন, গোপালপুর কে এন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পূর্ব কোটালীপাড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), ওয়েস্ট কোটালিপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন (১৯২৩), পূর্ব উত্তর কোটালিপাড়া এস এস মাদ্রাসা।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৫০, লাইব্রেরি ৫, সিনেমা হল ১, সার্কিট হাউজ ১, সেবাশ্রম ৫, এতিমখানা ৪, যাত্রাপার্টি ১, সাংস্কৃতিক সংগঠন ২, ক্রীড়া সংগঠন ২, যুব সংগঠন ১৯, মহিলা সমিতি ৬৩।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭০.৪০%, অকৃষি শ্রমিক ১.১১%, শিল্প ০.৪০%, ব্যবসা ১৩.৮০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.০০%, চাকরি ৬.১৪%, নির্মাণ ১.৩৪%, ধর্মীয় সেবা ০.২৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৬% এবং অন্যান্য ৫.৫০%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৮৪.৪৬%, ভূমিহীন ১৫.৫৪%। শহরে ৫৪.৭৪% এবং গ্রামে ৮৫.৮৪% পরিবারের কৃষিভূমি রয়েছে।
প্রধান প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, চীনাবাদাম, মেসতা।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, আউশ ধান, মুগ ডাল, চীনা, কাউন, তিসি।
প্রধান ফল-ফলাদি তরমুজ, ফুটি, তাল।
মৎস্য, গবাদিপশু হাঁস-মুরগির খামার মৎস ৫৮১ (চিংড়ি ঘের), গবাদিপশু ৪০, হাঁস-মুরগি ১৭৩।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২০০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১২৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৬৩ কিমি; নৌপথ ৬৪ কিমি।
বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি ও ঘোড়ার গাড়ি।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বুননশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ, কাঠের কাজ প্রভৃতি।
হাটবাজার, মেলা হাটবাজার ১৪, মেলা ৫। ঘাঘর বাজার, সিকির বাজার, কালিন্দী বাজার, ত্রিমুখী বাজার, ভাঙ্গার হাট, পিনজুরি হাট, রামশীল হাট, ধারাবসাইল হাট, চৌধুরী বাড়ি হাট, পীরের বাড়ি হাট, বান্ধাবাড়ী হাট, নারকেল বাড়ি হাট, রাধাগঞ্জ হাট ও কালীগঞ্জ হাট এবং ত্রিমুখী মেলা, রামশীল মেলা, কালিন্দী মেলা, ঘাঘর মেলা ও কালীগঞ্জ মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, মাছ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৮.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ উপজেলার বাঘিয়ার বিল এলাকায় পিট কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.১%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ২.৫%। এ উপজেলার ৭৯% অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮৯.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৭.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১২, ক্লিনিক ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ২২।
এনজিও প্রশিকা, ব্র্যাক, আশা, ওয়ার্ল্ড ভিশন, কারিতাস, আশার আলো। [স্বপন কুমার গাইন]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কোটালিপাড়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।