সাঁথিয়া উপজেলা
সাঁথিয়া উপজেলা (পাবনা জেলা) আয়তন: ৩৩১.৫৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৫৭´ থেকে ২৪°০৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৫´ থেকে ৮৯°৩৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ফরিদপুর (পাবনা) ও শাহজাদপুর উপজেলা, দক্ষিণে সুজানগর উপজেলা, পূর্বে বেড়া উপজেলা, পশ্চিমে আটঘরিয়া ও পাবনা সদর উপজেলা।
জনসংখ্যা ৩৮০৩০১; পুরুষ ১৯১২২৫, মহিলা ১৮৯০৭৬। মুসলিম ৩৭০১৮১, হিন্দু ৯৯৬৭, খ্রিস্টান ১৩৬ এবং অন্যান্য ১৭।
জলাশয় প্রধান নদী: ইছামতি, বড়াল, আত্রাই; ঘুঘুদহ, গজারিয়া ও আড়িদহ বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন সাঁথিয়া থানা গঠিত হয় ১৯০৫ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৬ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১০ | ১৫৬ | ২৩৪ | ৩৮৭০৪ | ৩৪১৫৯৭ | ১১৪৭ | ৪৭.৯ | ৪৩.৪ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
২৬.২৯ | ৯ | ২৭ | ৩৮৭০৪ | ১৪৭২ | ৪৭.৯ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আতাইকুলা ১৫ | ৮৬৮০ | ১৯০০৪ | ১৯০৩৫ | ৫১.৭ | ||||
করমজা ৫১ | ৭৯৮৫ | ২১২৮৬ | ২০৫৩৯ | ৪৪.২ | ||||
কাশিনাথপুর ৬০ | ৮৯১৪ | ২৩৪৬০ | ২২৮৪৬ | ৪৯.৫ | ||||
ক্ষেতুপাড়া ৬৯ | ৭৭৫৯ | ১৭৬২০ | ১৮৪১৮ | ৩৮.৭ | ||||
গৌরিগ্রাম ৪৩ | ৭১৬৪ | ১১৮০৫ | ১১৭৩৫ | ৩৯.৩ | ||||
ধোপাদহ ২৫ | ৬২৬৭ | ১৩৫৮৬ | ১৩৬৯৯ | ৪২.৯ | ||||
ধুলাউরি ৩৪ | ৭২১১ | ১৬৪০৯ | ১৬২০৪ | ৪১.৬ | ||||
নন্দনপুর ৮৬ | ৭৩১০ | ১৫১৩০ | ১৪৭৩৮ | ৪৪.৬ | ||||
নাগডেমরা ৭৭ | ৬৬০০ | ১৮২৩৯ | ১৮০৩২ | ৪০.৩ | ||||
ভুলবাড়ীয়া ১৭ | ৭৬৪৭ | ১৫০৫৯ | ১৪৭৫৩ | ৩৬.১ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ গনেশ মন্দির (১৯ শতক)।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর পাকসেনা ও রাজাকাররা এ উপজেলার নাগডেমরা ইউনিয়নের ধূলাউড়ি ফকির পাড়ায় নারী নির্যাতন করে এবং ২২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে ইছামতি নদীর তীরে বেয়নেট চার্জ করে ২১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। সাঁথিয়া উপজেলায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যেসব যুদ্ধ হয় সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ডাববাগান যুদ্ধ এবং সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হানাদার ক্যাম্প অপারেশন। ১৫ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলার নাগডেমরায় গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে; শহীদনগর ও সাঁথিয়া উপজেলা চত্বরে ২টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন সাঁথিয়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১০।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৬০, মন্দির ৪৮, গির্জা ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: উপজেলা জামে মসজিদ, নাগডেমরা জামে মসজিদ, শহীদনগর মসজিদ, সাঁথিয়া কালীমন্দির, আতাইকোলা খ্রিস্টান মিশনারিজ চার্চ।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৩.৯%; পুরুষ ৪৫.৩%, মহিলা ৪২.৫%। কলেজ ৯, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭১, কিন্ডার গার্টেন ৫, মাদ্রাসা ৫২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মিয়াপুর হাজী জসিমউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১৯৬৫), সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৩), আতাইকুলা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৯), সাঁথিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০১), নাগডেমরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধুলাউরি কাওছারিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৯০৭), বোয়ালমারি কামিল মাদ্রাসা (১৯৪০)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১৬, লাইব্রেরি ৪, নাট্যদল ১, সিনেমা হল ৩, যাত্রাদল ১, খেলার মাঠ ১১, মহিলা সমিতি ৬।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৫.৪৪%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৭২%, শিল্প ৫.৫২%, ব্যবসা ১০.৬৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৮৭%, চাকরি ৪.১৭%, নির্মাণ ০.৮৮%, ধর্মীয় সেবা ০.১০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২০% এবং অন্যান্য ৫.৪৫%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৯.০৮%, ভূমিহীন ৪০.৯২%। শহরে ৫০.২৫% এবং গ্রামে ৬০.৩৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, পিঁয়াজ, শাকসবজি, সরিষা।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি যব, তিল, কাউন, তামাক।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, পেঁপে, কলা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৩৫, গবাদিপশু ৯৯৭, হাঁস-মুরগি ১২০, নার্সারি (মৎস্য) ১।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৮৪ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬৪৮ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, ময়দাকল, বরফকল, হোসিয়ারী শিল্প, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩০, মেলা ৩। আতাইকুলা হাট, বনগ্রাম হাট, কাশিনাথপুর হাট, করমজা হাট, চতুর হাট, বোয়ালমারি হাট ও শহীদনগর হাট এবং উপজেলা সদরের কৃষি মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, পিঁয়াজ, শাকসবজি, চামড়া।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৩.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ চুনাপাথর, বালিপাথর, চুন, কয়লা, বালি।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.১%, ট্যাপ ০.৬% এবং অন্যান্য ৫.৩%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭২.০%পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৪.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৮, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, ক্লিনিক ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যায় এ উপজেলার ঘরবাড়ি, ফসল ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এনজিও ব্র্যাক, আশা। [প্রবীর গোস্বামী বাবু]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সাঁথিয়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।