রহমতউল্লা, শাহনাজ
রহমতউল্লা, শাহনাজ (১৯৫২-২০১৯) বাংলাদেশের সংগীতজগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ১৯৫২ সালের ২রা জানুয়ারি ঢাকায় এক সংস্কৃতিমনা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম আয়েষা হক এবং পিতার নাম ফজলুল হক। ছোটবেলা হতেই তিনি মায়ের তত্ত্বাবধানে সংগীত চর্চা শুরু করেন। তিনি ‘শাহেনশাহ-এ-গজল’ খ্যাত মেহেদী হাসান খান, ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ, ওস্তাদ মুনীর হোসেন, শহীদ আলতাফ মাহমুদ প্রমুখ বরেণ্য শিল্পীর নিকট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বড় দু’ভাই সংগীতশিল্পী আনোয়ার পারভেজ এবং জনপ্রিয় গায়ক ও নায়ক জাফর ইকবালের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ষাটের দশকে মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি রেডিও-তে গান পরিবেশনের মাধ্যমে তাঁর সংগীত জীবন শুরু করেন। ১১ বছর বয়সে ‘নতুন সুর’ সিনেমার মাধ্যমে প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালে তিনি টেলিভিশনে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন। শাহনাজ রহমতউল্লা অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গানের পাশাপাশি বেশ কিছু উর্দু গানও গেয়েছেন। ‘সোহনি ধারতি আল্লাহ্ রাখে’ ও ‘জিভে জিভে পাকিস্তান’ সে সময় পাকিস্তানে দেশাত্মবোধক গান হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে তাঁর গাওয়া অনেকগুলো গানের মধ্যে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি সকল বাঙালির মনে চির ভাস্কর হয়ে থাকবে।
দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭৩ সালে বিখ্যাত পরিচালক খান আতাউর রহমানের ‘আবার তোরা মানুষ হ’ সিনেমায় গাওয়া তাঁর ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’ গানটি এদেশের সংগীত ভুবনে অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশাত্মবোধক গান হিসেবে বিবেচিত। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গান হলো: ‘একবার যেতে দেনা আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘যে ছিলো দৃষ্টির সীমানায়’, ‘এক তারা তুই দেশের কথা’, ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে’, ‘সাগরের তীর থেকে’ ইত্যাদি। সংগীতজগতে অসামান্য অবদানের জন্য শাহনাজ রহমতউল্লা ১৯৯২ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এছাড়াও, ১৯৯০ সালে ‘ছুটির ফাঁদে’ সিনেমায় প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে তিনি ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ অর্জন করেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী পদক এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লার ৪টি গানের অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর গাওয়া চারটি দেশাত্মবোধক গান বিবিসি’র বিবেচনায় সর্ককালের সেরা ২০টি বাংলা গানের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। গান চারটি হলো ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একবার যেতে দেনা আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে আমায় বল’।
শাহনাজ রহমতুল্লাহ ১৯৭৩ সালে আবুল বাশার রহমতুল্লাহর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কন্যা নাহিদ রহমতুল্লাহ এবং পুত্র এ.কে.এম সায়েফ রহমতুল্লাহ।
দীর্ঘ সংগীতজীবন শেষে ২০১৯ সালে ২৩ মার্চ এই বরেণ্য ও নন্দিত শিল্পী ৬৭ বছর বয়সে ঢাকায় বারিধারায় নিজ বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। [শাহনাজ নাসরীন ইলা]