দেবীগঞ্জ উপজেলা

Banglapedia admin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৪:৫৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

দেবীগঞ্জ উপজেলা (পঞ্চগড় জেলা)  আয়তন: ৩০৯.০২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৬°০০´ থেকে ২৬°১৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৩৯´ থেকে ৮৮°৪৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বোদা ও পঞ্চগড় সদর উপজেলা, দক্ষিণে বীরগঞ্জ, খানসামা এবং নীলফামারী সদর উপজেলা, পূর্বে ডোমার উপজেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও সদর এবং বোদা উপজেলা। ভারতীয় ছিটমহল বেহুলা ডাঙ্গা, বালাপাড়া, কোট ভাজনী ও দহলা খাগড়াবাড়ি উল্লেখযোগ্য।

জনসংখ্যা ২২৪৭০৯; পুরুষ ১১৩১২০, মহিলা ১১১৫৮৯। মুসলিম ১৬৬০৫৩, হিন্দু ৫৭৯৪৪, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ২৬৯ এবং অন্যান্য ৪৪২। এ উপজেলায় সাওঁতাল, ওরাওঁ, রাজবংশী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠির বসবাস রয়েছে।

জলাশয় করতোয়া, আত্রাই ও পাথরিয়া নদী এবং সুন্দরদীঘি উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন দেবীগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯২৮ সালে এবং ১৯৮৩ সালের ২৮ মার্চ থানা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১০ ১০০ ১০১ ১৫৩০১ ২০৯৪০৮ ৭২৭ ৫৭.৬ ৪৭.০
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৮.৭৬ ১৫৩০১ ১৭৪৭ ৫৭.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
চিলাহাটি ১৯ ১২০৯১ ১৩০০৬ ১২৯৬৯ ৫২.৮
হাজরাডাংগা ৫৩ ৬৩১১ ৯২৫৬ ৯২৬৭ ৪৭.৪
টেপ্রীগঞ্জ ৯৫ ৯৯৯১ ১২৩৯৬ ১২২৬৫ ৪৩.৭
দণ্ডপাল ২৮ ৬৬৬৫ ১০১৩৮ ১০১৭৯ ৫৩.৬
দেবীগঞ্জ ৪৭ ৬০৬২ ১৪৬৭০ ১৪১৯৩ ৫২.১
দেবীডোবা ৩৮ ৭৯৩৪ ১১২২২ ১০৯৭৫ ৫০.১
পামুলি ৫৭ ৫২৮০ ৮৩৮৬ ৮২৩৯ ৪৩.২
শালডাংগা ৬৬ ৬৯৬৪ ৯১০৯ ৯১১৩ ৪৩.০
সুন্দরদীঘি ৮৫ ৫৬৪৮ ১০১৭০ ১০০১৬ ৫১.৯
মল্লিকাদহ ৭৬ ৯৪১৫ ১৪৭৬৭ ১৪৩৭৩ ৩৮.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কুচবিহার রাজার কাচারী ও অবকাশ ভবন, জগদ্বন্ধু মন্দির, শালডাংগা মন্দির।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে এ উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে গরিলা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নভেম্বর মাসে ডিয়াগাড়িতে পাকসেনারা ১৮ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৮ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।

বিস্তারিত দেখুন দেবীগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৪৩, মন্দির ২৬, গির্জা ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: সাহেব বাড়ি মসজিদ, ভাইলাগঞ্জ মসজিদ, জগদ্বন্ধু মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৭.৭%; পুরুষ ৫১.১%, মহিলা ৪৪.৩%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: দেবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), সুকাতু প্রধান উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৩), শালডাংগা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪), সোনাহার উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪), টেপ্রীগঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৫), পামুলী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৬), বাগদহ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৭), দেবীগঞ্জ অলদিনী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০), পিড়াফাটা প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৪), বিনয়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), ভাজনী দাখিল মাদ্রাসা (১৯৮২)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  ত্রৈমাসিক:ছায়াপথ ও পূর্ন্যাভা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৩২, লাইব্রেরি ১, সিনেমা হল ৩, খেলার মাঠ ৫০, মহিলা সংগঠন ১।

বিনোদনকেন্দ্র চীন বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু, চন্দ্রিমা উদ্যান, বুরুজের ডাংগা।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৭.৬৯%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১৫%, ব্যবসা ৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৮৭%, চাকরি ৩.০১%, নির্মাণ ০.৫৪%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৭% এবং অন্যান্য ৩.৪৫%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬০.৪৯%, ভূমিহীন ৩৯.৫১%। শহরে ৪২.১৬% এবং গ্রামে ৬১.৬০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আলু, হলুদ, আদা, চিনাবাদাম, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পায়রা, বজরা ও আউশ ধান, কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে, কলা, পেয়ারা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার হাঁস-মুরগি ২৫। এছাড়া এ এলাকায় বেশ কিছু মৎস্য ও গবাদিপশুর খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১১২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৩৬ কিমি; নৌপথ ৩৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প ৮, লৌহশিল্প ৪০, মৃৎশিল্প ১১, তাঁতশিল্প ৪০, সূচিশিল্প ৬০, দারুশিল্প ৩০।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪০, মেলা ১। দেবীগঞ্জ হাট, কালীগঞ্জ হাট, ভাওলাগঞ্জ হাট, শালডাংগা হাট. ধুলাঝারী হাট, ফুলবাড়ী হাট, সোনার হাট, লক্ষ্মীর হাট, মল্লিকাদহ ক্লাবের হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  আলু, চিনাবাদাম, নুড়িপাথর, সিলিকন বালু।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২১.৬০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ নুড়িপাথর, সিলিকন বালু।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৮%, ট্যাপ ০.৫% এবং অন্যান্য ২.৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ৪৫.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৬.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৮.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪, ক্লিনিক ১০, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৪৪ সালের দূর্ভিক্ষে এ উপজেলায় বহু লোক মারা যায় এবং ১৯৬৮ সালের বন্যায় ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও বনজ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, কেয়ার, আশা, প্রশিকা।  [মো. আহসান হাবিব]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দেবীগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।