কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা (কুড়িগ্রাম জেলা) আয়তন: ২৭৬.৪৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৪৫´ থেকে ২৫°৫৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩৪´ থেকে ৮৯°৫০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) ও নাগেশ্বরী উপজেলা, দক্ষিণে উলিপুর উপজেলা, পূর্বে ভারতের আসাম রাজ্য, পশ্চিমে রাজারহাট উপজেলা।
জনসংখ্যা ৩১২৪০৮; পুরুষ ১৫৪৫০০, মহিলা ১৫৭৯০৮। মুসলমান ২৮৯৭৩৩, হিন্দু ২২৪৭৯, বৌদ্ধ ৩৬, খ্রিস্টান ৫৪ এবং অন্যান্য ১০৬।
জলাশয় ব্রহ্মপুত্র নদ ও ধরলা নদী এবং নাগদহ বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন কুড়িগ্রাম সদর থানা গঠিত হয় ১৮৭৪ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৮ | ৭৬ | ২৬৬ | ৮০৮১০ | ২৩১৫৯৮ | ১১৩০ | ৬৪.১১ (২০০১) | ৩৯.৮ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
২৭.৩২ (২০০১) | ৯ | ১০৬ | ৭৭২৫২ | ২৫২৩ (২০০১) | ৬৩.২ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
০.৯৫ (২০০১) | ১ | ৩৫৫৮ | ২৬৬৫ (২০০১) | ৭২.৪ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কাঁঠালবাড়ী ৫৭ | ৫৮৩০ | ১৫৪২৪ | ১৫১৩৫ | ৫০.৩ | ||||
ঘোগাদহ ২৮ | ৬১৫৩ | ১৩৯২০ | ১৪৬২৮ | ৩৭.৯ | ||||
পাঁচগাছি ৮৫ | ৬১২০ | ১৩৫৭০ | ১৪৮৮৬ | ৩৪.৮ | ||||
বেলগাছা ১৭ | ৪২০৯ | ১২৯০৫ | ১৩০৯১ | ৫৭.১ | ||||
ভোগডাঙ্গা ১৯ | ৮৪৩২ | ২২৯১৬ | ২৪২৮০ | ৩৭.৭ | ||||
মোগলবাছা ৭৬ | ৪০৩০ | ৯৮৫০ | ১১১৪৫ | ৪৫.৭ | ||||
যাত্রাপুর ৪৭ | ১৭৫৬২ | ১০৩২৩ | ১০৬৭১ | ২৭.০ | ||||
হোলাখানা ৩৮ | ৮৮৯৪ | ১৬২৩৯ | ১৬১৭৩ | ৩১.৮ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কালীবাড়ি, পাংগা রাজ্যের কামান (বিডিআর গেটে অবস্থিত), কালীরপট (দাসেরহাট) এবং কুড়িগ্রামের প্রাক্তন এসডিও ভবন।
ঐতিহাসিক ঘটনা তেভাগা আন্দোলন, নীল বিদ্রোহ, ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবময় ঘটনাবলি কুড়িগ্রামে ঘটেছে। ধরলা নদীর ভাঙ্গনের ফলে শহরটি বারবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ১৯৫৪ সালের লালপানির ভাঙ্গন স্মরণীয় ঘটনা।
মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শুরুর দিকে (১লা এপ্রিল ১৯৭১) আনসার, ইপিআর, পুলিশ ও ছাত্রজনতার বিরাট সম্মিলিত বাহিনী তিস্তা ব্রিজে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলে, যা ‘তিস্তা ব্রিজ প্রতিরোধ যুদ্ধ’ নামে অভিহিত। এই যুদ্ধে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত, কয়েকজন প্রতিরোধ যোদ্ধাও শহীদ হন। উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা এলাকার টগরাইহাট, কুড়িগ্রাম শহরের পূর্বাশা সিনেমা হল, যাত্রাপুর বাজার, হালাবট রেলপথ, পাঁচগাছি প্রভৃতি স্থানে অপারেশনে এবং খ-যুদ্ধ পরিচালনা করে। উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে (কাঁঠালবাড়ী, জেলখানার গেট, মহির ব্যাপারীর বাড়ির দক্ষিণ পার্শ্বে, এসপি বাংলোর সামনে এবং সফর ডাক্তার-এর বাড়ির পার্শ্বে) গণকবর আছে এবং ঘোষপাড়ায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলক ও কলেজ মোড়ে স্বাধীনতার বিজয় স্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৬.১%; পুরুষ ৫০.৩%, মহিলা ৪২.১%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ (১৯৬১), কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৭৩), কুড়িগ্রাম ভোকেশনাল স্কুল ও কলেজ (১৯৬৫), কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৫), কুড়িগ্রাম রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), খলিলগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬১), খলিলগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৫), কুড়িগ্রাম আলীয়া মাদ্রাসা (১৯৬৭)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: চাওয়া পাওয়া, জাগো বাহে, কুড়িগ্রাম খবর, বাংলার মানুষ; সাপ্তাহিক: গণকথা, বাহের দেশ, কলম জমিন।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, ক্লাব ৪২, মহিলা সমিতি ৪, সিনেমা হল ৩, ডিবেটিং সোসাইটি ১, শিল্পকলা একাডেমী ১, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৮।
বিনোদন কেন্দ্র ধরলা ব্রিজ ও বাঁধ।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৩.৩২%, অকৃষি শ্রমিক ১০.১২%, শিল্প ০.৫৭%, ব্যবসা ১৩.০১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.১৫%, চাকরি ৮.৯৭%, নির্মাণ ১.১৭%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৪% এবং অন্যান্য ৯.২৪%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৭.৯৭%, ভূমিহীন ৫২.০৩%। শহরে ৩১.৪৫% এবং গ্রামে ৫৩.৭৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, ভুট্টা, আলু, গম, সরিষা, বাঁশ, সুপারি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি চীনা, আউশ ধান।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, জাম, পেঁপে, লিচু, কামরাঙা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৩০, হ্যাচারি ২।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকা রাস্তা ৩৯ কিমি, আধা-কাঁচা রাস্তা ১৯ কিমি, কাঁচা রাস্তা ২৯৫ কিমি, রেলপথ ১২ কিমি, নৌপথ ৩৫ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু, মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ি, ভেলা।
শিল্প ও কলকারখানা স্পিনিং মিল।
কুটিরশিল্প পাটশিল্প, মৃৎশিল্প, নকশি কাঁথা, নকশি পাখা, বাশেঁর কাজ।
হাটবাজার, মেলা হাটবাজার ২৪, মেলা ৭। কাঁঠালবাড়ী হাট ও যাত্রাপুর বাজার উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, পাট, আলু, বাঁশ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৩.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৭%, ট্যাপ ৩.৮% এবং অন্যান্য ২.৫%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৮.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৭.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৪.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ক্লিনিক ৪।
এনজিও আশা, কেয়ার, ব্র্যাক, সেভ দ্য চিলড্রেন। [মোঃ কামাল হোসেন]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।