পার্বতীপুর উপজেলা
পার্বতীপুর উপজেলা (দিনাজপুর জেলা) আয়তন: ৩৯৫.০৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°১০´ থেকে ২৫°৪৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৯´ থেকে ৮৯°০৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সৈয়দপুর উপজেলা, দক্ষিণে ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) ও নবাবগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে বদরগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে চিরিরবন্দর উপজেলা।
জনসংখ্যা ৩৬৫১০৩; পুরুষ ১৮৩৭৭২, মহিলা ১৮১৩৩১। মুসলিম ৩১৩৫৩৪, হিন্দু ৪৬০৭৭, বৌদ্ধ ১১০, খ্রিস্টান ২৭৫৩ এবং অন্যান্য ২৬২৯। এ উপজেলায় সাঁওতাল, ওঁরাও, হরিজন প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় চিরনাই, খড়খড়ি, ছোট যমুনা ও নলশীশা নদী এবং পাঁচ রতন বিল, বলাপাড়া বিল ও কাঞ্চন বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৮০০ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১০ | ১৫২ | ২৩০ | ৩৯৯৮৩ | ৩২৫১২০ | ৯২৪ | ৬৩.৩ (২০০১) | ৫২.৭ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার(%) | |||
৯.০৫ (২০০১) | ৯ | ৩৬ | ২৯১৪৩ | ৩০৪০ (২০০১) | ৬৪.৫ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৯.৭২ (২০০১) | ১ | ১০৮৪০ | ৯২২ (২০০১) | ৫৮.২ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
চণ্ডীপুর ১৭ | ৯৬৭৯ | ১৪৯৫৬ | ১৪৬৬৭ | ৪৯.১ | ||||
পলাশবাড়ী ৭৭ | ১১৩৩৪ | ২২৩৯৯ | ২০৭১১ | ৫৮.৪ | ||||
বেলাইচণ্ডি ১৬ | ৯৬১৩ | ২০৬১৪ | ২০৩৮৯ | ৪৬.১ | ||||
মন্মথপুর ৫১ | ৯৬০৩ | ১৬২৭৯ | ১৬৪১৮ | ৫৩.৩ | ||||
মমিনপুর ৬০ | ৭৮৭২ | ১৪২৭৬ | ১৪৪৯২ | ৬২.২ | ||||
মোস্তফাপুর ৬৯ | ৮২৬১ | ১৪১৬১ | ১৩৭৯৯ | ৬৪.২ | ||||
রামপুর ৮৬ | ৭৯৯০ | ১৮৩৬৫ | ১৮৬০৯ | ৫৯.০ | ||||
হরিরামপুর ৪৩ | ১২২২৮ | ১৭২৬৩ | ১৭০০০ | ৩৫.০ | ||||
হাবড়া ২৫ | ৯৪৮৩ | ১৫৩০৮ | ১৫৩৫৭ | ৫৮.৩ | ||||
হামিদপুর ৩৪ | ৯৯০৭ | ১৫৫২২ | ১৫৩৭৫ | ৪৫.৬ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ হাবড়া জমিদার বাড়ি (১৮০০ শতকে নির্মিত), চীনামাটির ছাদবিশিষ্ট মসজিদ (১৯০০ শতকে নির্মিত), সিংগীমারীর ভাঙ্গা মসজিদ।
ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় ভারত থেকে অনেক অবাঙালি মুসলমান পার্বতীপুরে এসে বসতি গড়ে তোলে। পাকিস্তান আমলে এই জনগোষ্ঠী আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়।
মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানকার উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী পাকসেনাদের সাথে মিলিত হয়ে অনেক বাঙালি হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল খোলাহাটি ও বদরগঞ্জ রেল লাইনের দক্ষিণে রামকৃষ্ণপুর, বাগবাড় ও পেয়াদাপাড়ায় পাকসেনারা ৩০০ লোককে হত্যা করে এবং ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা খোলাহাটি রেলস্টেশনের পাশে করতোয়া নদীর উপর রেলব্রিজ অপারেশন, ভবানীপুর রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশে শাহগ্রাম রেলব্রিজ অপারেশনে এবং হাবড়া, দেউল, মধ্যপাড়া, রামপুর প্রভৃতি স্থানে ছোট ছোট অপারেশন পরিচালনা করে। উপজেলার রহমতনগরে ১টি গণকবর রয়েছে, তিনজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ইব্রাহিম নগর, আব্বাস নগর ও মোজাফফর নগরের নামকরণ করা হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন পার্বতীপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৩.৯%; পুরুষ ৫৬.৫%, মহিলা ৫১.২%। কলেজ ১১, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনিষ্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৫, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১১, মাদ্রাসা ৩৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পার্বতীপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৪), জ্ঞানাঙ্কুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), হাবড়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), নুরুলহুদা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫১), মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৪২), জুড়াই ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৫২), ভবানীপুর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৯৭২)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: মানব বার্তা; সাপ্তাহিক: দিনাজপুরের কাগজ।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৩২, মহিলা সংগঠন ১, নাট্যমঞ্চ ২, নাট্যদল ৭, সার্কাস দল ১।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৪.০৯%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৫২%, শিল্প ০.৭১%, ব্যবসা ১৪.৫৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.০৯%, চাকরি ৮.৪০%, নির্মাণ ০.৮৪%, ধর্মীয় সেবা ০.১৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৪% এবং অন্যান্য ৪.৪৮%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৭.৩৮%, ভূমিহীন ৫২.৬২%। শহরে ৪২.৫৯% এবং গ্রামে ৪৭.৯৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, আলু, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, কাউন, তিসি, পান।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, লিচু, কলা, কাঁঠাল, জাম, পেঁপে।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৩০, হাঁস-মুরগি ৪০।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬৭৫ কিমি; রেলপথ ৮৫ কিমি। রেলওয়ে জংশন ১।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, রাইস মিল, আইস ফ্যাক্টরী, রেলওয়ে ওয়ার্কশপ।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৭, মেলা ৪। পার্বতীপুর হাট, দাগলাগঞ্জ হাট, ভবানীপুর হাট, জমির হাট, ডাংগার হাট ও আমবাড়ি হাট এবং তাজনগর চড়ক মেলা ও বড়পুকুরিয়া মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য লিচু, কলা, জাম, ধান, চাল, গম।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচীর আওতাধীন। তবে ৩৮.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ এ উপজেলায় ১৯৮৫ সালে হামিদপুর ইউনিয়নে বড়পুকুরিয়া গ্রামে কয়লার খনি ও ১৯৬৬-৬৭ সালে মধ্যপাড়ায় কঠিন শিলা খনির সন্ধান পাওয়া গেছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.১%, ট্যাপ ১.৭% এবং অন্যান্য ২.২%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলায় ৩৭.৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩০.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩২.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, সরকারি রেলওয়ে হাসপাতাল ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৯, স্যাটেলাইট ক্লিনিক ৩।
এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, কারিতাস, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ। [আনসার আলী সরকার]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পার্বতীপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।