মাগুরা সদর উপজেলা
মাগুরা সদর উপজেলা (মাগুরা জেলা) আয়তন: ৪০১.৫৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১৭´ থেকে ২৩°৩৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৭´ থেকে ৮৯°৩২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে শ্রীপুর (মাগুরা) ও শৈলকূপা উপজেলা, দক্ষিণে শালিখা উপজেলা, পূর্বে মোহাম্মদপুর (মাগুরা) ও মধুখালী উপজেলা, পশ্চিমে ঝিনাইদহ সদর ও শালিখা উপজেলা।
জনসংখ্যা ৩৮০১০৭; পুরুষ ১৮৯১১৩, মহিলা ১৯০৯৯৪। মুসলিম ৩১২৮৩৫, হিন্দু ৬৬৮৬২, বৌদ্ধ ৬, খ্রিস্টান ৩০৬ এবং অন্যান্য ৯৮।
জলাশয় প্রধান নদী: গড়াই, নবগঙ্গা, মুচিখালী, কুমার, ফটকি। দরিয়াপুর খাল, আলমখালী খাল এবং তারাখাল বিল, সিরিজদিয়া বিল, বাওরি বিল, রাউয়া বিল, পদ্মা বিল, কুমার বিল, কাশিয়াডাঙ্গা বিল, গাজর গাড়িয়া বিল ও হাটুডা বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন ১৯৮৩ সালে মাগুরা থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১৩ | ২০০ | ২৪১ | ৯৮৩৫৫ | ২৮১৭৫২ | ৯৪৭ | ৬৬.০ | ৪৭.৫ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
৪৩.৯২ | ৯ | ৬১ | ৯৮৩৫৫ | ২২৩৯ | ৬৬.০ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আঠারখাদা ২১ | ৮০৫০ | ১১০৯৯ | ১১১৩৩ | ৫১.২ | ||||
কাসুন্দি ৬১ | ৩০৩০ | ৪৬৬০ | ৪৬৩৭ | ৫৪.৭ | ||||
কুচিয়ামোড়া ৬৭ | ৮৮৩১ | ১৩৬৩০ | ১৩৭৪২ | ৪৩.৬ | ||||
গোপাল গ্রাম ৩৩ | ৩৮৪১ | ৬৩৫০ | ৬৫৩৫ | ৪৩.০ | ||||
চাউলিয়া ২৭ | ৬৭৭২ | ১২৫৭১ | ১২৮৯৬ | ৪৬.২ | ||||
জগদল ৫৪ | ৭৭৪৩ | ১২২৪২ | ১২২৭৭ | ৪১.৮ | ||||
বাগিয়া ২৫ | ৩৯৫১ | ৮৫৬৪ | ৮৬৫৬ | ৫৪.৯ | ||||
বিরইল পলিতা ২৩ | ৬৮২১ | ৯৯২৩ | ১০২৬৩ | ৪৮.৪ | ||||
মাঘি ৭৪ | ৯১৮৫ | ১৪৯২৯ | ১৫১৩৬ | ৪২.৩ | ||||
রাঘব দাইড় ৮৮ | ৯৭৩৮ | ১৩৫৯৮ | ১৩৭৩৬ | ৪৬.৬ | ||||
শত্র“জিৎপুর ৯৪ | ৪৪৯১ | ৯৪৪৫ | ৯৪৫১ | ৪৬.৯ | ||||
হাজরাপুর ৪৭ | ৫৭৯৩ | ১০৬৬৮ | ১০৬০২ | ৫০.০ | ||||
হাজিপুর ৪০ | ১০১৩৬ | ১২৩৬৯ | ১২৬৪০ | ৫৪.৮ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ নীলকুঠি (ইছাখাদা), বেপারীপাড়া জামে মসজিদ (পারনান্দুয়ালী), পীর মোকারম আলীর মাযার (হাজীপুর), সিদ্ধেশ্বরী মঠ (দরিমাগুরা), রাধানগরের মঠ (রামনগর)।
মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলা ৮ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। এসময় এ এলাকায় পাকবাহিনী ব্যাপক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যা সংঘটিত করে। মাগুরায় মুক্তিযোদ্ধারা ২৬ সেপ্টেম্বর ইছাখাদা রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে, পরদিন আনসার অফিস রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালায়। উপজেলায় বিশ্বরোড সংলগ্ন স্থানে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন মাগুরা সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৫০, মন্দির ৫৫, গির্জা ১, মাযার ২, তীর্থস্থান ৩। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মাগুরা জামে মসজিদ, বেপারীপাড়া জামে মসজিদ (পারনান্দুয়ালী), কালীবাড়ি মন্দির, পীর মোকারম আলীর মাযার (হাজীপুর), নেংটা বাবার আশ্রম (সাতদোহা), হাজরাতলা মঠ ও মিশন, সিদ্ধেশ্বরী মঠ (দরিমাগুরা), রাধানগরের মঠ (রামনগর)।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫২.৪%; পুরুষ ৫৪.৭%, মহিলা ৫০.২%। কলেজ ৫, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪৭, মাদ্রাসা ২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ (১৯৪০), মাগুরা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয় (১৮৫৪), হাজীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৪), শত্রুজিৎপুর কালীপ্রসন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৯)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: খেদমত; সাপ্তাহিক: মাগুরা বার্তা, গ্রামীণ বাংলা, গণসংবাদ, অঙ্গীকার; মাসিক: নবগংগা।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ৯০, নাট্যদল ৪, যাত্রাপার্টি ২, সাহিত্য সংগঠন ২, মহিলা সংগঠন ৩, শিল্পকলা একাডেমি ১, সিনেমা হল ২।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬০.৫২%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৩৭%, শিল্প ০.৯৬%, ব্যবসা ১৩.৯৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.০৩%, চাকরি ৯.০২%, নির্মাণ ১.৮১%, ধর্মীয় সেবা ০.১৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৫% এবং অন্যান্য ৫.৭৩%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬১.৬৪%, ভূমিহীন ৩৮.৩৬%। শহরে ৪৩.৩% এবং গ্রামে ৬৮.৩১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, সরিষা, ছোলা, মসুরি, আখ, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি মিষ্টি আলু, কাউন, অড়হর।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, কলা, পেঁপে, বেল, পেয়ারা, ফুটি, তরমুজ।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৬২, হাঁস-মুরগি ২৮, হ্যাচারি ৭।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৪৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৭৮ কিমি; নৌপথ ৫ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও মহিষের গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ, প্লাস্টিক পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজ, লেদ ইন্ডাস্ট্রিজ, বিড়িফ্যাক্টরি, আইস ফ্যাক্টরি, সাবান কারখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৫, মেলা ১০। মাগুরা একতা কাঁচা বাজার হাট, শত্রুজিৎপুর হাট, ইছাখাদা হাট, আলোকদিয়া হাট, কাটাখালী হাট এবং রথখোলা মেলা, কাত্যায়নী মেলা ও বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পাট, সুতা, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৫.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.৭%, ট্যাপ ২.৮% এবং অন্যান্য ২.৫%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭১.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৫.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র জেলা সদর হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, শিশু হাসপাতাল ১, চক্ষু হাসপাতাল ১, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ১, মাতৃসদন হাসপাতাল ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৩, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৭।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৫৮৫, ১৬৬৮, ১৮৬৮, ১৮৬৯ ও ১৯০৯ সালের ঝড়ে এ উপজেলার অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, সেবা। [রঞ্জিত কুমার বসু]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মাগুরা সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।