ক্ষমতা হস্তান্তর, ১৯৪২-৪৭
ক্ষমতা হস্তান্তর, ১৯৪২-৪৭ ব্রিটেন ও ভারতের মধ্যকার সাংবিধানিক সম্পর্কের একটি দালিলিক সংগ্রহ। এ প্রামাণ্য দলিলপত্রাদি ১২টি খন্ডের একটি সিরিজে ইন্ডিয়া অফিস নথিপত্র থেকে নির্বাচন করা হয় যা ১ জানুয়ারি ১৯৪২ সাল থেকে ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সাল সময় পর্যন্ত বিস্তৃত। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন হাউস অব কমন্সে যে ঘোষণা দেন সে অনুযায়ী ১৯৬৭ সালের জুন মাসে এ খন্ডসমূহ সংকলনের কাজ শুরু হয়। ১৯৭০ থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে ব্রিটিশ সরকারের লন্ডনস্থ স্টেশনারি অফিস কর্তৃক এ বিশাল খন্ডসমূহ প্রকাশিত হয়। খন্ডসমূহ সম্পাদনা করেন ক্যামব্রিজের ব্রিটিশ কমনওয়েলথ ইতিহাসের অধ্যাপক পি.এন.এস মানসারগ্ এবং সহকারী সম্পাদক ছিলেন ই.ডব্লিউ.আর লাম্বি।
এ সকল প্রামাণ্য দলিলপত্র কালানুক্রমিকভাবে কিন্তু বিষয়বস্ত্ত অনুসারে সাজানো হয়েছে। উপ-শিরোনাম ও খন্ডসমূহের প্রকাশনার তারিখসমূহ হলো খন্ড-১, ক্রিপস্ মিশন, জানুয়ারি-এপ্রিল ১৯৪২ (১৯৭০); খন্ড-২, ‘ভারত ছাড়’, ৩০ এপ্রিল-২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৪২ (১৯৭১); খন্ড-৩, কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা, গান্ধীর অনশন ও নতুন ভাইসরয়ের ক্ষমতা গ্রহণ, ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৪২ - ১২ জুন ১৯৪৩ (১৯৭১); খন্ড-৪, বাংলার দুর্ভিক্ষ ও নতুন ভাইসরয়ের শাসনকাল, ১৫ জুন ১৯৪৩ - ৩১ আগস্ট ১৯৪৪ (১৯৭৩), খন্ড-৫, সিমলা সম্মেলন: পটভূমি এবং কার্যবিবরণী, ১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৪ - ২৮ জুলাই ১৯৪৫(১৯৭৫); খন্ড-৬, যুদ্ধোত্তর যুগ: শ্রমিক সরকারের নতুন প্রচেষ্টা, ১ আগস্ট ১৯৪৫ - ২২ মার্চ ১৯৪৬ (১৯৭৬); খন্ড-৭,ক্যাবিনেট মিশন, ২৩ মার্চ-২০ জুন ১৯৪৬ (১৯৭৭); খন্ড-৮, অন্তবর্তীকালীন সরকার, ৩ জুলাই-১ নভেম্বর ১৯৪৬ (১৯৭৯); খন্ড-৯, সময়সীমা নির্ধারণ, ৪ নভেম্বর ১৯৪৬-২২ মার্চ ১৯৪৭ (১৯৮০); খন্ড-১০, মাউন্টব্যাটেনের রাজপ্রতিনিধিত্বঃ একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন, ২২ মার্চ-৩০ মে ১৯৪৭ (১৯৮১); খন্ড-১১, মাউন্টব্যাটেনের রাজপ্রতিনিধিত্বঃ ৩ জুন পরিকল্পনা ঘোষণা ও গ্রহণ, ৩১ মে - ৭ জুলাই ১৯৪৭ (১৯৮২)। ১২ তম খন্ডে পুরো সিরিজ সম্পর্কিত সম্পূরক প্রামাণ্য দলিল, ভ্রম ও শুদ্ধিপত্র সংযোজন করা হয়েছে। ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে অথবা কিছু আদান প্রদান নথিভুক্ত করার বিষয়ে পাদটীকা, একটি সংযোজনী এবং তিনটি অতিরিক্ত প্রামাণ্য দলিল যুক্ত হয়েছে।
সিরিজে অন্তর্ভুক্ত বেশির ভাগ প্রামাণ্য দলিলপত্রাদি হয় ইন্ডিয়া অফিস নথিপত্রের সরকারি মহাফেজখানা থেকে অথবা ইন্ডিয়া অফিস গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত ভাইসরয়ের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে গৃহীত হয়েছে। এ ধরনের প্রামাণ্য দলিলপত্রাদির প্রধান শ্রেণিসমূহ ছিল যেমন গভর্নরের প্রতিবেদন ও ভাইসরয়ের সঙ্গে তাঁর চিঠিপত্র আদান-প্রদান, ভাইসরয় ও ভারত সচিবের মধ্যে তারর্বাতা আদান-প্রদান এবং তাঁদের মধ্যে সাপ্তাহিক চিঠিপত্র বিনিময়, যার মধ্যে বেশির ভাগই ছিল বেসরকারি যোগাযোগ, কর্মকর্তা ও ভারত সচিবের দাপ্তরিক মন্তব্য এবং ভারতের উপর যুদ্ধকালীন কেবিনেট কমিটির সভাসমূহের কার্যবিবরণী। কমিটির কাছে দাখিলকৃত বা যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার কাছে প্রচারিত প্রামাণ্য কাগজপত্রাদি অথবা স্মারকসমূহ যাতে রয়েছে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার প্রাসঙ্গিক সিদ্ধান্তসমূহ। এর সঙ্গে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কিছু বিশেষ প্রামাণ্য কাগজপত্র যেগুলি অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ভারতীয় নীতির ওপর ডোমিনিয়নসমূহ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রধানদের মতামত বিনিময় নথিভুত্তু হয়েছে। মোটের ওপর খন্ডসমূহে যে প্রামাণ্যকরণ হয়েছে তাতে রয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সাম্রাজ্যবাদের কুটিল বিষয়াদি যা দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছে। খন্ডসমূহে সন্নিবেশিত এসকল প্রামাণ্য দলিলপত্র মূল্যবান মূল উপাদান গঠন করেছে। গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের অন্তর্ভুক্তি, প্রধান প্রধান ঘটনার কালানুক্রমিক সারণি, সংক্ষিপ্ত প্রামাণ্য-দলিলপত্রাদি, টীকাপুঞ্জ এবং ব্যক্তিবর্গের জন্য নির্ঘন্ট ও বিষয়সমূহ এ খন্ডগুলির প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি করেছে।
তবে এ সিরিজের বেশির ভাগ প্রামাণ্য দলিল বাংলার রাজনৈতিক গতিধারার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হলেও চতুর্থ খন্ডটি ১৯৪৩ - ১৯৪৪ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষ নিয়ে সংকলিত হয়েছে। বিশেষ করে এর দ্বারা অন্ততপক্ষে আংশিকভাবে হলেও সাম্প্রতিক ইতিহাসে বাংলায় যে মহা-বিয়োগান্তক মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে সে সম্পর্কে ধারণা করা যায়। সিরিজের অন্যান্য খন্ডসমূহের মতো এটি রাজনীতি ও সাংবিধানিক কোনো প্রামাণ্য দলিল অন্তর্ভুক্ত করেনি বরং খাদ্য অথবা সংক্ষেপে খাদ্যের অভাব ও এর কারণে আর্থ-সামাজিক দুরবস্থা প্রামাণ্যকরণ করেছে। এটা প্রতিভাত হয় যে, বাংলার গভর্নর এবং ভাইসরয় দুজনেই বাংলার খাদ্য সরবরাহের সঙ্গীন পরিস্থিতির চিত্র বার বার নথিভুক্ত করা সত্ত্বেও যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা এর দ্বারা পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে নি এবং সময়োপযোগী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি। উল্লেখ্য যে, এ খন্ডে সংকলিত বাংলার খাদ্য সংকট সম্পর্কিত প্রামাণ্য দলিল পত্রাদির অতিরিক্ত মহামূল্যবান প্রচুর উপাদান ইন্ডিয়া অফিস নথিপত্রে বিদ্যমান আছে। [এনায়েতুর রহিম]