ঝিনাইগাতী উপজেলা
ঝিনাইগাতী উপজেলা (শেরপুর জেলা) আয়তন: ২৪২.০৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°০৪´ থেকে ২৫°১৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৮´ থেকে ৯০°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে শেরপুর সদর ও শ্রীবর্দি উপজেলা, পূর্বে নালিতাবাড়ী উপজেলা, পশ্চিমে শ্রীবর্দি উপজেলা।
জনসংখ্যা ১৬০৪৫২; পুরুষ ৭৯৫৪৮, মহিলা ৮০৯০৪। মুসলিম ১৫১৫৩৯, হিন্দু ৫৫৩৭, খ্রিস্টান ৩১০৪ এবং অন্যান্য ২৭২।
জলাশয় প্রধান নদী: সোমেশ্বরী, চিলাখালী ও মালিশি। এছাড়া সোনাইকরা বিল, ঢোলী বিল, পলকা বিল, বান্ধাপোল বিল, বাইদাধাঙ্গা বিল, রুরলী বিল ও গুর খাল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন ঝিনাইগাতী থানা গঠিত হয় ১৯৭৫ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৭ | ৭৫ | ১১৭ | ৫৭৩০ | ১৫৪৭২২ | ৬৬৩ | ৬৫.৩ | ৩৭.৭ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
১.৭৪ | ২ | ৫৭৩০ | ৩২৯৩ | ৬৫.৩ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কাংশা ৪৩ | ১৩৩৩২ | ১২৫১৬ | ১২৪৬৬ | ৩৯.৬ | ||||
গৌরীপুর ১৫ | ৫৫৯৬ | ৭৭১৭ | ৭৮৩৪ | ৩৪.১ | ||||
ঝিনাইগাতী ২৫ | ৭৯৩৬ | ১৬২৪৮ | ১৬৪৭১ | ৪৩.৫ | ||||
ধানশাইল ১২ | ৭০৯২ | ১০৭৫৬ | ১০৯২৬ | ৩৭.০ | ||||
নলকুড়া ৬০ | ৯১০৭ | ১৩০৫৬ | ১৩৫০৮ | ৪০.০ | ||||
মালিঝিকান্দা ৫০ | ৪৮৬৮ | ১১৩২৪ | ১১৫৬৮ | ৩৫.০ | ||||
হাতীবান্ধা ১৭ | ৩৫২১ | ৭৯৩১ | ৮১৩১ | ৩৭.৮ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
মুক্তিযুদ্ধ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা ঝিনাইগাতী থানার নকশি বিওপি, কাটাখালি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা ও অন্যান্য কয়েকটি স্থানে পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ পরিচালনা করেন। নকশি যুদ্ধে ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন, ৩৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। উপজেলার জুলগাঁওতে ১টি বধ্যভূমি রয়েছে; মেঘালয় সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে গজনীতে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ১টি স্মৃতিফলক নির্মিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন ঝিনাইগাতী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৫৩, মাযার ১, মন্দির ৩৮, গির্জা ১১। খানবাড়ি মসজিদ ও তামাগাঁও মাযার উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৮.৭%; পুরুষ ৪১.২%, মহিলা ৩৬.৩%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: আলহাজ্ব শফিউদ্দিন আহাম্মদ কলেজ (১৯৮৬), ডাঃ সেরাজুল হক টেকনিক্যাল অ্যান্ড কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট (২০০১), তিনানী আদর্শ কলেজ (১৯৮৬), ঝিনাইগাতী মহিলা আদর্শ মহাবিদ্যালয় (২০০২), মালিঝিকান্দা হাই স্কুল (১৯৪৮), আহাম্মদ নগর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬০), ঝিনাইগাতী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬১), দীঘিরপাড় আলিম মাদ্রাসা (১৯৬২)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ২২, সিনেমা হল ২, স্টেডিয়াম ১, প্রেসক্লাব ১, খেলার মাঠ ৮।
দর্শনীয় স্থান গজনী অবকাশ কেন্দ্র, সন্ধ্যাকুড় রাবার বাগান, মরিয়ম নগর মিশন, আয়নাপুর রাবার ড্যাম।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭০.১৮%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৫৭%, শিল্প ০.৬৯%, ব্যবসা ৯.৭২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.০৯%, চাকরি ৩.১৩%, নির্মাণ ০.৪৩%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৮% এবং অন্যান্য ৮.৮৪%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৫.৪৩%, ভূমিহীন ৪৪.৫৭%। শহরে ৩৭.৭১% এবং গ্রামে ৫৬.০২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, ডাল, অড়হর।
প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, কলা, পেঁপে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮০ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৯৯ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, তেলকল, ওয়েল্ডিং কারখানা, স’ মিল, বরফকল।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লোহার কাজ, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ, সেলাই কাজ।
হাটবাজার ও মেলা ঝিনাইগাতী হাট, ধানশাইল হাট ও তিনআনী হাট উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, চাল, কলা, শাকসবজি, পাথর, বালি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৩.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৭.৩%, ট্যাপ ০.৫% এবং অন্যান্য ১২.২%। এ উপজেলার ৬৫% অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫০.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৯.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৯.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৪, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭৪ সালে বসন্ত রোগে এ উপজেলায় অনেক মানুষ প্রাণ হারায়। এছাড়া ১৯৮৮ সালের বন্যায় উপজেলার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, কারিতাস, প্রশিকা, ওয়ার্ল্ড ভিশন, এসডিএস।
[সৈয়দ মারুফুজ্জামান]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ঝিনাইগাতী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।