আসগর, মোহাম্মদ আলী
আসগর, মোহাম্মদ আলী (১৯৩৯-২০২০) বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, বিজ্ঞান বিষয়ক কথাসাহিত্যিক এবং সংগঠক। ড. মোহাম্মদ আলী আসগর ১৯৩৯ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে স্নাতক (বি.এস.সি) এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর (এম.এস.সি) ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সলিড স্টেট ফিজিক্সে পিএইচ.ডি লাভ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে ইংল্যান্ডে কমনওয়েলথ স্টাফ ফেলোশিপ লাভ করেন এবং ১৯৮২ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক গবেষণা সম্পন্ন করেন। এছাড়াও, তিনি ইতালির ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স (ICTP) এবং সুইডেনে উপসালা ইউনিভার্সিটিতে ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম ইন দ্য ফিজিক্যাল সায়েন্সেস (IPPS)-এ রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন।
প্রফেসর আসগর ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বুয়েট)-এ যোগদান করেন। পরবর্তীতে, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধান, প্রকৌশল অনুষদের ডিন এবং সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অত্যন্ত সম্মানজনক ‘বুয়েট প্রফেসর রশিদ চেয়ার’ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এছাড়াও, অধ্যাপক আলী আসগর গণবিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ছিলেন।
আইপিপিএস, সুইডেনের উপসালা ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় ড. আসগর বুয়েটের পদার্থবিদ্যা বিভাগে একটি আধুনিক চৌম্বক পরীক্ষাগার তৈরি করেন এবং চৌম্বক ধাতু, ফেরাইট, চৌম্বকীয় পাতলা ফিল্ম, নিরাকার চৌম্বক পদার্থ, এবং ন্যানো স্ট্রাকচার্ড উপকরণ প্রস্তুত করার জন্য ঢাকা মেটেরিয়াল সায়েন্স গ্রুপ গঠন করেন। তিনি পারমাণবিক শক্তি কমিশনের সাথে যৌথভাবে একটি এক্সপেরিমেন্টাল ফ্যাসিলিটি তৈরি করেন। সেখানে গবেষণার বিষয় ছিল- কো-অপারেটিভ ম্যাগনেটিজমের প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারী অভ্যন্তরীণ চৌম্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও কাঠামো-নির্ভর বৈশিষ্ট্য, বিভিন্ন ম্যাগনেটিক মিডিয়াতে প্রযুক্তিগত চুম্বকীয়করণ প্রক্রিয়ার কার্যনীতি, প্রযুক্তিগত যন্ত্রের নতুন নতুন চৌম্বকীয় পার্টস তৈরি করা। অধ্যাপক আলী আসগর পিএইচ.ডি এবং এম.ফিল ডিগ্রির জন্য ত্রিশটিরও বেশি স্নাতকোত্তর থিসিস তত্ত্বাবধান করেছেন।
অধ্যাপক আসগর অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। তার মধ্যে বিজ্ঞানে অবদানের জন্য ‘ডক্টর মনিরুজ্জামান স্বর্ণপদক’, বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার জন্য ‘ডক্টর কুদরত-ই-খুদা স্বর্ণপদক’, বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের জন্য ‘ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন স্বর্ণপদক’, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অবদানের জন্য ‘মার্কেন্টাইল ব্যাংক স্বর্ণপদক’ এবং ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ উল্লেখযোগ্য।
অধ্যাপক আসগরের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে ৮০টিরও অধিক গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও, তিনি বিজ্ঞান, শিক্ষা এবং উন্নয়নের উপর ২৬টি বই লিখেছেন। তিনি জার্নাল অফ ফিজিক্সের প্রধান সম্পাদক; এবং জার্নাল অফ সায়েন্স অ্যান্ড আর্টস-এর সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য ছিলেন। বিজ্ঞান বিষয়কে জনপ্রিয় করার জন্য বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঁচ শতাধিক জনপ্রিয় নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি বিজ্ঞানের উপর শতাধিক টেলিভিশন এবং রেডিও অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। তিনি ‘খেলাঘর’ নামে একটি শিশু সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন।
অধ্যাপক আলী আসগর ছিলেন জাতীয় শিক্ষা কমিটির সদস্য (১৯৯৭) এবং বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা উপ-কমিটির আহ্বায়ক; বাংলাদেশের প্রযুক্তি নীতি সংশোধনের আহ্বায়ক; বাংলাদেশ জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের গভর্নিং বডির সদস্য। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, বাংলাদেশ ফিজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি ও সম্পাদক এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির (২০০৪) ফেলো ছিলেন।
প্রফেসর আলী আসগর ১৬ই জুলাই ২০২০সালে মারা যান। তাঁকে ঢাকার উত্তরা কবরস্থানে দাফন করা হয়। [ইয়ারুল কবরী]