জকিগঞ্জ উপজেলা
জকিগঞ্জ উপজেলা (সিলেট জেলা) আয়তন: ২৬৫.৬৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৫১´ থেকে ২৫°০০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°১৩´ থেকে ৯২°৩০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কানাইঘাট উপজেলা ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য, পূর্ব ও দক্ষিণে ভারতের আসাম রাজ্য, পশ্চিমে বিয়ানীবাজার উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৩৭১৩৭; পুরুষ ১১৭৩৫৪, মহিলা ১১৯৭৮৩। মুসলিম ২১৩৭৮৫, হিন্দু ২৩৩৩৯, খ্রিস্টান ১১, বৌদ্ধ ১ এবং অন্যান্য ১।
জলাশয় প্রধান নদী: সুরমা ও কুশিয়ারা। বালাই হাওড় এবং ধানকুরি, ডুবাইল, সিঙ্গইকুড়ি বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯৪৭ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৯ | ১১৭ | ২৭৮ | ২০৮০৬ | ২১৬৩৩১ | ৮৯৩ | ৪৮.৭৫ (২০০১) | ৪৯.৪ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন(বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
৬.৩৯ (২০০১) | ৯ | ২৫ | ১৬৩৯৮ | ১৬৮৪ (২০০১) | ৫১.৮ |
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গকিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৯.৫৬ (২০০১) | ২ | ৪৪০৮ | ৫৮২ (২০০১) | ৩৯.৭ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কাজলশার ৪৭ | ৮৯৬৯ | ১৩২৭৪ | ১৩৯১০ | ৪৭.২ | ||||
কাশকনকপুর ৩৮ | ৪৫২১ | ৮৬৯২ | ৯৯৩৩ | ৫২.৩ | ||||
খলাছড়া ৫৭ | ৬৮২৩ | ১০৪৮৬ | ১০২৭৩ | ৩৩.৫ | ||||
জকিগঞ্জ ৮৫ | ৩৫২৯ | ৭১৫৫ | ৭৪৪৪ | ৪৪.২ | ||||
বার ঠাকুরি ১৯ | ৬০৮৬ | ১১৭১১ | ১১৫৭৪ | ৫৫.৭ | ||||
বারহাল ১৫ | ১০৯৪২ | ১৬৩১৮ | ১৬৮০৯ | ৫০.৯ | ||||
বিরাশ্রী ২৮ | ৭৪৬৬ | ১২০৮৯ | ১২৪৫২ | ৪১.৫ | ||||
মানিকপুর ৬৬ | ৯৮১৩ | ১৬৪৭৭ | ১৬০৮০ | ৫৫.১ | ||||
সুলতানপুর ৭৬ | ৫৪৬৯ | ১২৯৫৮ | ১৩১০৪ | ৫৫.৭ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ নবাবী মসজিদ (খিলগ্রাম), সাজিদ বাজার মসজিদ, বারঠাকুরির গায়েবী দিঘি (এখান থেকে প্রায় ৪০০ বছরের পুরাতন শিলালিপি উদ্ধার করা হয়েছে যা বর্তমানে জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে)।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে এপ্রিল মাসে পাকবাহিনী জকিগঞ্জে প্রবেশ করে এবং উপজেলায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, লুন্ঠন ও গণহত্যা চালায়। উপজেলায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ২টি উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হলো আটগ্রাম যুদ্ধ এবং জকিগঞ্জ থানা যুদ্ধ। ২১ এপ্রিল জকিগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়। উপজেলার আটগ্রাম বাজার ও কালীগঞ্জ বাজারে ২টি গণকবর রয়েছে; পাবাড়ি গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে জকিগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে ১টি স্মৃতিফলক ও আটগ্রাম যুদ্ধে তিনজন শহীদের কবরের পাশে ১টি স্মৃতিফলক নির্মিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন জকিগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৬৩, মন্দির ৭৩, মাযার ৯।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৯.৪%; পুরুষ ৫১.৯%, মহিলা ৪৭.০%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৭, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১৪, কিন্ডার গার্টেন ৪, মাদ্রাসা ৪৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: গুরুসদয় উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৫৭), বারহাল এহিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৫), ইছামতি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৭), ফুলতলী আলীয়া মাদ্রাসা (১৯২০)।
পত্র-পত্রিকা বাঁশরী (ত্রৈমাসিক); অবলুপ্ত: শিশির।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৮, প্রেসক্লাব ১, লাইব্রেরি ৩, খেলার মাঠ ১০।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৬.০৬%, অকৃষি শ্রমিক ৯.০৬%, শিল্প ০.৭৪%, ব্যবসা ১২.৮৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৬৪%, চাকরি ৫.৮০%, নির্মাণ ১.৮৪%, ধর্মীয় সেবা ১.১৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৬.৯৩% এবং অন্যান্য ১৩.৯০%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫১.৩১%, ভূমিহীন ৪৮.৬৯%। শহরে ৪৪.৪১% এবং গ্রামে ৫১.৯৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, সয়াবিন, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, সরিষা, মিষ্টি আলু।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, সুপারি।
মৎস্য, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার ও হ্যাচারি রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১১৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৩৬ কিমি; নৌপথ ৬০ কিমি। কালভার্ট ৭৫০, ব্রিজ ১৫; বিমানবন্দর ১।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গরু ও ঘোড়ার গাড়ি, পাল্কি।
শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, ওয়েলডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প, কাঠের কাজ, সেলাই কাজ।
হাটবাজার জকিগঞ্জ বাজার, কালীগঞ্জ বাজার ও শাহগলী বাজার উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য সুপারি, মাছ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসুচির আওতাধীন। তবে ৩০.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৪৬.০%, ট্যাপ ১.৭% এবং অন্যান্য ৫২.৩%। এ উপজেলার ১৮.১৯% নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৯.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৮.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ৪, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১০।
এনজিও ব্র্যাক। [মোঃ আব্দুল হাকিম]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; জকিগগঞ্জ উপজেলার মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০১০।