সিরাজ, শাজাহান
সিরাজ, শাজাহান (১৯৪৩-২০২০) বিশিষ্ট ছাত্রনেতা, স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, স্বাধীনতা-উত্তর বিরোধী দল জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় সংসদের ৫ বার নির্বাচিত এম.পি. এবং বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী।
শাহাজান সিরাজ ১৯৪৩ সালের ১লা মার্চ টাঙ্গাইল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল গনি মিয়া ও মাতার নাম রহিমা বেগম। পিতা পেশায় ছিলেন উকিল। টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার গোহাইল বাড়ি গ্রামে তাদের পৈত্রিক নিবাস। শাজাহান সিরাজ টাঙ্গাইল আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি বিন্দু বাসিনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে মেট্রিকুলেশন এবং ১৯৬১ সালে সা’দত কলেজ, করটিয়া থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। একই কলেজ থেকে তিনি বিএসসি ডিগ্রি আর্জন করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি পরীক্ষার্থী থাকাকালীন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
স্কুলের ছাত্র অবস্থায় তিনি রাজনীতি-সচেতন হয়ে ওঠেন। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৬২ সালে শরীফ শিক্ষা কমিশন এবং ১৯৬৪ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনবিরোধী অন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তখন জেনারেল আইয়ুব খানের শাসন চলছিল। ১৯৬৪-৬৭ সাল পর্যন্ত দু’বার তিনি সা’দত কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। ১৯৬৭ সাল থেকে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আসীন হন। ১৯৭০-৭২ সময়ে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬-দফা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মৃক্তিযুদ্ধ শুরুর (১৯৭১) পূর্ব পর্যন্ত সকল আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ ঢাকার পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ‘মুজিব বাহিনী’র সহ-আঞ্চলিক প্রধান ছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তর ছাত্রলীগ থেকে বের হয়ে এসে একটি অংশ কতৃক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ নামে সরকার বিরোধী দল প্রতিষ্ঠালাভ করে (৩১ শে অক্টোবর ১৯৭২), তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। সেনা শাসন আমলে (১৯৭৫-১৯৯০) এক পর্যায়ে জাসদ বিভিন্ন খ-ে বিভক্ত হয়ে পড়লে, ১৯৯৫ সালে তাঁর নেতৃত্বধীন অংশ নিজেদের বিলুপ্ত করে বিএনপি-তে যোগ দেয়।
শাহাজান সিরাজ ১৯৭৯, ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৬ (মধ্য ফেব্রুয়ারি নির্বাচন) ও ২০০১ সালে মোট ৫বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। দু’বার তিনি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। দুরাযোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৪ই জুলাই ২০২০ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ এবং ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তান রেখে যান। [হারুন-অর-রশিদ]
তথ্যসূত্র হারুন-অর-রশিদ (সম্পা.), বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, ৯ম খণ্ড (বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ২০২০)