দোয়ারাবাজার উপজেলা
দোয়ারাবাজার উপজেলা (সুনামগঞ্জ জেলা) আয়তন: ২৬৩.৩৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৫৮´ থেকে ২৫°১১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২৪´ থেকে ৯১°৪৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণ ছাতক উপজেলা, পূর্বে ছাতক ও সিলেট সদর উপজেলা, পশ্চিমে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা।
জনসংখ্যা ২২৮৪৬০; পুরুষ ১১২২৪০, মহিলা ১১৬২২০। মুসলিম ২১৭৭৫৫, হিন্দু ১০৩৫৪, বৌদ্ধ ১১, খ্রিস্টান ২৬৯ এবং অন্যান্য ৭১।
জলাশয় প্রধান নদী: সুরমা, যদুকাটা, বগরা।
প্রশাসন দোয়ারাবাজার থানা গঠিত হয় ১৯৭৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৫ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৯ | ১৬৬ | ৩০৮ | ১৪৭৯৪ | ২১৩৬৬৬ | ৮৬৮ | ২৬.৫ | ৩০.৭ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
১৩.২৬ | ২ | ১৪৭৯৪ | ১১১৬ | ২৬.৫ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
দক্ষিণ দোয়ারাবাজার ২৭ | ৯৮৩৮ | ১১৪০৮ | ১১৩০২ | ২৫.৬ | ||||
দোহালিয়া ৩২ | ৬৫৩৯ | ১২৫০২ | ১৩৩৬৩ | ২৬.১ | ||||
নরসিংপুর ৯২ | ১১৩২১ | ১৫১৪৫ | ১৫৩৭৬ | ২৮.১ | ||||
পাণ্ডারগাঁও ৭৮ | ৭৪৯৪ | ১২৫৮৩ | ১৩০৭৫ | ২৫.৯ | ||||
বাংলা বাজার ৮৬ | ৭৫৩৫ | ১৭৬০৬ | ১৮৩৭৮ | ৩৪.৩ | ||||
বোগলা বাজার | ৪৮১১ | ৮০৪৮ | ৮৪১৬ | ৩৬.৯ | ||||
মান্নারগাঁও ৬৭ | ৮০৯৭ | ১৩৬২৩ | ১৪৪১৭ | ৩২.৬ | ||||
লক্ষ্মীপুর ৬১ | ৭৫৬৪ | ১১৮৯৭ | ১২১০৫ | ৩১.৬ | ||||
সুরমা | ৭১৭৬ | ৯৪২৮ | ৯৭৮৮ | ৩৩.৫ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি দোয়ারাবাজার সংগ্রাম কমিটির নিজস্ব বাহিনী কান্দারগাঁওয়ে পাকসেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। দোয়ারাবাজার থানা মুক্তিযুদ্ধের ৫নং সেক্টরের অধীন ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা হাওর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে সেখান থেকে পাকসেনাদের উপর চোরাগোপ্তা হামলা চালাতেন। পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের শ্রীপুর, টিলাগাঁও এলাকা এবং বেটিরগাঁও-এ পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৩ অক্টোবর দোয়ারাবাজারে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় ধরনের সম্মুখযুদ্ধে ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
বিস্তারিত দেখুন দোয়ারাবাজার উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৯৫, মন্দির ১৫, গির্জা ৪, মাযার ১।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩০.৪%; পুরুষ ৩১.৮%, মহিলা ২৯.০%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বড়খাল বহুমুখী স্কুল ও কলেজ (১৯৭০), সমুজ আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (১৯৮৪), দোয়ারাবাজার কলেজ (১৯৯৩), টেংরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬৫), আমবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৭), ঘিলাছড়া মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলাউড়া দারুসছুন্নাহ ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৭৪)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১০, খেলার মাঠ ২।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭১.১৪%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৮৫%, শিল্প ০.৩২%, ব্যবসা ৮.৪২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১%, চাকরি ২.৫৯%, নির্মাণ ০.৮৩%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৬১% এবং অন্যান্য ৭.৮৮%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৪.৭২%, ভূমিহীন ৪৫.২৮%। শহরে ৪৪.০৭% এবং গ্রামে ৫৫.৪৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ডাল, আলু, আদা, তুলা।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, কাউন, তামাক।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, আনারস, লেবু।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২২৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩০, কাঁচারাস্তা ৮৫ কিমি; নৌপথ ৫০ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।
কুটিরশিল্প বাঁশ ও বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২২, মেলা ৪। দোয়ারাবাজার, লক্ষ্মীপুর বাজার, আমবাড়ী বাজার, টেংরা বাজার, বালিউড়া বাজার, বোগলা বাজার এবং মাছিমপুর ও জালালপুরের মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, মাছ, চুনাপাথর, বনজসম্পদ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৪.১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ চুনাপাথর ও গ্যাস।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৭৭.৬%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ২২.১%। উপজেলার ৯৩৪টি নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৩.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫১.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৪.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৩।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৯১ সালে শিলাঝড়ে গাছ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। ২০০৫ সালে টেংরাটিলায় গ্যাসকূপ পরীক্ষার সময় প্রচন্ড বিস্ফোরণ ঘটলে মাসখানেক আগুন জ্বলে। এতে অন্যান্য সম্পদসহ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার গ্যাস সম্পদ বিনষ্ট হয়।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, কারিতাস। [জয়ন্ত সিংহ রায়]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দোয়ারাজার উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।