সাতক্ষীরা জেলা

Banglapedia admin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৭:২৩, ৩০ মে ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (হালনাগাদ)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

সাতক্ষীরা জেলা (খুলনা বিভাগ)  আয়তন: ৩৮১৭.২৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°৩৬´ থেকে ২২°৫৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫৪´ থেকে ৮৯°২০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে যশোর জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে খুলনা জেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।

জনসংখ্যা ১৯৮৫৯৫৯; পুরুষ ৯৮২৭৭৭, মহিলা ১০০৩১৮২। মুসলিম ১৬২৫৭৮২, হিন্দু ৩৫১৫৫১, বৌদ্ধ ১৮, খ্রিস্টান ৬১৭৮ এবং অন্যান্য ২৪৩০।

জলাশয় প্রধান নদী: যমুনা, কালিন্দী, অর্পণগাছিয়া, মালঞ্চ, কপোতাক্ষ, রায়মঙ্গল, বেত্রবতী (বেতনা), হাড়িয়াভাঙ্গা, ইছামতি। গোপালপুর দিঘি, গোবিন্দপুর দিঘি, ফুলসা দিঘি ও সাগরশাহ দিঘি উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ১৮৬১ সালে যশোর জেলার অধীনে সাতক্ষীরা মহকুমা গঠিত হয়। ১৮৮২ সালে সাতক্ষীরা মহকুমা খুলনা জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮৪ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে সাতক্ষীরা জেলার মর্যাদা লাভ করে। পৌরসভা গঠন করা হয় ১৮৮৯ সালে। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত জেলা। জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে শ্যামনগর উপজেলা সর্ববৃহৎ (১৯৬৮.২৩ বর্গ কিমি) এবং সবচেয়ে ছোট উপজেলা দেবহাটা (১৭৩.২১ বর্গ কিমি)।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
৩৮১৭.২৯ ৭৯ ৯৫৩ ১,৪৪১ ১৯৭৬১৬ ১৭৮৮৩৪৩ ৫২০ ৫২.১
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলার নাম আয়তন (বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
আশাশুনি ৩৭৪.৮১ - ১১ ১৪৩ ২৪১ ২৬৮৭৫৪ ৭১৭ ৪৯.৮
কলারোয়া ২৩১.৪২ ১২ ১১২ ১৩৬ ২৩৭৯৯২ ১০২৮ ৫০.৯
কালীগঞ্জ ৩৩৩.৭৮ - ১২ ২৪৩ ২৫৪ ২৭৪৮৮৯ ৮২৪ ৫১.৮
তালা ৩৩৭.২৪ - ১২ ১৫১ ২২৯ ২৯৯৮২০ ৮৮৯ ৫০.৯
দেবহাটা ১৭৩.২১ - ৫৯ ১২৫ ১২৫৩৫৮ ৭২৪ ৫৩.৬
শ্যামনগর ১৯৬৮.২৩ - ১৩ ১২৬ ২১৮ ৩১৮২৫৪ ১৬২ ৪৮.৬
সাতক্ষীরা সদর ৩৯৮.৫৭ ১৪ ১১৯ ২৩৮ ৪৬০৮৯২ ১১৫৬ ৫৬.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পাকসেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৪-১৭ এপ্রিল সাতক্ষীরা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেজারিতে মজুদ অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিজেদের দখলে নেয়। ২০ এপ্রিল পাকসেনারা এ উপজেলায় প্রবেশের সময় ঝাউডাঙ্গাতে গণহত্যা চালায় এবং ২১ এপ্রিল সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে (পূর্ব নাম সাতক্ষীরা টাউন স্কুল) শরণার্থী শিবিরে ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুই শতাধিক লোককে হত্যা করে। ২৯ এপ্রিল ভোমরায় মুক্তিযোদ্ধা ও পাকসেনাদের মধ্যে সংগঠিত লড়াইয়ে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং বহুসংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়। ৬ মে শ্যামনগরের গাবুরায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৭ জুন দেবহাটা উপজেলার টাউন শ্রীপুর গ্রামে পাকসেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে নাজমুল আরেফিন খোকন ও শামসুজ্জামান খান কাজলসহ ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৭ জুলাই মুক্তিযোদ্ধারা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী ক্যাম্পে আক্রমণ চালিয়ে ৭ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। ১৬ আগস্ট আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া নদীতে পাকবাহিনীর দু’টি গানবোটে আক্রমণের সময় ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৯ সেপ্টেম্বর রাজাকারদের সহায়তায় পাকসেনারা শ্যামনগরের হরিনগর বাজারে অতর্কিতে আক্রমণ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এবং ২৮ জন লোককে হত্যা করে। ১৭ সেপ্টেম্বর আশাশুনি উপজেলার গোয়ালডাঙ্গা গ্রামে রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন রাজাকার নিহত হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর কলারোয়ার হঠাৎগঞ্জ প্রতিরক্ষা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ২৯ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ২০ সেপ্টেম্বর পাকসেনাদের আক্রমণে ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২১ নভেম্বর দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ব্রিজ সংলগ্ন পাকবাহিনীর ঘাঁটিতে আক্রমণকালে ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়া পাকসেনারা নির্বিচারে গুলি করে এ উপজেলার পারুলিয়া সাপমারা খালে প্রায় ৩ শতাধিক ভারতগামী শরনার্থীকে হত্যা করে। সাতক্ষীরা জেলার ২টি স্থানে (দেবহাটা, শ্যামনগর উপজেলার কলারোয়া বাজার) গণকবর এবং ৬টি স্থানে (সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা, সাতক্ষীরা সরকারি স্কুলের পেছনে দীনেশ কর্মকারের বাড়ি ও সংলগ্ন পুকুর, বিনেরপোতা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা, বাঁকাল ও গাঙ্গনী ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা, মাহমুদপুর হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকা (সাতক্ষীরা সদর), হরিনগর ও কাতখালী, শ্যামনগর) বধ্যভূমি রয়েছে; বালিয়াডাঙ্গা, কলারোয়া, গোপালপুর, হরিনগর ও সাতক্ষীরা সদরে ৫টি স্মৃতিস্তম্ভ এবং মুরারীকাঠীতে ১টি স্মৃতিফলক স্থাপিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধে শহীদ সিরাজ, কাজল ও নাজমুলের নামে তিনটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫২.১%; পুরুষ ৫৬.১%, মহিলা ৪৮.২%। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশন ১, কলেজ ৪০, প্রাইমারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৪৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩১১, মাদ্রাসা ১৬৮। উলে­খযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: খান বাহাদুর আহসানউল­াহ কলেজ (১৯৯৫), সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজ, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা ডে-নাইট কলেজ, সাতক্ষীরা সিটি কলেজ, বাবুলিয়া জয়মনি শ্রীনাথ ইনস্টিটিউশন (১৮৮৩), খালিশখালী মাগুরা এসসি কলেজিয়েট ইনস্টিটিউশন (১৮৯৯), ধানদিয়া ইনস্টিটিউশন (১৯১৫), দেবহাটা বিবিএমপি ইনস্টিটিউশন (১৯১৯), সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশন, প্রাণনাথ হাইস্কুল (১৮৬২), তালাবিদে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৮), নকীপুর হরিচরণ উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৯), কুমিরা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় (১৯১৪), বুধহাটা বিবিএম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৫), টাউন শ্রীপুর শরৎচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় (১৯১৬), নলতা হাইস্কুল (১৯১৭), কালীগঞ্জ হাইস্কুল (১৯৩৬), পারুলিয়া এসএস হাইস্কুল (১৯৭৬),  শ্রীউলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৮১), আশাশুনি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১১), বহেরা এটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৭), খালিশখালী শৈব বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৮), ইসলামকাটি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৯), সাতক্ষীরা পিএনপি কলেজিয়েট স্কুল (১৮৪৬), সাতক্ষীরা সরকারি বালক বিদ্যালয়, নবারুন হাইস্কুল, সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬২.৫৬%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৩৩%, শিল্প ১.৫১%, ব্যবসা ১৬.২৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.০৩%, নির্মাণ ১.০১%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, চাকরি ৪.৮৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩৪% এবং অন্যান্য ৫.৯৪%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: কাফেলা, সাতক্ষীরা চিত্র, দৃষ্টিপাত, পত্রদূত; সাপ্তাহিক: দখিনায়ন, সাতক্ষীরা ডাইজেস্ট, যুগের বার্তা, সহযাত্রী, আজকের সাতক্ষীরা; মাসিক: ছড়ার ডাক, প্রগলভ (আশাশুনি); ত্রৈমাসিক: ঈক্ষণ, দখিনের জানালা, সৌম্য, প্রত্যয় (আশাশুনি); সাময়িকী: কালীগঞ্জ বার্তা, গ্রাম বাংলা, সৈকত, সমতট, সূর্যশিখা, পথিকৃৎ, সূর্য তরুণ, অয়ন (নূরনগর, শ্যামনগর), প্রত্যয় (শ্যামনগর); অবলুপ্ত সাময়িকী: মসজিদ (১৯১৭), আনন্দময়ী পত্রিকা (১৯২৬), কোরক (১৯২৬), অনন্য স্বদেশ (১৯৬৫), প্রগতি (১৯৬৬), জোনাকি (হাতে লেখা পত্রিকা, ১৯৬৭), অন্বেষণ (১৯৭৪), কলতান (১৯৭৮)।

লোকসংস্কৃতি জারিগান, পুঁথি পাঠ, রথের মেলা, নৌকা বাইচ ও ঘোড়দৌড় উল্লেখযোগ্য।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান সুন্দরবন (বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল), কোঠাবাড়ি থান দুর্গ (কলারোয়া), সোনাবাড়িয়া মঠ (কলারোয়া), পঞ্চমন্দির (অন্নণপূর্ণা মন্দির, কালীমন্দির, শিবমন্দির, কালভৈরব মন্দির ও রাধা-গোবিন্দ মন্দির), যিশুর গির্জা (শ্যামনগর), জাহাজঘাটা নৌদুর্গ (শ্যামনগর), তেঁতুলিয়া জামে মসজিদ (তালা), ঈশ্বরীপুর হাম্মামখানা ও যশোরেশ্বরী মন্দির (শ্যামনগর), বৈকারি শাহী মসজিদ ও হোজরাখানা, শ্রীউলা জামে মসজিদ ও হযরত শাহ আজিজের (র:) মাযার (আশাশুনি), প্রবাজপুর শাহী মসজিদ (কালীগঞ্জ)। [আমিরুল আশরাফ]

আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সাতক্ষীরা জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; সাতক্ষীরা জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।