প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ
প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ একটি দেশের ব্যক্তি বা কোম্পানি কর্তৃক অন্য কোনো দেশে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ও সেগুলোতে বিনিয়োগ বা সেসব দেশের বিদ্যমান কোম্পানির স্বত্ব ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ দখল। বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনেয়োগে নিয়োজিত কোম্পানিগুলিকে প্রায়শই বহুজাতিক কোম্পানি, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান (উদ্যোগ), আন্তর্দেশীয় কর্পোরেশন ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়। চিরাচরিত অর্থে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ হচ্ছে বাইরের কোন দেশ থেকে স্বাগতিক দেশে প্রকৃত মূলধন রপ্তানি। তবে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ প্রক্রিয়ায় অর্থনৈতিক বিনিয়োগ ঘটলেও, মূলধনের স্থানান্তর নাও ঘটতে পারে। বহুজাতিক কোম্পানি নিজ দেশে মূলধন বিনিয়োগ না করে বরং স্থানীয় মূলধন/পরিসম্পদ অধিগ্রহণ করে বা তৃতীয় কোন দেশ থেকে মূলধন এনে বৈদেশিক বিনিয়োগ ঘটাতে পারে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা বাজার এবং সেই সঙ্গে, স্থানীয় আর্থিক বাজার ও প্রযুক্তির বাজারে নানা অসঙ্গতি বিদ্যমান বলে এখানে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনেক। বহুজাতিক কোম্পানিগুলি কর্তৃক সম্ভাব্য যেকোন দেশে বিনিয়োগের তত্ত্ব প্রয়োগের সুবাদেও বাংলাদেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ঘটার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে বাংলাদেশ নিজে শিল্পোন্নয়ন ও আধুনিক সেবামূলক খাত বিকাশের লক্ষ্যে এখানে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আমন্ত্রণের উদ্যোগকে অব্যাহত রেখেছে। এক্ষেত্রে ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা বা সেবা খাতের যে কোন প্রতিষ্ঠানকেই স্বাগত জানানো হয়। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা দেশে উৎপাদিত পণ্য দেশের ভিতরে বিক্রি অথবা দেশের বাইরে অন্যত্র রপ্তানি করতে পারবে।
বাংলাদেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের নানা ধরনের তথ্য পাওয়ার উৎস হচ্ছে বিনিয়োগ বোর্ড (বর্তমানে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা বাইডা) । বাইডার তথ্য পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের প্রবাহ মোটেই তেমন উৎসাহব্যঞ্জক ছিল না। বিদেশি বিনিয়োগের একটি বড় অংশ নিয়োজিত হয় তৈরি পোশাক খাতের শতকরা একশ ভাগ বিদেশি মালিকানার বা যৌথ উদ্যোগের কারখানাসমূহে। কারখানার সংখ্যা বিচারে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে তৈরি পোশাক এগিয়ে থাকলেও আসলে মূলধনের পরিমাণের বিচারে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি ঘটে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন খাতে। বিদেশি বিনিয়োগের আদিতম খাত হচ্ছে চা বাগান। একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবচেয়ে বেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের নাম কাফকো। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে বিদেশি বিনিয়োগসহ প্রতিষ্ঠান ছিল মাত্র ২২টি, যেগুলির বেশির ভাগ ছিল ঔষধ ও বৈদ্যুতিক পণ্যাদির কারখানা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর নতুন সরকার দেশের মাঝারি ও বৃহৎ সকল শিল্পকারখানা জাতীয়করণের নীতি গ্রহণ করে। ফলে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশে নতুন বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ঘটে নি। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সরকার নতুন নতুন শিল্পনীতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালালেও দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল থাকায় ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের প্রবাহ নিতান্ত সীমিত থেকে যায়। ১৯৭৭ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত বাংলাদেশে নতুন বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের উদ্যোগ প্রতিষ্ঠিত হয় মাত্র ২২০টি। তবে এর পর থেকেই বিদেশি বিনিয়োগসহ প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন দ্রুত বাড়তে থাকে। জুলাই ১৯৯৬ থেকে মে ১৯৯৯ সময়ে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয় ৪২৫টি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাক্কলিত বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮৮.৮ বিলিয়ন টাকা এবং এগুলিতে মোট ৯৪,০০০-এরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান হওয়া সম্ভব। বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে তুলনামূলক অগ্রগতির মূল কারণ বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং সাম্প্রতিককালের তুলনামূলক স্থিতিশীল রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। বর্তমানে যেসব খাতে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বেশি ঘটছে সেগুলির মধ্যে আছে তৈরি পোশাক, বস্ত্রশিল্প, রসায়ন, কাগজ, যন্ত্রপাতি ও খুচরা যন্ত্রাংশ, মুদ্রণ, প্যাকেজিং, প্লাস্টিক সামগ্রী, ধাতব সামগ্রী, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, বৈদ্যুতিক দ্রব্যাদি, ঔষধ শিল্প ইত্যাদি। অতি সম্প্রতি তেল ও গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, সিমেন্ট, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল ও ক্লিনিক ইত্যাদি খাতে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বিশেষভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে। গোড়ার দিকে বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্য ছিল স্বল্প মূলধন ব্যয়ের দ্রুত মুনাফা প্রদানকারী ছোট ও মাঝারি ধরনের বিভিন্ন প্রকল্প। তবে বর্তমানে এই ধারা পরিবর্তিত হয়েছে, এখন বিদেশি বিনিয়োগ আসছে উচ্চ প্রযুক্তির এবং মূলধন নিবিড় প্রকল্পসমূহে, বণ্টিত হচ্ছে প্রচলিত নানা খাত ও উপখাত এবং নতুন নতুন খাতের শিল্পসমূহে। মোট বিদেশি বিনিয়োগের খুব সামান্য অংশই (আনুমানিক ৩%) লগ্নীকৃত হচ্ছে কৃষি, নির্মাণ, মজুত ও যোগাযোগ খাতে। বিনিয়োগ বোর্ডে নিবন্ধিত প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফ.ডি.আই) প্রকল্পের সংখ্যা গত কয়েক বছরে বাড়লেও প্রকৃত এফ.ডি.আই কম, যা ২০০৫ সালে মোট জি.ডি.পি’র মাত্র ১.৩%। ২০০৭-০৮ সালে বিনিয়োগ বোর্ডে প্রস্তাবিত এফ.ডি.আই প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ১৪৩ এবং মূলধনের পরিমাণ ছিল ৫,৪৩৩ মিলিয়ন (৫৪.৩৩ বিলিয়ন) টাকা। ১৯৯৫-৯৬ সালে এই সংখ্যা ১২৭টি এবং মূলধনের পরিমাণ ছিল ৬২৬১ বিলিয়ন।
বিগত বছরগুলিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আসা বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের উৎসের ভৌগোলিক বণ্টনে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। স্বাধীনতার পূর্বে এখানে বিদেশি বিনিয়োগের প্রধান উৎস ছিল যুক্তরাজ্য, উত্তর আমেরিকা ও জাপানের মতো মাত্র কয়েকটি উন্নত অর্থনীতির দেশ। ১৯৭০ দশকের শেষদিকে এদের সঙ্গে সংযুক্ত হয় হংকং, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ভারত। বাংলাদেশে পুঁজি বিনিয়োগে চীন, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসে ১৯৯০-এর দশকে। তবে বাংলাদেশে পুঁজি বিনিয়োগে এখনও শিল্পোন্নত দেশগুলি প্রাধান্য বিস্তার করে আছে এবং তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি হচ্ছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি এবং কানাডা।
সারণি ১-এ ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের প্রধান উৎস দেশসমূহের নাম ও মোট বিনিয়োগে তাদের অংশ বিষয়ে একটি চিত্র উপস্থাপন করা হলো।
সারণি ১ বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের প্রধান দেশসমূহ (২০১৫)
দেশ | মোট বিনিয়োগের অংশ | দেশ | মোট বিনিয়োগের অংশ |
যুক্তরাষ্ট্র | ৩২ | মালয়েশিয়া | ৬ |
যুক্তরাজ্য | ১৭ | ভারত | ৬ |
সিঙ্গাপুর | ১০ | নেদারল্যান্ড | ৫ |
দক্ষিণ কোরিয়া | ৮ | নরওয়ে | ৪ |
হংকং | ৮ | শ্রীলংকা | ৪ |
উৎস বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিনিয়োগ বোর্ড
বাংলাদেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ঘটে মূলত বাইরে থেকে আসা নগদ মূলধন, মূলধনি সামগ্রী তথা আমদানিকৃত যন্ত্রসরঞ্জাম এবং পুনর্বিনিয়োগকৃত মুনাফা- এই তিন ধরনের। বিগত দুই দশকে প্রতিটি ধরনের পরিমাণেই যথেষ্ট হ্রাসবৃদ্ধি ঘটেছে। প্রথম দিকে এই তিন ধরনের বিদেশি মূলধনের অনুপাত ছিল ২৬ : ৪ : ৭০, শেষের দিকে এসে তা দাঁড়ায় ৮ : ২ : ৯০, যার অর্থ বাংলাদেশে নীট মূলধন স্থানান্তর ঘটেছে সামান্যই এবং যন্ত্রসরঞ্জামগত প্রযুক্তি হস্তান্তরের অর্থে বিদেশি বিনিয়োগের অবদান প্রায় নেই বললেই চলে। এ বিবেচনায় বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত ভিত্তি সম্প্রসারণে দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি বিনিয়োগের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব যৎসামান্য। বিদেশি বিনিয়োগ যা ঘটেছে তা হয়ত প্রাথমিক পর্যায়ের প্রযুক্তির কিছুটা সম্প্রসারণ করেছে। ফার্মাসিউটিক্যালস বা এই জাতীয় অন্যান্য শিল্পে প্রযুক্তিভিত্তি সম্প্রসারণের কিছুটা সম্ভাবনা থাকলেও সেখানেও বিদেশি বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ ছিল মূলত বোতলজাতকরণ ও প্যাকেজিং জাতীয় কাজে। ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের চেয়ে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ প্রসাধন সামগ্রী, কীটনাশক ইত্যাদিতে কিছুটা বেশি হওয়ায় অনুমতিপত্র (লাইসেন্সিং), নতুন উৎপাদন পদ্ধতি প্রচলন এবং স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা লোকবলের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বল্পমাত্রায় প্রযুক্তি হস্তান্তর ঘটেছে। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও প্রকৌশল খাতের মতো অন্যান্য খাতে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ব্যবহৃত হয় উৎপাদনের পরিবর্তে, মূলত অ্যাসেমব্লিং-এর জন্য যন্ত্রাংশ আমদানিতে। প্রযুক্তি বাছাই-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে দাতাসংস্থার বিভিন্ন প্রতিনিধি ও বহুজাতিক কোম্পানিসমূহের স্থানীয় এজেন্টদের বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের অধিকাংশ বিনিয়োগ পরিকল্পনাতেই প্রযুক্তিগত দক্ষতার ধারাবাহিক বিকাশ ঘটানোর উপযুক্ত লক্ষ্যভেদী কোন পদ্ধতিগত ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকে না। অথচ পরিকল্পনাতেই গবেষণা, কারিগরি নকশা এবং যন্ত্রসরঞ্জাম ও অবকাঠামোর বিভিন্ন উপাদান স্থানীয়ভাবে নির্মাণের বিধান রেখে সমস্যাটির সমাধান করা যায়।
বাংলাদেশ যেসব মাধ্যমে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ঘটাতে আগ্রহী সেগুলি হচ্ছে যৌথ উদ্যোগে শিল্প স্থাপনা, কারিগরি লাইসেন্সিং, প্রতি-বাণিজ্য, সহ-উৎপাদন চুক্তি, ব্যবস্থাপনা চুক্তি, বিপণন সহায়তা, টার্ন-কি কার্যক্রম ইত্যাদি। বাংলাদেশে ব্রিটেনের কয়েকটি কোম্পানির কারিগরি সহযোগিতায় সিগারেট, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ও ঔষধপত্র উৎপাদিত হচ্ছে। এ জাতীয় সহযোগিতার নজির তৈরি হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া (বৈদ্যুতিক সামগ্রী) এবং থাইল্যান্ডের (রং) সঙ্গেও। বিপণন সহযোগিতার উদাহরণ হচ্ছে চা এবং তৈরি পোশাক শিল্পে স্টার্লিং এলাকার কয়েকটি কোম্পানি। লাইসেন্সিং চুক্তি আছে প্রধানত রাসায়নিক দ্রব্য ও ঔষধ খাতে। তবে সমমূলধনে অংশগ্রহণ ছাড়াই দেশিয় বেশ কয়েকটি কোম্পানি কোন কোন আন্তর্দেশীয় কোম্পানির ব্রান্ড পণ্য উৎপাদনের সুযোগ পেয়েছে।
বাংলাদেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বিনিয়োগযোগ্য তহবিল সৃষ্টিতে এবং উৎপাদন, বাণিজ্য ও সেবা খাতে বিনিয়োগের জন্য স্থানীয় সম্পদ সংগ্রহে সরাসরি ভূমিকা রাখে। বিদেশি বিনিয়োগ ও তার অনুষঙ্গী স্থানীয় বিনিয়োগ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, স্থানীয় কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে, গবেষণা ও উন্নয়নের নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এবং সর্বোপরি, সরকারের জন্য রাজস্ব আয়ের নতুন উৎস সৃষ্টি করে। অবশ্য বাংলাদেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সামান্যই ভূমিকা রেখেছে। দেশের শিল্পখাতে নিয়োজিত মোট শ্রমশক্তির মাত্র ১.৫% এবং শ্রমজীবী সমস্ত জনসংখ্যার মাত্র ০.২% বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানাদিতে নিয়োজিত।
বাংলাদেশ বহুপাক্ষিক বিনিয়োগ গ্যারান্টি সংস্থা (মিগা) এবং বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগ কর্পোরেশন (ওপিআইসি)-এর সনদ স্বাক্ষরকারী সদস্য। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকির বিপরীতে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পান। এসব ঝুঁকির মধ্যে আছে অব্যবসায়িক ঝুঁকি, মুদ্রা স্থানান্তরের ঝুঁকি এবং যুদ্ধ ও বেসামরিক গোলযোগের ঝুঁকি। বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগ (উৎসাহিতকরণ ও প্রতিরক্ষা) আইন ১৯৮০ বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগকে নিশ্চয়তা দেয় যে, এসব বিনিয়োগ জাতীয়করণ করা হবে না, কোনভাবে কেউ জবরদখল করতে পারবে না এবং এ বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মুনাফা ও লভ্যাংশ বিদেশে প্রতিপ্রেরণ করা যাবে। এছাড়া দেশে চালু বিভিন্ন ধরনের বীমা ব্যবস্থাও বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের ঝুঁকি আবরণের পর্যাপ্ত সুবিধা সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের সরকারি শিল্পনীতি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্যে ব্যাপক প্রণোদনা ও উৎসাহমূলক সুবিধার বিধান রেখেছে। এগুলির মধ্যে আছে কর অবকাশ, যন্ত্রসরঞ্জাম আমদানির ওপর রেয়াতি শুল্কহার, মুনাফা বা লভ্যাংশ, বিনিয়োগকৃত মূলধন, মূলধনি লাভ ও বিদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন বিদেশে প্রতিপ্রেরণের অনুমতি এবং এ সকল আয়ের ওপর কর অব্যাহতি, রপ্তানি পণ্যের আস্থাপত্র নিরূপিত মূল্যের ৯০% পর্যন্ত পরিমাণে অর্থসংস্থান। সরকার বৈদেশিক বাণিজ্য উদারীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ট্যারিফ-বহির্ভূত প্রতিবন্ধকতাসমূহ উল্লেখযোগ্যভাবে অপসারণ করেছে। বাংলাদেশে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগকারীরা স্থানীয় মূলধন বাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি এবং বাণিজ্যিক ব্যাংক বা উন্নয়ন অর্থসংস্থানকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণ হিসেবে কার্যচালনা মূলধন সংগ্রহ করতে পারেন। দেশের শেয়ার বাজার থেকেও তারা মূলধন সংগ্রহ করতে পারেন। অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য সরকারিভাবে যেসব রপ্তানি খাত চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলির মধ্যে আছে খেলনা, লাগেজ ও ফ্যাশন সামগ্রী, চর্মদ্রব্য, ডায়মন্ড কাটিং ও পলিশিং, মনোহারি সামগ্রী, রেশমি বস্ত্র, উপহার সামগ্রী, কাট ফ্লাওয়ার ও কৃত্রিম ফুল, সবজি প্রক্রিয়াকরণ এবং প্রকৌশল পরামর্শসেবা। এ সকল খাতের বিকাশের লক্ষ্যে বিশেষ প্রণোদনা ও সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য খুবই উপযোগী ও কার্যকর একটি পদক্ষেপ হচ্ছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) স্থাপন এবং বিদেশি বেসরকারি ইপিজেড প্রতিষ্ঠার অনুমতি দান।
বাংলাদেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের অনুকূল একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ বিদ্যমান। এখানে জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যথেষ্ট স্থিতিশীল। ধর্মীয় রক্ষণশীলতা মোটেই চরম নয় এবং ধর্মীয় বিধিনিষেধ যাও-বা আছে তা বিদেশিদের জন্য আদৌ প্রযোজ্য নয়। দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলির প্রায় সবকটিরই অর্থনৈতিক কর্মসূচি প্রায় একই। সকলেই বস্তুত বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় শরিক হওয়ার লক্ষ্যে উদারীকরণের প্রতি কমবেশি সমান পক্ষপাতি।
তবে বিদেশি বিনিয়োগের অনুকূল সরকারি নীতি ও বিদেশিদের প্রতি সাংস্কৃতিকভাবে বন্ধুভাবাপন্ন সামাজিক পরিবেশ থাকার পরও আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের প্রকল্প সংখ্যার তুলনায় সেগুলির মধ্যে প্রকৃত বাস্তবায়িত সংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের চিত্র খুবই হতাশাব্যঞ্জক। ১৯৯৬-৯৮ এই দুই বছরে ৩৬৫টি নিবন্ধিত বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের প্রকল্পের মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ৭২টি, ১৯৯৯-এর শেষাবধি বাস্তবায়নরত ছিল আরও ২৭টি, আর অবশিষ্ট ২৬৬টি প্রকল্পই রয়ে যায় শুধু কাগজে কলমে, বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ ছাড়াই।
সারণি ২-এ বাংলাদেশে নিবন্ধিত ও প্রকৃত প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণগত তারতম্য বিষয়ে একটি চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। নিবন্ধিত এবং প্রকৃত বিনিয়োগের মধ্যে বাষিক পার্থক্যের পেছনে একটি কারণ হতে পারে এমন যে বিদেশী বিনিয়োগকারীর তাদের প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশে তাদের নির্ধারিত স্থানে ও সময়ে যেসব প্রস্ততি প্রয়োজন সেগুলো ঠিকঠাক মতো পেতে বিলম্ব ঘটে। আবার এমনও হতে পারে যে, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা প্রাথমিকভাবে একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও পরবর্তীতে সেগুলো বিনিয়োগ বা বিনিয়োগের জন্য ভিন্ন কোনো মন্তব্যের কথা ভেবে তাদের সেসব প্রস্তাব স্থগিত রাখে বা একসময় বাতিল করে দেয়।
সারণি ২ ২০০৬-২০১৫ মেয়াদে বাংলাদেশে প্রতিশ্রুত ও প্রকৃত বিদেশী বিনিয়োগ (মিলিয়ন মার্কিন ডলার)
বছর | নিবন্ধিত বিদেশী বিনিয়োগ | প্রকৃত বিদেশী বিনিয়োগ | বার্ষিক ব্যবধান |
২০০৬ | ১৮৯৬ | ৭৯২.৫ | -১১০৩.৫ |
২০০৭ | ৬৪৭ | ৬৬৬.৪ | ১৯.৪ |
২০০৮ | ২৫৬৭ | ১০৮৬.৩ | -১৪৮০.৭ |
২০০৯ | ৬৬৪ | ৭০০.২ | ৩৬.২ |
২০১০ | ৩১৩৯ | ৯১৩.৩ | -২২২৫.৭ |
২০১১ | ৬৪৯৬ | ১১৩৬.৪ | -৫৩৫৯.৬ |
২০১২ | ২৬১১ | ১২৯২.৬ | -১৩১৮.৪ |
২০১৩ | ২৬২২ | ১৫৯৯.১ | ১০২২.৯ |
২০১৪ | ৯৩৭ | ১৫২৬.৭ | ৫৮৯.৭ |
২০১৫ | ৫৬২ | ১৭০০ | ১১৩৮ |
মোট | ৩২৯০৫ | ১৬০৩০.৮ | -১৬৮৭৫.৫ |
উৎস বোর্ড অফ ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ সরকার
বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের সম্পূর্ণটা বিদেশ থেকে আসা অর্থ নয় এবং সারণি ৩-এ দেখানো হয়েছে যে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগে আছে সম্পূর্ণ নতুন বিনিয়োগ (ইকুইটি), মুনাফার পুর্নবিনিয়োগ এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আন্তকোম্পানি ঋণ। মুনাফার পুর্নবিনিয়োগের মাধ্যমে যে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ সৃষ্টি হয় তা এক অর্থে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক নতুন বিদেশী বিনিয়োগ হলেও এক অর্থে এটির উৎস দেশেরই অভ্যন্তরীণ ব্যবসায় এবং বর্তমানে এটি মোট বিদেশী বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় অংশ।
সারণি ৩ ধরণ অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (মিলিয়ন মার্কিন ডলার)
ধরণ | ২০১১ | ২০১৫ | ২০১৯ |
ইকুইটি | ৪৩১.৮৫ | ৬৯৬.৬৭ | ৮০৩.৭ |
পূর্ণবিনিয়োগ | ৪৮৯.৬৩ | ১১১৪.৭৪ | ১৪৬৭.৩ |
আন্ত কোম্পানি ঋণ | ২১৪.৯ | ৩৯৩.৯৮ | ৬০২.৯ |
মোট | ১১৩৬.৩৮ | ২২৩৫.৩৯ | ২৮৭৩.৯ |
উৎস অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউ ২০২০
বাংলাদেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের বেশকিছু সমস্যা আছে। এগুলি হচ্ছে অতিমাত্রায় আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা, দলিলপত্র প্রক্রিয়াকরণে অনিয়ম ও দুর্নীতি, স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় স্থিরমনস্কতার অভাব, প্রকল্প বাছাই বা সেগুলির সম্ভাব্যতা যাচাই-এ অহেতুক বিলম্ব এবং কাঁচামাল ও যন্ত্রসরঞ্জামাদি আমদানির ওপর শুল্কসংক্রান্ত নীতিতে ঘন ঘন পরিবর্তন। প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় বহুস্তরভিত্তিক প্রশাসনিক কর্তৃত্ব, অনেক ক্ষেত্রে একই বিষয়ে একাধিক কর্তৃপক্ষের খবরদারি এবং কোথায় কী আনুষ্ঠানিকতা করণীয় সে বিষয়ে স্বচ্ছতার অভাব ইত্যাদি প্রকল্প-প্রস্তাব উত্থাপনকারী বিনিয়োগকারীদের ও একইসঙ্গে, প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের প্রায়শ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দেয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের উচ্চ ও মাঝারি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ঘন ঘন বদলি দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি কাজেরও ধারাবাহিকতা ক্ষুণœ করায় ভূমিকা রাখে এবং যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা সৃষ্টি করে। বিদেশি অনেক কোম্পানি এসব কারণ ছাড়াও ঘন ঘন বিদুৎ বিভ্রাট, অবকাঠামোর দুর্দশা, শ্রমিক অসন্তোষ ও রাজনৈতিক কারণে ব্যবসায়িক কাজে বাধা ইত্যাদিতে হতাশ হয়ে একসময় নিজেদের বিনিয়োগ প্রকল্প গুটিয়ে নেয়। এতসব জটিলতার অতিরিক্ত আরেক সমস্যা হচ্ছে পেশাগতভাবে দক্ষ কর্মীর অভাব। বাংলাদেশে ঝুঁকি গ্রহণ, কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণসহ নানাবিধ উদ্যোক্তা কর্মদক্ষতার সাথে পরিচালনার উপযোগী লোকবলের অভাব প্রকট। কারিগরি প্রকৌশল, ব্যবস্থাপনায় দক্ষ ও উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন লোকও খুবই সীমিত।
বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রক্রিয়ায় শুরুতেই বিদেশি বিনিয়োগকারীকে বিনিয়োগ বোর্ডের কোন সদস্যের সঙ্গে দেখা করে তার সঙ্গে বিনিয়োগ প্রকল্প সম্পর্কে আলোচনা করে নিতে হয় এবং প্রকল্পটি নিবন্ধনের জন্যে আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিকট থেকে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের জন্য ছাড়পত্র সংগ্রহের পর বিনিয়োগ বোর্ড প্রকল্পের অন্যান্য সব বিষয় যাচাই করে তার জন্য নিবন্ধনপত্র ইস্যু করে। এরপর বিনিয়োগকারীকে প্রকল্পটি যে কোম্পানি আকারে প্রতিষ্ঠিত হবে তার পরিমেলবন্ধ ও পরিমেল নিয়মাবলি জমা দিতে হয়। যাতে কোম্পানিটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, যৌথ-মূলধনি কারবারের নিবন্ধক এবং প্রধান কারখানা ও বিস্ফোরক সামগ্রী পরিদর্শকের কার্যালয়ে তালিকাবদ্ধ হতে পারে। নিবন্ধন-সংক্রান্ত এ সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর কোম্পানিটি জমি ক্রয় ও অধিগ্রহণ, কারখানা ও অফিস ভবন নির্মাণ, যন্ত্রসরঞ্জাম আমদানির জন্য কোন বাণিজ্যিক ব্যাংকে প্রত্যয়পত্র খোলা, শুল্ক বন্দরে গিয়ে আমদানিকৃত মালামাল খালাস করা ইত্যাদি শুরু করতে পারে। গোটা প্রক্রিয়াটি আপাতদৃষ্টিতে বেশ সরল মনে হলেও এর সকল ধাপ অতিক্রমে বাস্তব কাজগুলি সম্পন্ন করতে গিয়ে বিনিয়োগকারীকে প্রায়শই নানারকম ঝামেলায় পড়তে হয়। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীরা স্থানীয় অবকাঠামো, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়। বাংলাদেশ সম্ভবত এসব অস্থিরতার হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১-এ উন্নত অর্থনীতির দেশে উন্নীত হওয়া সম্ভব।
বাংলাদেশ সস্তা শ্রমের একটা সুবিধা ভোগ করে এবং এই সস্তা শ্রম রপ্তানিযোগ্য পণ্যতে রূপান্তর করা সম্ভব। কিন্তু প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের লোড শেডিং, বাজে যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিভিন্ন লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ ব্যয়, হরতাল, অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাংচুর এবং প্রায় সকল সরকারি কার্যালয় ও শুল্কবন্দরে কাজ নিষ্পন্নকরণের অহেতুক জটিল পদ্ধতি ইত্যাদি এই সুবিধার প্রায় সবটাই আত্মসাৎ করে ফেলে। তবে দেশে বর্তমানে অধিক পরিমাণে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আমন্ত্রণ ও সেগুলি প্রতিরক্ষার পক্ষে একটি সাধারণ রাজনৈতিক পরিবেশে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণের বদলে, তাকে সহায়তা ও সমর্থন দানের একটি নীতিগত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও আইএফসি (আন্তর্জাতিক অর্থসংস্থান সংস্থা) তাদের ‘ডুইং বিজনেস ২০০৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে বিশ্বের ১৮১ দেশের মধ্যে ১১০তম স্থানে ফেলেছে। ঐ প্রতিবেদনে বিনিয়োগকারীর স্বার্থরক্ষা ইনডেক্সে ঋণের প্রাপ্যতা ও অর্থপ্রবাহ বিবেচনায় বাংলাদেশকে ৫৯টি দেশের মধ্যে ১৮তম স্থানে রেখেছে। তবে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সূচকে (জিসিআই) বাংলাদেশের তেমন অগ্রগতি নেই বললেই চলে। ২০১৩ সালে এই সূচকে বাংলাদেশে অবস্থান ছিল ১৪০টি দেশের মধ্যে ১০৭ এ, ২০১৫ সালে সূচকটির মান ছিল ১-৭ স্কেলে ৩.৮ যা তুলনামূলক ভালো বলে এই কারণে বিবেচিত হয় যে প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের জন্য মানটি ৩.৮-এর চেয়ে বেশ কমই ছিল। যাইহোক পরিবেশ, স্বাস্থ্য. শিক্ষা, অবকাঠামো, বাজার কার্যকারিতা ইত্যাদি বিবেচনায় সন্তোষজনক অগ্রগতির কারণে বাংলাদেশে অগ্রগতির একটি ইতিবাচক ধারা সূচিত হয়েছে। এই অগ্রগতির ধারা ধীরভাবে হলেও অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের যে নতুন ধারা সৃষ্টি হয়েছে তা আশাব্যঞ্জক এবং সরকারের ভূমিকাও ক্রমাগত নিয়ন্ত্রণমূলক না হয়ে সন্তোষজনক হলে তা বিদেশী বিনিয়োগকে আরও বেশি করে আকৃষ্ট করবে। [এস.এম. মাহফুজুর রহমান]