অধিকারী, মাইকেল সুশীল
অধিকারী, মাইকেল সুশীল (১৯২৪-১৯৯৭) কবি, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ। ১৯২৪ সালের ১৪ জানুয়ারি বরিশাল জেলার কাঠিরা গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা রেভারেন্ড বিধুভূষণ অধিকারী। মাইকেল গ্রাম্য পাঠশালা এবং বরিশাল ও পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুর মিশন স্কুলে পড়াশোনা করেন। বরিশাল বিএম কলেজেও তিনি কিছুদিন (১৯৪৪) অধ্যয়ন করেন।
সুশীল অধিকারী ছাত্রাবস্থায়ই সমাজসেবায় যোগ দেন এবং ১৯৫২ সাল পর্যন্ত বিশেষত খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। ১৯৫৩ সালে খুলনায় এসে তিনি সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৬৮ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৯ বছর তিনি বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট সংঘ ও বাংলাদেশ চার্চ পরিষদের সভাপতি ছিলেন। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং পরে রাষ্ট্রপতির এনজিওবিষয়ক উপদেষ্টা পদে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা লাভ করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তিনি সেবামূলক, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
সুশীল অধিকারী কবি জীবনানন্দ দাশের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য লাভ করেন। আশির দশকে তিনি সাহিত্যচর্চা শুরু করেন এবং বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর উল্লখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ: প্রত্যক্ষ প্রতিদিন (১৯৮৪), বিনাশের শৃঙ্খলে (১৯৮৩), নিষ্ক্রিয় উৎকণ্ঠা (১৯৯১), নদীর কাছে হার মেনেছি (১৯৯১), জানাশোনা কথা (১৯৯৩), নীল জলরাশি তোমাকে দিলাম (১৯৯৫), রেভারেন্ড ই এল ওয়েঙ্গার (১৯৯৫) ইত্যাদি। তাঁর দুটি সম্পাদিত গ্রন্থ হচ্ছে খ্রিষ্টীয় পুস্তিকা সঙ্কলন (২ খন্ড, ১৯৯৫) এবং মুসলমানী বাংলা-ইংরেজি অভিধান (১৯৯৬)। সাহিত্যচর্চা ও সমাজসেবার অবদানস্বরূপ তিনি উল্লেখযোগ্য পুরস্কারে ভূষিত হন: খুলনা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন পুরস্কার (১৯৮৪), কবিতালাপ পদক (১৯৮৬), দিশারী পুরস্কার (১৯৯২) ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র পুরস্কার (১৯৯৩)। ১৯৯৭ সালের ১৫ জুলাই কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। [সুশান্ত সরকার]