ঈশ্বরদী উপজেলা
ঈশ্বরদী উপজেলা (পাবনা জেলা) আয়তন: ২৪৬.৯০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০৩´ থেকে ২৪°১৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০০´ থেকে ৮৯°১১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে লালপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলা, দক্ষিণে গঙ্গা নদী, কুষ্টিয়া সদর ও মিরপুর (কুষ্টিয়া) উপজেলা, পূর্বে পাবনা সদর ও আটঘরিয়া উপজেলা, পশ্চিমে গঙ্গা নদী ও ভেড়ামারা উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৯২৯৩৮; পুরুষ ১৫২৮০০, মহিলা ১৪০১৩৮। মুসলিম ২৮৪০৪৩, হিন্দু ৮৩৭২, খ্রিস্টান ১০, বৌদ্ধ ৪৭৩ এবং অন্যান্য ৪০।
জলাশয় পদ্মা (গঙ্গা) ও কামালা নদী উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন ঈশ্বরদী থানা গঠিত হয় ১৯৪৯ সালে এবং ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৭ | ১২৮ | ১২৩ | ৯৬৩০৫ | ১৯৬৬৩৩ | ১১৮৬ | ৫৮.৫ | ৪৬.৭ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
১৯.৫৯ | ৯ | ২৯ | ৬২৬১৭ | ৩১৯৬ | ৫৭.৪ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
১৭.৭৯ | ৪ | ৩৩৬৮৮ | ১৮৯৪ | ৬০.৫ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
দাশুরিয়া ২১ | ৭৩৪৭ | ১৫২২৬ | ১৪০৬৪ | ৪৬.০৬ | ||||
পাকশী ৫২ | ৪৮০২ | ১৭৯৬১ | ১৬৭০৩ | ৬০.৬৩ | ||||
মুলাডুলি ৪২ | ১০৫৪৮ | ১৭৯৮৬ | ১৬৯৭৬ | ৪৮.৬৯ | ||||
লক্ষ্মীকুন্ডী ৩১ | ১২৫০৩ | ১২২৭১ | ১০৬২৬ | ৩১.৭৯ | ||||
সারা ৮৪ | ৫৩১৭ | ১২১৬৭ | ১০৮৮৩ | ৪৭.২৭ | ||||
সাহাপুর ৬৩ | ৬৭৯০ | ২১৬০৮ | ১৯৮৮১ | ৪৪.৭৯ | ||||
সিলিমপুর ৭৩ | ৮২৫৫ | ২৩২১১ | ২০৭৫৮ | ৫৪.১২ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ পতিরাজপুর জামে মসজিদ।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি এ উপজেলায় ১৯১২ সালে মাইকেল লর্ড হার্ডিঞ্জের নামানুসারে পদ্মা (গঙ্গা) নদীর উপর বাংলাদেশের বৃহত্তম (দৈর্ঘ্য ৫৯৪০ ফুট) রেলসেতু তৈরি করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ মাধবপুর গ্রামে পাকসেনারা ৫ জন যুবককে হত্যা করে। ১১ ডিসেম্বর জয়নগর গ্রামে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই হয়। ১৪ ডিসেম্বর ভারতীয় বিমানের বোমার আঘাতে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১২ নং স্প্যান ভেঙ্গে যায় এবং ৯ ও ১৫ নং স্প্যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ (পুরাতন বাস টার্মিনাল)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২১০, মন্দির ১২, গির্জা ৩, প্যাগোডা ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মসজিদুল ফাতাহ, ঠাকুরবাড়ী মন্দির, মৌবাড়িয়া মন্দির।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫০.৭%; পুরুষ ৫২.০%, মহিলা ৪৯.২%। কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫১, টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট ১, কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট ১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯১, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৪, কেজি স্কুল ২৫, মাদ্রাসা ১৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ (১৯৬৩), সাঁড়া মাড়োয়ারী স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১৯১৭), পাকুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), রূপপুর বালিকা বিদ্যালয় (১৯১৮), বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), ঈশ্বরদী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), মোবারম ম্যামোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, রেলওয়ে নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, পাকশী চন্দ্রপ্রভা উচ্চ বিদ্যালয়, মাঝদিয়া ইসলামীয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬১)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক উত্তর জনতা, সাপ্তাহিক জংশন, সাপ্তাহিক জনদাবী; ত্রৈমাসিক অগ্রণী। সাময়িকী: একুশের চেতনা, একুশ আমার একুশ।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৫, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ৭, মহিলা সমিতি ৩২, সিনেমা হল ৪, নাট্যমঞ্চ ১, নাট্যদল ২।
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হার্ডিঞ্জ ব্রীজ, লালন শাহ সেতু, ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, দেশের একমাত্র ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র (এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম), ডাল গবেষণা কেন্দ্র, রেশম বীজাগার ও বিমান বন্দর।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৩.৬৩%, অকৃষি শ্রমিক ৭.৫৬%, ব্যবসা ২০.৯০%, শিল্প ১.৭৩%, পরিবহন ও যোগাযোগ ৫.২৬%, চাকরি ১৩.৮৬%, নির্মাণ ৩.১৭%, ধর্মীয় সেবা ০.২৩%, রেন্ট আন্ড রেমিটেন্স ০.৪৮% এবং অন্যান্য ১৩.১৮%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪২.৯৬%, ভূমিহীন ৫৭.০৪%। শহরে ২৮.৫৬% এবং গ্রামে ৫০.০৩% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ইক্ষু, পান, আলু, পিঁয়াজ, পেঁপে।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসল কাউন, তিসি, যব, অড়হর, গুজা, মিষ্টি আলু, সাদা সরিষা।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, লেবু, বরই, বেল, তাল।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১২, গবাদিপশু ১৭০, হাঁস-মুরগি ২৮।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২০০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৭১০ কিমি; রেলপথ ৩০ কিমি; নৌপথ ১৭ নটিক্যাল মাইল। বিমান বন্দর ১।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা সুগারমিল, পেপার মিল, স্পিনিং মিল, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, রাইসমিল, স্টিল মিল।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, পাট ও পাটজাতশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩০, মেলা ৩। সাহাপাড়া নতুন হাট, আওতাপাড়া হাট, ঈশ্বরদী বাজার, পাকশী বিবিসি বাজার, মাঝপাড়া হাট, দাশুরিয়া হাট, আড়নকোলা হাট, আড়মবাড়িয়া হাট, মুলাডুলি হাট উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পান, পিঁয়াজ, পেঁপে, বেগুন, চাল, আখের গুড়, চিনি, সিমেন্ট, বরফ, ময়দা।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৭.৭৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯০.৬১%, পুকুর ০.১৫%, ট্যাপ ১.৬০% এবং অন্যান্য ৭.৬৪%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩০.২৩% (গ্রামে ১৭.০৪% ও শহরে ৫৭.০৯%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৩.৯৭% (গ্রামে ৬৩.৬৩% ও শহরে ৩৪.৩০%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৫.৮০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, রেলওয়ে হাসপাতাল ২, ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৭, দাতব্য চিকিৎসালয় ৩, ক্লিনিক ৪।
এনজিও ব্র্যাক, টিএমএসএস, সিসিডিবি। [মোঃ শহীদুল্লাহ খান]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ঈশ্বরদী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।