হাশিম, আবুল
হাশিম, আবুল (১৯০৫-১৯৭৪) মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী। তিনি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কাশিয়ারা গ্রামে (কাশেম নগর) জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৮ সালে বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে তিনি গ্র্যাজুয়েট হন। তাঁর পিতা আবুল কাশেম (১৮৭২-১৯৩৬) সমসাময়িক বাংলায় বিশেষ করে বর্ধমান জেলার একজন খ্যাতনামা ব্যক্তি ছিলেন। হাশিম ১৯৩১ সালে আইন শাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন এবং ওই বছরই বর্ধমান জেলা কোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন।
পারিবারিক ঐতিহ্য অনুসরণ করে হাশিম ১৯৩৬ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন এবং বর্ধমান থেকে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। বর্ধমান মুসলিম লীগের সভাপতি হিসেবে আবুল হাশিম এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত (১৯৩৮) সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ সম্মেলনে এবং ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের লাহোর সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯৪৩ সালে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সাংগঠনিকভাবে বাংলায় মুসলিম লীগকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনসমূহে মুসলিম লীগের সাফল্য প্রধানত হাশিমের গতিশীল নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছিল। হাশিম ছিলেন ১৯৪৭ সালের ‘অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা’ পরিকল্পনার অন্যতম রূপকার। তবে তাঁর এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল।
ভারত বিভাগের পর আবুল হাশিম পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক আইনসভার বিরোধীদলের সংসদীয় নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৫০ সালে আবুল হাশিম পূর্ববঙ্গে চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
ভাষা আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সমসাময়িক রাজনৈতিক দলগুলির মতাদর্শের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পেরে হাশিম ‘খিলাফত-ই-রববানী পার্টি’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ইসলামী আদর্শ বাস্তবে রূপায়িত করাই ছিল এ দলের উদ্দেশ্য। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি এ দলের সভাপতি ছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত এ শতকের চলিশের দশকের শেষের দিক থেকে তাঁর দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে এবং পঞ্চাশের দশকে দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু এ দৈহিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তিনি বলিষ্ঠভাবে জ্ঞান চর্চা ও সামাজিক কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৬০ সালে আবুল হাশিমকে ‘ইসলামিক একাডেমী’র পরিচালক নিয়োগ করা হয়। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় তিনি বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: The Creed of Islam, In Retrospection, Let us go to War এবং As I see it। [গোলাম কিবরিয়া ভূইয়া]