স্থলবন্দর

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:০৬, ২৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

স্থলবন্দর  সীমান্তে অবস্থিত আন্তদেশীয় পণ্য ও যাত্রী যাতায়াত এবং বিনিময় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। স্থলবন্দরে শুল্ক, অভিবাসন, সীমান্ত নিরাপত্তা বিধান দপ্তর ছাড়াও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণমূলক দপ্তরসমূহের অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়। এখানে আন্তদেশীয় পণ্য বিনিময় যাত্রী অভিবাসন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ নিমিত্তে পণ্যাগার (ওয়ারহাউজ), যাত্রী ছাউনি, অভ্যর্থনাকেন্দ্র, আমদানি-রপ্তানি দলিলাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাসহ সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো গড়ে ওঠে। স্থলবন্দরে যাতায়াতের নিমিত্তে উভয় দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠা যেমন জরুরি তেমনি আন্তদেশীয় পণ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে বৈধ-অবৈধতা ও আইন সঙ্গতার বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ের ব্যবস্থা থাকে।

বাংলাদেশের স্থলবন্দরসমূহ বাংলাদেশের সাথে ভারত, নেপাল, ভূটান ও মায়ানমারের স্থল কিংবা নদী দ্বারা সৃষ্ট সীমান্তে অবস্থিত। প্রতিবেশী দেশের অঞ্চল ও পণ্য বিনিময়ে সুযোগ-সুবিধার ভিত্তিতে কিংবা যাত্রী যাতায়াতের গুরুত্বের ভিত্তিতে স্থলবন্দরসমূহে অবকাঠামোগত সুবিধাবলীর ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। বেনাপোল বন্দর দিয়ে অধিক মাত্রায় পণ্য বিনিময় হয়ে থাকে পক্ষান্তরে তামাবিল দিয়ে পণ্যের চাইতে যাত্রী যাতায়াত বেশি হয়। স্থল বন্দরসমূহের অবকাঠামোগত সুবিধা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজনের নিরীক্ষেই গড়ে ওঠে।

বাংলাদেশের স্থল সীমান্তের দৈর্ঘ প্রায় ২৪০০ কিমি যার শতকরা ৯২ ভাগ ভারতের সঙ্গে এবং বাকি ৮ ভাগ মিয়ানমারের সঙ্গে। পুরো সীমান্তে ছোট-বড় ১৮১টি শুল্ক স্টেশন আছে যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন। এই শুল্ক স্টেশনসমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত ও নির্বাচিত স্টেশনসমূহে স্থলবন্দর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার দায়িত্ব দিয়ে ২০০১ সালের ২১ নং আইনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে  বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ (বাস্থবক)। এ যাবত ১৩টি স্থলবন্দর নিজস্ব কিংবা বিওটি ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাস্থবককে। প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে একটি বাণিজ্যবান্ধব সম্পর্ক বিকাশের লক্ষ্যে, স্থলবন্দরসমূহে অধিকতর সেবাধর্মীতা এবং সহজতর পরিচালনা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী প্রযুক্তিক সুবিধার সমন্বয় ঘটানোর মাধ্যমে আন্তদেশীয় বাণিজ্যে একটি অনুকূল ভারসাম্য অবস্থান তৈরির মিশন ও ভিশন রয়েছে বাস্থবকের। বাস্থবকের প্রধান কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে স্থলবন্দর পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণের নীতি প্রণয়ন, স্থলবন্দরে পণ্য গ্রহণ, সংরক্ষণ ও প্রদানের জন্য অপারেটর নিয়োগ, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে স্থলবন্দর ব্যবহারকারীদের নিকট থেকে আদায়যোগ্য কর, টোল, রেইট ও ফিমের তফসীল প্রণয়ন এবং স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যপূরণকল্পে কারো সঙ্গে কোনো চুক্তি সম্পাদন। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬টি স্থলবন্দর রয়েছে।

সারণি স্থলবন্দরের অবস্থান।

স্থলবন্দরের নাম জেলা সম্মুখবর্তী জেলা
বেনাপোল যশোর চবিবশ পরগনা
টেকনাফ কক্সবাজার মংডু (মিয়ানমার)
বাংলাবান্ধা পঞ্চগড় জলপাইগুড়ি
সোনামসজিদ নবাবগঞ্জ মালদহ
হিলি দিনাজপুর পশ্চিম দিনাজপুর
ভোমরা সাতক্ষীরা চবিবশ পরগনা
দর্শনা চুয়াডাঙ্গা নদীয়া
বিরল দিনাজপুর গৌর
বুড়িমারী লালমনিরহাট মেখালজিগঞ্জ
তামাবিল সিলেট শিলং
হালুয়াঘাট ময়মনসিংহ তুরা
আখাউড়া ব্রাহ্মণবাড়ীয়া আগরতলা
বিবিরবাজার কুমিল্লা আগরতলা
নাকুগাঁও শেরপুর ডালু (মেঘালয়)
বিলোনিয়া ফেনী বিলোনিয়া
গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী ময়মনসিংহ গাছুয়াপাড়া (মেঘালয়)

যশোর জেলার বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্যক্রম বাস্থবক-এর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ১ ফেব্রুয়ারি ২০০২ তারিখে শুরু হয়। এর আগে এটি ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ওয়ার হাউজ কর্পোরেশন এবং ১৯৮৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে ছিল। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সিংহভাগ এই স্থলবন্দরের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ৫৬.৭১ একর আয়তনের এ স্থলবন্দরে শুল্ক বিভাগের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিশনারেট, ৩০,০০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মোট ৩৫টি ওয়ার হাউজ, ১টি ট্রাক টার্মিনাল, ১টি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড এবং ৫টি ওপেন ইয়ার্ড রয়েছে।

কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদীর তীরে গড়ে ওঠা টেকনাফ স্থলবন্দরটি বিওটি ভিত্তিতে নিয়োজিত ব্যক্তি খাত ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। এই স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের মংডু বন্দরের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে উত্তরবঙ্গের কৃষিজাত পণ্য ভারতের মালদা জেলায় রপ্তানি এবং সেখান থেকে আসা ফল, চাল, বীজ ও রাসায়নিক সামগ্রী আমদানি হয়ে থাকে।

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরটি ২৬ নভেম্বর ২০০৭ তারিখে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু হয়। ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর অঞ্চলের সঙ্গে পোল্ডার/পাথর, ফলমূল ও খাদ্যশস্য আমদানির বিপরীতে ফলের রস, গার্মেন্টস, জামদানি শাড়ি রপ্তানি বাণিজ্য চলে এই স্থলবন্দর দিয়ে। কুমিল্লা জেলার বিবির বাজারের বিপরীতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগতলা। বিবির বাজার স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যসমূহের সঙ্গে আন্তদেশীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। দিনাজপুরের বিরল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের গৌড় অঞ্চলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারিত হচ্ছে।

পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় অবস্থিত বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটিতে বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের মধ্যে আন্তদেশীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে উঠার সমূহ সুযোগ বিদ্যমান। এ মুহূর্তে ভারতের সঙ্গে নেপালের ট্রানজিট চুক্তি না থাকায় বিশেষ ব্যবস্থাধীনে এ স্থলবন্দরে জিরো পয়েন্টে ব্যাক টু ব্যাক ট্রান্সশিপমেন্ট পদ্ধতিতে বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে। লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরটির মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারত ও ভুটানের পণ্য পারাপারের সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। এ বন্দর দিয়ে কয়লা, চুনাপাথর আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, ওষুধ, তৈজষপত্র ভারতের মেখলীগঞ্জ এবং ভূটানে রপ্তানি হচ্ছে। সিলেট জেলার তামাবিল স্থলবন্দরটি ভারতের শিলং শহরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের একটি পুরাতন প্রবেশপথ বাস্থবক কর্তৃক এ বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু না করায় এটি এখনো শুল্ক স্টেশন হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মূলত ভারতের ত্রিপুরা এবং অন্যান্য রাজ্যসমূহে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিই হয়ে থাকে। সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দটির উন্নয়ন কাজ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এগিয়ে চলছে, এখনো এটি শুল্ক স্টেশন হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। ভোমরা থেকে চবিবশ পরগনা জেলা তথা মহানগর কলকাতার কাছাকাছি হওয়ায় ভোমরা স্থলবন্দরটির তাৎপর্য ও গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দর্শনা স্থলবন্দর মূলত রেলওয়ে ওয়াগন ট্রান্সশিপমেন্ট এবং যাত্রী যাতায়াতের কাজে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট স্থলবন্দর ক্রমশ ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক পণ্য পারাপারে সম্ভাবনাময় প্রবেশপথ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।  [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]