হোসেন, মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম
হোসেন, মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম (১৯৩২-১৯৭১) শিক্ষাবিদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী। জন্ম ১৯৩২ সালের ১ ডিসেম্বর বাগেরহাট সদর থানার বাদোখালী গ্রামে। পিতা মোহাম্মদ আবদুল গণি মোল্লা এবং মাতা চাঁদ বড়ু বিবি। মোয়াজ্জেম হোসেন ফকিরহাটের কাজদিয়া হাই মাদ্রাসা থেকে ১৯৪৮ সালে হাই মাদ্রাসা পাস, বাগেরহাট পি.সি কলেজ থেকে ১৯৫০ সালে আই.এ এবং ১৯৫২ সালে বি.এ পাস করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৫৪ সালে বাগেরহাটের চিতলমারী হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি বাগেরহাট পি.সি কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে তিনি পি.সি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মোয়াজ্জেম হোসেন একজন সংগঠকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি বাগেরহাটে স্থানীয় যুবকদের সংগঠিত করে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন এবং পরে তাঁর দল নিয়ে শরণার্থীদের নিরাপদ ভারত গমনে সহায়তা করেন। তিনি বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে প্রেরণ করেন। নিজেও তিনি ভারত থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। অক্টোবরে তাঁকে ৯নং সেক্টরে সুবেদার তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে বাগেরহাট সাব-সেক্টরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সংগঠকের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি মাধবকাঠি ও পানিঘাটের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ২৮ অক্টোবর রাতে বাদোখালী ক্যাম্প থেকে বাড়ি ফেরার পথে স্বাধীনতা বিরোধীদের গুলিতে তিনি নিহত হন।
মোয়াজ্জেম হোসেন অর্থনীতি বিষয়ে কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। এদের মধ্যে রয়েছে Essentials of Banking, Hand Book of Economics, ফলিত অর্থনীতি, পাকিস্তানের অর্থনীতি, অর্থনীতি তত্ত্ব, সরল ব্যাংক ব্যবস্থা। এছাড়া তিনি বাদোখালী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে জড়িত ছিলেন।
১৯৯৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ তাঁর নামে স্মারক ডাকটিকিট এবং সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশ করে। মুক্তিযুদ্ধ ও শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে রুমা স্মৃতি পদক ১৯৯৭ (মরণোত্তর) এবং বিশ্ব বাঙালি সম্মেলন পুরস্কার ২০০১ (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯৯৫ সালে বাগেরহাটে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শহীদ অধ্যাপক মোয়াজ্জেম ফাউন্ডেশন। [এ.টি.এম যায়েদ হোসেন]