সোহরাওয়ার্দী, ওবায়দুল্লাহ আল ওবায়দী
সোহরাওয়ার্দী, ওবায়দুল্লাহ আল ওবায়দী (১৮৩২-১৮৮৫) শিক্ষাবিদ, লেখক। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার চিতওয়া গ্রামে বিখ্যাত সোহরাওয়ার্দী পরিবারে তাঁর জন্ম। পরিবারের ঐতিহ্য অনুসারে তিনি স্বগৃহে আরবি ও ফারসি ভাষা শেখেন এবং পরে কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাইনাল সেন্ট্রাল পরীক্ষা (১৮৫৭) পাস করেন। তিনি নিজ চেষ্টায় ইংরেজি ভাষাও রপ্ত করেন। তাঁর প্রথম চাকরি হয় কলকাতায় অবস্থানকারী মহীশূর রাজপরিবারের শাহাজাদা জালালউদ্দীনের (টীপু সুলতানের পৌত্র) মোসাহেবরূপে; পরে বড়লাটের লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের অনুবাদ বিভাগের মুনশি হন।
পরে তিনি হুগলি কলেজে অ্যাংলো-আরবির অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন (১৮৬৫)। সেখানে সৈয়দ আমীর আলী ছিলেন তাঁর ছাত্র। ১৮৭৪ সালে ঢাকা মাদ্রাসার প্রথম সুপারিনটেন্ডেন্ট নিযুক্ত হয়ে আমৃত্যু ওই পদে বহাল ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন, যুক্তিবাদী, উদারপন্থি শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারক।
ওবায়দুল্লাহ আবদুল লতিফ ও সৈয়দ আহমদ খানের চিন্তাধারার অনুসারী ছিলেন। কলকাতার মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি (১৮৬৩), সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মহামেডান অ্যাসোসিয়েশন (১৮৭৭), বেঙ্গল সোস্যাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন ইত্যাদি সংগঠনের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। তিনি আলীগড় মহামেডান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজের (১৮৭৫) পরিচালনা কমিটিরও সদস্য ছিলেন। ঢাকায় ওবায়দুল্লাহ ‘সমাজ সম্মিলনী’ (১৮৭৯) নামে একটি স্বল্পস্থায়ী সংগঠন স্থাপন করেন। ঢাকা কলেজের তৎকালীন ছাত্রদের উদ্যোগে গঠিত ঢাকা মুসলমান সুহূদ সম্মিলনের (১৮৮৩) তিনিই ছিলেন প্রধান উৎসাহদাতা।
ওবায়দুল্লাহ উর্দু, আরবি, ফারসি ও ইংরেজি ভাষায় একাধিক মৌলিক ও অনুবাদ গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: উর্দু দিওয়ান (১৮৮০), ফারসি দিওয়ান (১৮৮৬), দস্তর-ই-পার্সি আমুজ (ফারসি ব্যাকরণ), লুববুল আরাব (আরবি ব্যাকরণ), মিফতাহুল আদাব (উর্দু ব্যাকরণ), দবিস্তান-ই-দানিশ আমুস (উর্দু, পদার্থবিদ্যা), দস্তর-ই-ফার্সি-আমুস (ফারসি, ছন্দ ও অলঙ্কার), দস্তান-ই-ইবরাতবার (ফারসি, আত্মজীবনী) ইত্যাদি। তিনি সৈয়দ আমীর আলীর সহযোগিতায় সৈয়দ কেরামত আলীর মখজুল উলুম-এর ইংরেজি অনুবাদ A Treatise on the Sciences (১৮৬৭) এবং রামমোহন রায়ের তুহফাতুল মুওয়াহেদীন-এর ইংরেজি অনুবাদ (১৮৮৪) প্রকাশ করেন। তাঁর Mahomedan Education in Bengal (১৮৬৭) শিক্ষাবিষয়ক একখানি মৌলিক গ্রন্থ।
জ্ঞান, শিক্ষা ও সমাজের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য ভারত সরকার তাঁকে ‘বাহার-উল-উলম’ (বিদ্যাসাগর) উপাধিতে ভূষিত করে। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাহার-উল-উলুম ওবায়দী সোহরাওয়ার্দী’ পদকটি আজও প্রচলিত আছে। আচার্য হরিনাথ দে শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ তাঁর একটি তৈলচিত্র অঙ্কন করেন। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র ড. আবদুল্লাহ আল মামুন সোহরাওয়ার্দী শিক্ষাক্ষেত্রে এবং অপর পুত্র হাসান সোহরাওয়ার্দী রাজনীতিক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৮৮৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ওবায়দুল্লাহর মৃত্যু হয়। [ওয়াকিল আহমদ]