সুপারি
সুপারি লম্বা, সরু এশীয় পাম গাছ Areca catechu-এর ফল। চুন ও পানের সঙ্গে একত্রে চিবিয়ে খাওয়া হয়। গাছ শাখা-প্রশাখাহীন, প্রায় ৩০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। কান্ড মসৃণ, মাথায় ১-২ মিটার লম্বা বড় বড় পাতার একটি গুচ্ছ; পুষ্পদন্ডে বহু শাখা-প্রশাখা থাকে, গ্রামাঞ্চলে বলে ‘কাঁদি’। এক কাঁদিতে প্রচুর সুপারি থাকে। ফল এক ধরনের ড্রুপ (drupe), ৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়, পাকলে কমলা রঙের দেখায়। একটিমাত্র শক্ত বীজ (সুপারি) কঠিন তন্তুময় অন্তঃত্বকে ঢাকা থাকে। সারা বছর কমবেশি ফল হয়; তবে পৌষ-মাঘ মাসে হয় সবচেয়ে বেশি। সুপারি গাছ প্রায় ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
সুপারির উৎপত্তি স্থল সম্ভবত ফিলিপাইন ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। গাছটি অত্যন্ত খরা সংবেদনশীল এবং বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১২৫০ মিলিমিটার অপেক্ষা কম থাকলে চাষের জন্য সেচ প্রয়োজন হয়। নানা ধরনের মাটিতে জন্মালেও কাদা-দোঅাঁশ মাটিই বেশি উপযোগী। সুপারি চাষের অনুকূল জলবায়ু বাংলাদেশের সর্বত্রই আছে। এদেশে সুপারির চাষাধীন মোট জমি প্রায় ৩৬,৫০০ হেক্টর। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ৩.৪৫ মেট্রিক টন এবং গোটা বছরের মোট উৎপাদন প্রায় ২৬,৫০০ মেট্রিক টন। সব জেলায় কমবেশি চাষ হলেও বরিশাল, রাঙ্গামাটি ও খুলনায় সিংহভাগ সুপারি উৎপন্ন হয়। এছাড়া গ্রামে-গঞ্জে অনেক বসতবাড়িতেই সুপারি গাছ জন্মায়। শুধু সুপারি চিবানো গেলেও চুনসহ পানের সঙ্গে কাটা সুপারি খাওয়াই রেওয়াজ। বাংলাদেশের সর্বত্র আহারের পর এবং প্রায় সব উৎসব-অনুষ্ঠানে পান খাওয়ার বিশেষ প্রচলন রয়েছে।
সুপারি উত্তেজক ও ক্রিমিনাশক। উদরাময় নিরাময়ে ১০-১৫ গ্রেন সুপারি চূর্ণ প্রতি ৩-৪ ঘণ্টা পর পর সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। মূত্রবৈকল্যে সুপারি উপকারী এবং সম্ভবত কামবর্ধক। সুপারি মাড়ির রক্তপাত থামায়। গোলকৃমি ও ফিতাকৃমি দমনে ঘসা-সুপারি কার্যকর। [এ.কে.এম রফিউল ইসলাম]
আরও দেখুন পান।