শ্রীমঙ্গল উপজেলা
শ্রীমঙ্গল উপজেলা (মৌলভীবাজার জেলা) আয়তন: ৪৫০.৭৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০৮´ থেকে ২৪°২৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৩৬´ থেকে ৯১°৪৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে কমলগঞ্জ উপজেলা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পশ্চিমে চুনারুঘাট, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৭৮২৩২; পুরুষ ১৪৩০৩৩, মহিলা ১৩৫১৯৯। মুসলিম ১৫৪৩৪১, হিন্দু ১১৯৫১৬, বৌদ্ধ ৪২০৪, খ্রিস্টান ৯২ এবং অন্যান্য ৭৯।
জলাশয় বিলাস (গোপলা), গোপবিয়া, ফুলছড়ি, উদনাছড়া ও বামাছড়া নদী এবং হাইল হাওর উলেখযোগ্য।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৯ | ১০৯ | ২০৭ | ৩২৫০৬ | ২৫৮৮১৪ | ৬১৭ | ৬১.৮ | ৩৬.৫ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
১৬.২০ | ৯ | ২০ | ১৯৪১৮ | ১১৯৯ | ৬৬.২ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
- | ১ | ১৩০৮৮ | - | ৫৫.১ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আশিদ্রোন ১৫ | ১১৪২১ | ১৮৮২৪ | ১৮১৫৬ | ৪৬.৯৪ | ||||
কালাপুর ২৮ | ১৯১৯৪ | ১৬২৬৫ | ১৫৯৭৩ | ৩৬.৭৫ | ||||
কালীঘাট ৩৮ | ১৬০৬০ | ১১৩১৭ | ১০৭৭৮ | ২৪.৫৬ | ||||
ভূনবীর ১৯ | ৮৮৭৫ | ১৫১২৪ | ১৫১৮৮ | ৩৯.২৮ | ||||
মির্জাপুর ৪৭ | ১১৭৯৩ | ১২৩১৬ | ১১৬২৮ | ৩০.৭০ | ||||
রাজঘাট ৫৭ | ১৩৭৩৪ | ১৩৯৩৭ | ১৩১০৮ | ২১.৫২ | ||||
শ্রীমঙ্গল ৮৫ | ৩৫৭৫ | ২২৮৫৭ | ২১১৮৪ | ৫২.৫৬ | ||||
সাতগাঁও ৬৬ | ৭২৮৪ | ৬২২৯ | ৫৭৩৬ | ২৩.৮৯ | ||||
সিন্দুরখান ৭৬ | ৭১১৮ | ১৫৫৪১ | ১৪৬৫৩ | ৩৬.৫৫ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রশাসন শ্রীমঙ্গল থানা গঠিত হয় ১৯১২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮২ সালে। পৌরসভা গঠন করা হয় ১৯৩৫ সালে।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ নির্মাই শিববাড়ি (১৪৫৪), কালাপুর গ্রামে প্রাপ্ত একাদশ শতাব্দীর রাজা মরুন্ডনাথের তাম্রশাসন ও লামুয়া গ্রামের মাটির নিচ থেকে উদ্ধারকৃত অনন্ত নারায়ণ দেবতার বিগ্রহ।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ১৯৬৩ সালে বালিশিরা কৃষক বিদ্রোহ চলাকালে পুলিশের গুলিতে উপজেলার ২ জন কৃষক নিহত হন। ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল পাকবাহিনী শ্রীমঙ্গলে প্রবেশ করে হত্যা, লুণ্ঠন, নারী নির্যাতন এবং অগ্নিসংযোগ করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ২ (উত্তর ভাড়াউড়া, দক্ষিণ ভাড়াউড়া); বধ্যভূমি ২ (বিডিআর ক্যাম্প, ওয়াপদা অফিসের পিছনে); স্মৃতিস্তম্ভ ১ (উত্তর ভাড়াউড়া)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৬৪, মন্দির ৩৮, গির্জা ১, তীর্থস্থান ১, রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম ২, আখড়া ৬।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৯.৬%; পুরুষ ৪৪.৩%, মহিলা ৩৪.৬%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৭, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, মাদ্রাসা ৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ, বিটিআরআই হাইস্কুল এন্ড কলেজ, দি বাড্স রেসিডেন্সিয়াল মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজ, দশরথ বহুপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৬), ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), ডোবারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮২), চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৪), চন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩৪), উত্তরসুর কুলচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: খোলা চিঠি; সাপ্তাহিক: শ্রীমঙ্গলের চিঠি, শ্রীভূমি, শ্রীবাণী, পূবালী বার্তা, পূবালী, চায়ের দেশ, শ্রীমঙ্গল পরিক্রমা; পাক্ষিক: বহ্নিশিখা।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৪, ক্লাব ৩৪, নাট্যমঞ্চ ৩০, নাট্যদল ৬, সিনেমা হল ৪।
দর্শনীয় স্থান ভূনবীর গ্রামের বাসুদেব মন্দির, হাইল হাওর, লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, সীতেশ বাবুর মিনি চিড়িয়াখানা, ভাড়াউড়া লেক, মাগুর ছড়া খাসিয়াপুঞ্জি ও গ্যাসকূপ, ডেনস্টন সিমেট্রি।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩০.৯০%, অকৃষি শ্রমিক ২০.১৬%, শিল্প ১.৮৩%, ব্যবসা ১৪.৭২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৯৪%, চাকরি ১০.০৬%, নির্মাণ ১.২৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৪৯% এবং অন্যান্য ১৬.২৫%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৩৩.২১%, ভূমিহীন ৬৬.৭৯%। শহরে ৩৯.৪৬% এবং গ্রামে ৩২.৩৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল চা, ধান, পান, রাবার, আলু, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি সিসেল (ম্যানিলা হেম্প), কাউন, তিল।
প্রধান ফল-ফলাদি আনারস, কাঁঠাল, লেবু।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১০, গবাদিপশু ৫৫, হাঁস-মুরগি ৩০, হ্যাচারি ২।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৪৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪০৫ কিমি। রেলস্টেশন ১, এয়ার স্ট্রিপ (রানওয়ে) ১।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা চা-কারখানা ১৫, ফ্লাওয়ার মিল ৪, কোল্ডস্টোরেজ ২, বরফকল ৩, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ ১৪, গ্যালভানাইজড স্টীল মিল ১, রাবার প্রসেসিং পান্ট ২, টিম্বার ট্রিটমেন্ট পান্ট ১, বয়লার রাইস মিল ২।
কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৩, মেলা ৪। মির্জাপুর হাট, সাতগাঁও হাট, সিন্দুরখান হাট, শ্রীমঙ্গল হাট, ভৈরববাজার হাট এবং নির্মাই শিববাড়ির শিব চতুর্দশীর মেলা, গন্ধর্বপুর কাল ভৈরবের মেলা, ভীমসী মেলা ও উত্তরসুরের চড়কমেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য চা, আনারস, লেবু, পান।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসুচির আওতাধীন। তবে ৩৫.৩৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র ২।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৭২.০৫%, ট্যাপ ৪.৯৩%, পুকুর ৪.১২% এবং অন্যান্য ১৮.৯০%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩১.৩৪% (শহরে ৭২.৪৯% এবং গ্রামে ২৫.৮৬%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪১.৫৯% (শহরে ২৪.২৩% এবং গ্রামে ৪৩.৯০%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৭.০৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, হাসপাতাল ২, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫, স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্র ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২।
এনজিও কারিতাস, ব্র্যাক। [গোপাল দেব চৌধুরী]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; শ্রীমঙ্গল উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।