শরফুদ্দিন, আবদুল্লাহ আল-মুতী
শরফুদ্দিন, আবদুল্লাহ আল-মুতী (১৯৩০-১৯৯৮) জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক, শিক্ষাবিদ ও প্রশাসক। আবদুলাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলার ফুলবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে এম.এসসি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা বিষয়ে ১৯৬০ সালে এম.এ ও ১৯৬২ সালে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন।
বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন সচিব আল-মুতী শরফুদ্দিনের কর্মজীবন শুরু হয় সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক হিসেবে। পরবর্তী সময়ে তিনি শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, জনশিক্ষা পরিচালক (ডিপিআই), বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক কাউন্সিলর, শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি এডিবি-ইউএনডিপি অর্থায়নকৃত মাধ্যমিক বিজ্ঞান শিক্ষা প্রকল্পের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে আল-মুতী শরফুদ্দিনের অবদান অসামান্য। তিনি এদেশে বিজ্ঞানকে ছোটদের মধ্যে জনপ্রিয় করার পথিকৃৎ। তাঁর প্রকাশিত বিজ্ঞান, পরিবেশ ও শিক্ষাবিষয়ক বইয়ের সংখ্যা ২৮। উল্লেখযোগ্য বইগুলির মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান ও মানুষ, এ যুগের বিজ্ঞান, বিপন্ন পরিবেশ, বিজ্ঞান-জিজ্ঞাসা, সাগরের রহস্যপুরী, মেঘ বৃষ্টি রোদ এবং পরিবেশের সংকট ঘনিয়ে আসছে।
বিজ্ঞান শিক্ষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, একুশে পদক, শিশু একাডেমী পুরস্কার, ইউনেস্কোর কলিঙ্গ পুরস্কার এবং ড. কুদরত-ই-খুদা স্বর্ণপদকসহ এক ডজনের অধিক পুরস্কার লাভ করেন।
আল-মুতী শরফুদ্দিন বাংলা একাডেমী প্রকাশিত বিজ্ঞান বিশ্বকোষ-এর প্রধান সম্পাদক ছিলেন এবং ‘মুকুল’ নামে ছোটদের ম্যাগাজিনের সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন। কর্মময় জীবনের মাঝখানেও তিনি সাহিত্য সংসদ, প্রগতি লেখক সংঘ, কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, বিজ্ঞান সংস্কৃতি পরিষদ এবং Human Development Foundation-সহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি ছিলেন ইসলামিক একাডেমী অব সাইন্স-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা ফেলো; বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো এবং সভাপতি (১৯৮৮-৯১)। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমীর সভাপতি (১৯৮৬-৯০), Foundation for Research on Planning and Development-এর সহ-সভাপতি (১৯৯৩), Bangladesh Association for Science Education-এর সভাপতি (১৯৮৮-৯৫), International Council of Associations for Science Education-এর নির্বাহি সদস্য (১৯৮৯-৯৩) এবং ইউনেস্কোর মহাপরিচালক মনোনীত International Scientific Council-এর সদস্য ছিলেন। আল-মুতী শরফুদ্দিন ১৯৯৮ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির National Encyclopedia of Bangladesh Project-এর Project Implementation Committee-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। [সাজাহান মিয়া]