ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি
ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি ক্যামেরা ও ভিডিও (video) যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে শল্যচিকিৎসার এক অতি আধুনিক ও উন্নতমানের কৌশল। এক্ষেত্রে সনাতন পদ্ধতিতে রোগীর পেট কেটে কষ্টদায়ক অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হয় না। রোগীকে অজ্ঞান বা তার অনুভূতি বিলোপ করে দেহে লম্বা ছেদন অথবা কর্তন করে সরাসরি নির্দিষ্ট স্থান নিরীক্ষণের পরিবর্তে সূক্ষ্ম ভিডিও ও অস্ত্রোপচারের নলাকার যন্ত্রাদি একটি ক্ষুদ্র ছিদ্রের মাধ্যমে দেহে প্রবিষ্ট করিয়ে অপারেশনের কার্যাদি সম্পন্ন করা হয়। ফ্রান্সে ১৯৮৭ সালে সর্ব প্রথম ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে রোগাক্রান্ত পিত্তথলি সফলতার সঙ্গে অপসারণ করা হয়। এরপর থেকে পৃথিবীর বহুদেশ এই অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করে।
ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতি উদ্ভাবনের পরপরই দ্রুত laparoscopic appendectomy, herniorrhaphy, bowel resection এবং উদরে অন্যান্য অস্ত্রোপচারের অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে। এই কৌশল অনন্য এ কারণে যে এখানে ক্যামেরা, দূরনিরীক্ষণের যন্ত্রপাতি এবং শল্যচিকিৎসার অত্যাধুনিক জটিল যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটেছে। কম ব্যথা, দ্রুত আরোগ্যলাভ, হাসপাতালে স্বল্প সময় অবস্থান, শীঘ্রই নিজের কাজ করার ক্ষমতা অর্জন এবং শারীরিক অন্য কোন ধরনের ক্ষতি বা বৈকল্য না ঘটায় ল্যাপারোস্কোপিক চিকিৎসা পদ্ধতি সারাবিশ্বে শল্যচিকিৎসক ও রোগীদের নিকট সমভাবে সমাদৃত হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রথম laparoscopic cholecystectomy সম্পন্ন হয়েছিল ঢাকায় বারডেম হাসপাতালে (BIRDEM Hospital) ২০শে ডিসেম্বর ১৯৯১ সালে। রোগী ছিলেন ২৪ বছর বয়স্কা সারওয়াত খানম। বারডেম হাসপাতালে ঐ সময় International Surgical Congress অনুষ্ঠানের পর এ অপারেশনের সিদ্ধান্ত হয় এবং প্রতিপাদক এই অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন টোকিও মেট্রোপলিটান পুলিশ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. হাশিমতো দাইজো এবং টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের স্নাতকোত্তর-গবেষক ছাত্র ডা. সরদার এ. নাঈম। ডা. নাঈম জাপানে উচ্চ প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে ল্যাপারোস্কোপি প্রযুক্তির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করেন, সহযোগী শল্যচিকিৎসক এবং কৌশলীদের প্রশিক্ষণ দেন এবং ক্রমে বাংলাদেশে laparoscopic cholecystectomy প্রবর্তন করে তা জনপ্রিয় করে তোলেন।
১৯৯১ সালে প্রথম ল্যাপারোস্কোপিক অপারেশন সম্পন্ন হলেও নিয়মিতভাবে এ প্রযুক্তি চালু করতে আরও কয়েক বছর সময় লেগে যায়। বারডেম-এ ১৯৯৩ সালে ডা. সরদার এ. নাঈম দেশের প্রথম ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন হিসেবে যোগদান করার পর এ চিকিৎসা পদ্ধতির ভিত্তি সূচিত হয়। বারডেম-এ শুরু হলেও এ চিকিৎসা কৌশল ঢাকার জাপান বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে (Japan Bangladesh Friendship Hospital) প্রসারতা লাভ করে যেখানে ডা. নাঈম একজন খন্ডকালিন চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে বারডেম এবং জাপান বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল উভয় প্রতিষ্ঠানই laparoscopic cholecystectomy-এর উপর সার্জনদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করে। ফলে, এই চিকিৎসা পদ্ধতি এখন বাংলাদেশে সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। [ফয়সাল আবদুল্লাহ মোয়াজ্জাম]
আরও দেখুন আর্থ্রস্কোপিক সার্জারি।