রোগ শনাক্তকারী কেন্দ্র
রোগ শনাক্তকারী কেন্দ্র (Medical Diagnostic Centre) বিশেষ ধরনের প্রতিষ্ঠান যেখানে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের প্রকৃতি ও পরিস্থিতি নির্ণয় করা হয়। একটি রোগ নির্ণয় বা শনাক্তকারী কেন্দ্র স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার একটি জরুরি অংশ। সাধারণত রোগসমূহ নির্ণয় করা হয়ে থাকে কি জাতীয় জীবাণুর কারণে রোগটি হয়েছে তা জানার মাধ্যমে। রোগের অনেক রকম অবস্থা নির্ণয় করা যায় দেহের প্রাণ রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যসমূহ পরীক্ষার মাধ্যমে, যেমন রক্ত, মলমূত্র, দেহকোষ বা কোষকলার পরীক্ষার মাধ্যমে। যেসব রোগ শেষের শ্রেণিতে পড়ে সেগুলিকে শরীরের বিপাকীয় রোগ বলা হয়, কারণ এগুলি কোন বিশেষ জীবাণু বা ভাইরাসের কারণে ঘটে না, বরং শরীরের প্রাণরাসায়নিক কর্মকান্ডের ত্রুটি বা বিপর্যয়গত ত্রুটির কারণে সেগুলি হয়ে থাকে। সকল চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানেই যেমন মেডিকেল কলেজসমূহ, হাসপাতালসমূহ বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ, গবেষণাগার বা মাঠপর্যায়ের গবেষণা পরিচালনা যাঁরা করে থাকেন, তাঁরা সাধারণত রোগ নির্ণয়ের সুযোগ-সুবিধা ও উপকরণসমূহ দ্বারা সুসজ্জিত থাকেন। এসব সুযোগ-সুবিধার মধ্যে সাধারণত থাকে জীবাণুর উৎপাদন ও লালন পালন চিহ্নিত করণ এবং সংবেদনশীলতা পরীক্ষার ব্যবস্থা। মলে বা রক্তে কোন পরজীবীর অস্তিত্ব নির্ণয়ও বেশির ভাগ ল্যাবরেটরিতে করা হয়ে থাকে। অনেক ল্যাবরেটরিতেই রক্ত এবং মলমূত্রের নমুনা পরীক্ষা করে বিভিন্ন রকমের প্রাণরাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় এবং সীমিত সংখ্যক ল্যাবরেটরিতে কোন কোন রোগের প্রতিষেধকের পরীক্ষাও করা হয়ে থাকে। অনেক প্রতিষ্ঠানেই এক্সরে ছবি নেবার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা থাকে।
অধুনা অনেক রকমের আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন আলট্রাসোনোগ্রাফি, এন্ডোস্কোপি ইত্যাদির সাহায্যে দেহ অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহ পরীক্ষণের উদ্দেশ্যে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হতে দেখা যায়। এসব কৃৎকৌশলের সাথে আর এক প্রকার বহু বিস্তৃত নবতর রোগ প্রতিরোধ নির্ণায়ক এবং ডি.এন.এ ভিত্তিক আনবিক জীববিদ্যাগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা আছে যেগুলি যথেষ্ট জনপ্রিয় হচ্ছে। এর সবগুলিই যথেষ্ট দামী। ফলে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সেবা হিসেবে এগুলি ব্যয়সাশ্রয়ী বলে গণ্য করা হয় না। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিনদিনই বেড়ে চলছে, তাই এদের চাহিদাও বাড়ছে। ১৯৯০ সালের প্রথম দিক থেকে এদের বিতরণে এবং ব্যবহারে দেশে বেসরকারি খাতে বিশেষ উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে এবং এতে ভাল ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশে রোগ নির্ণায়ক কেন্দ্রসমূহে এক দশক আগেও প্রধানত গতানুগতিক রোগনির্ণয় বিষয়ক সুযোগ-সুবিধাই প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার অংশ হিসেবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাখা হতো। তা সত্ত্বেও বেসরকারি খাতে কিছুটা পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা থেকে যেত, কারণ সরকারি-সুযোগ সুবিধা খুবই অপ্রতুল, আবার এই বেসরকারি রোগ নির্ণয় ক্লিনিকগুলি সংখ্যায় খুবই কম এবং পরিমিত আকারে পরিচালিত হতো। ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশের জৈবচিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে একটা নাটকীয় ঝোঁক লক্ষ্য করা যায়। অনেক রোগ নির্ণয় ক্লিনিক বড় বড় নগর ও শহরগুলিতে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেগুলিতে নানা রকমের দামী যন্ত্রপাতি নিয়ে অত্যাধুনিক কৃৎকৌশলের সাহায্যে সর্বশেষ শিল্প নিদর্শনমূলক পরিষেবা দেবার চেষ্টা করছে।
বেসরকারি খাতে রোগ নির্ণয় ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা বাংলাদেশে প্রশাসনিকভাবে একটি সহজ ব্যাপার। এটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত হয়। রাজধানী শহর ঢাকাতেই প্রায় একশতটির মতো বৃহৎ রোগ নির্ণয় ক্লিনিক বিদ্যমান। বিভাগীয় সদর দফতরগুলিতে যথা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট শহরে অনেকগুলো এ ধরনের ক্লিনিক আছে।
বেসরকারি খাতে গতানুগতিক সেবা প্রদানকারী ছোট ছোট রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের সংখ্যা অসংখ্য। সেগুলি প্রধানত দেখা যায় নগরগুলি থেকে আরম্ভ করে উপজেলা পর্যায়ের শহর পর্যন্ত বিস্তৃত।
বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রশাসনিক ব্যবস্থার অধীনে উপজেলার সংখ্যা ৪৮৩টি। উপজেলাগুলিতে বেসরকারি খাতের রোগ নির্ণয় কেন্দ্র তেমন পাওয়া যায় না। তাই গ্রামাঞ্চলে রোগ নির্ণয়ের সুযোগ-সুবিধা খুবই সীমিত। অধুনা অল্প কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাকে (এনজিও) যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগ নির্ণয় কেন্দ্র পরিচালনা করতে দেখা যায়। [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]
আরও দেখুন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা।