রূপলাল হাউস
রূপলাল হাউস উনিশ শতকের প্রথমদিকে নির্মিত ঢাকার একটি মনোরম ও সুবৃহৎ অট্টালিকা। এটি বাকল্যান্ড বাঁধ ধরে বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরস্থ ভ্রমণের স্থানের দিক মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।
পুরানো ঢাকার ফরাশগঞ্জের স্বরূপ চন্দ্রের পুত্র রূপলাল দাস এবং রঘুনাথ দাস নামে দুই বিত্তবান ব্যবসায়ী ভ্রাতা যৌথভাবে এটি নির্মাণ করেন। তাঁরা ১৮৪০ সালে আরাতুন নামে এক আর্মেনীয় ব্যবসায়ীর নিকট হতে একটি পুরানো ভবন ক্রয় করেন। অতঃপর কলকাতায় মার্টিন কোম্পানির একজন স্থপতিকে নিযুক্ত করা হয় এবং বেশ কিছু অর্থ ব্যয় করে রূপলাল হাউসের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। এটি কিছুটা ভিন্ন স্থাপত্য রীতির দুটি অসমান ব্লকে বিভক্ত একটি দ্বিতল প্রাসাদ। এর সম্মুখে রয়েছে সুদৃশ্য নদী যা প্রায় ৯১.৪৪ মিটার দীর্ঘ। রূপলাল হাউস উপনিবেশিক আমলে প্রবর্তিত পরবর্তী রেনেসাঁ যুগের ইউরোপীয় স্থাপত্যের একটি চমৎকার উদাহরণ। এর ভূমি নকশা ইংরেজি বর্ণ ‘ই’ আকৃতির, যার তিন বাহু উত্তর দিকে বা নগরের দিকে প্রসারিত। মাঝের বাহুটির দৈর্ঘ্য ১৮.৩০ মিটার। রূপলাল হাউসে দেখা যায় প্রায় কোরিনথীয় ধরনের খাঁজ কাটা সুউচ্চ স্তম্ভমালার উপর স্থাপিত বিশাল একটি ছাদ এবং এর উপরে ছিল রেনেসাঁ যুগীয় বৈশিষ্ট্যমন্ডিত পেডিমেন্ট।
দোতলায় দুটি ব্লকে বিভিন্ন আয়তনের পঞ্চাশটিরও অধিক কক্ষ আছে। এর মধ্যে অধিকতর আকর্ষণীয় পশ্চিম উইং (Wing)-এর উপরতলার কক্ষটি ছিল আড়ম্বরপূর্ণ সাজে সজ্জিত একটি নাচঘর। এ নাচঘরের মেঝে ছিল কাঠের। ব্লকের সমস্ত দৈর্ঘ্য জুড়ে উত্তর ও দক্ষিণদিকে দুটি প্রশস্ত বারান্দা আছে। উভয় পার্শ্বস্থ এ বারান্দা দুটি সেমি-কোরিনথীয় স্তম্ভ অথবা সমায়ত ইটের থামসমূহের উপর স্থাপিত ছিল। এ স্তম্ভ বা থামসমূহের উপর বিভাজিত বা ত্রিপত্র খিলান ছিল।
ভবনটির গৌরবময় দিনগুলিতে রুচি ও চমৎকারিত্বের দিক দিয়ে এটি আহসান মঞ্জিল এর সমান ছিল। ১৮৮৮ সালে ভারতের ভাইসরয় লর্ড ডাফরিন এর ঢাকা সফরকালে তাঁর সম্মানে রূপলাল হাউসের নাচঘরে রূপলাল বল নাচের (Ball-dance) আয়োজন করেন। সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক এটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। তবে ভবনের অংশবিশেষ এখন অবৈধ বসবাসকারীদের দখলে রয়েছে। [নাজিমউদ্দীন আহমেদ]