রাজৈর উপজেলা
রাজৈর উপজেলা (মাদারীপুর জেলা) আয়তন: ২২৯.২৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০৬´ থেকে ২৩°২০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৬´ থেকে ৯০°০৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভাঙ্গা উপজেলা, দক্ষিণে কোটালিপাড়া ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা, পূর্বে মাদারীপুর সদর ও শিবচর উপজেলা, পশ্চিমে মুকসুদপুর ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা।
জনসংখ্যা ২১৮০৯৫; পুরুষ ১১০২৩৩, মহিলা ১০৭৮৬২। মুসলিম ১৪৬৭২৭, হিন্দু ৭০৩৯৩, বৌদ্ধ ৯৬২ এবং অন্যান্য ১৩।
জলাশয় প্রধান নদী: কুমার; মাদারীপুর বিলরুট ক্যানাল, চান্দার বিল ও বাগিয়ার বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন ১৯৮২ সালে রাজৈর থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮২ সালের ১৫ ডিসেম্বর থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ১০ | ৯৩ | ১৮৬ | ২০৩০২ | ১৯৭৭৯৩ | ৯৬২ | ৫২.৪ | ৪৩.৫ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৮.৭৯ | ১ | ২০৩০২ | ২৩১০ | ৫২.৩৯ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আমগ্রাম ০৯ | ৮৯৯৪ | ১৩১৭১ | ১২২২৫ | ৪২.৭৩ | ||||
ইশিবপুর ৪৭ | ৪৪৬৪ | ৯৮৪৩ | ৯৯৯৮ | ৪৪.৩১ | ||||
কদমবাড়ী ৬৬ | ১০২২৪ | ১২৮৪০ | ১২০৭২ | ৫২.৩৮ | ||||
কবিরাজপুর ৫৭ | ২২১৯ | ৫৬৭২ | ৫৯৫৯ | ৩৯.১৭ | ||||
খালিয়া ৭৬ | ৫৪৮৪ | ১৭০০৫ | ১৫৫৫৬ | ৫২.০১ | ||||
পাইকপাড়া ৮৫ | ৩৯৯০ | ৯২৮৯ | ৯৭৫১ | ৪১.৫১ | ||||
বদরপাশা ১৯ | ৫৮৭৮ | ১১৪৮৬ | ১১৪১৮ | ৪০.২৫ | ||||
বাজিতপুর ২৮ | ৫২০৭ | ৯৭৪৫ | ৯৫৫২ | ৩৬.২৭ | ||||
রাজৈর ৯৫ | ৪০৮২ | ১১৩৮১ | ১১০৫১ | ৫০.৬৬ | ||||
হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী | ৩৪২৪ | ৫১৫১ | ৫৫৫১ | ২৯.৭৯ | ||||
হোসেনপুর ৩৮ | ২৬৯০ | ৪৬৫০ | ৪৭২৯ | ৩২.০১ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ সরমঙ্গল মসজিদ, অন্নপূর্ণা মন্দির (১৭৬৫), খালিয়া রাজারাম মন্দির (১৮২৫), গণেশ পাগলের মন্দির, পতিতপাবন সেবাশ্রম মন্দির, প্রণবমঠ।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি এ উপজেলার সেনদিয়া গ্রামের অম্বিকাচরণ মজুমদার ১৮৮১ সালে ‘ফরিদপুর পিপলস এসোসিয়েশন’ নামে পূর্ববঙ্গের প্রথম রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৮ সালে তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী সেনদিয়া গ্রামের ৫০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞ চালায়।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৭০, মন্দির ২৯, গির্জা ২, প্যাগাডো ৫, মাযার ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: সরমঙ্গল মসজিদ, কদমপুর মসজিদ, সৈয়দ আমির আলী মাযার, অন্নপূর্ণা মন্দির (১৭৬৫), খালিয়া রাজারাম মন্দির (১৮২৫), গণেশ পাগলের মন্দির, পতিতপাবন সেবাশ্রম মন্দির, বৈরাগীবাজার বাড়ি বা কুশলচাঁদ গোঁসাইয়ের আশ্রম ও প্রণবমঠ।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৪.৩%; পুরুষ ৪৯.৫%, মহিলা ৩৯.১%। কলেজ ৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৮, কিন্ডার গার্টেন ৬, মাদ্রাসা ১৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রাজৈর ডিগ্রি কলেজ (১৯৭০), কদমবাড়ী ইউনিয়ন কলেজ (১৯৯০), শেখ রাসেল কলেজ, খালিয়া রাজারাম ইনস্টিটিউশন (১৯০০), রাজকুমার এডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন (১৯০২), আমগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), রাজৈর-গোপালগঞ্জ কাপালি যুবসংঘ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), ইশিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩২), কদমবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), আড়ুয়াকান্দি নটাখোলা বড়খোলা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৩), হরিদাসদি-মহেন্দ্রদি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৫), শাঁখারপাড় উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৮), কাশিমপুর মেহেরআলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৮), রাজৈর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৮), টেকেরহাট পপুলার উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০), হাসানকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭১), চতুষ্পল্লী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭৩), শহীদ সরদার শাহজাহান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৬)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৪৫, লাইব্রেরি ৮, শিশু সংগঠন ২, নাট্যদল ২, নারী সংগঠন ৩, খেলার মাঠ ২১, সিনেমা হল ৪।
বিশেষ আকর্ষণ টেকেরহাট বন্দর, খালিয়া গণউন্ন্য়ণ প্রচেষ্টার শান্তিকেন্দ্র, বাজিতপুর প্রনব মঠ, কমলাপুর নরোত্তমের আশ্রম।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী কিশলয় (অবলুপ্ত)।
জনগোষ্ঠির আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬০.৬৮%, অকৃষি শ্রমিক ২.৩৩%, শিল্প ১.০৪%, ব্যবসা ১৯.৫৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৮২%, চাকরি ৪.০৯%, নির্মাণ ২.৬৫%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৯৬% এবং অন্যান্য ৬.৬৬%।
কৃষিজমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৯.০১%, ভূমিহীন ৩০.৯৯%। শহরে ৪৮.৯৩% এবং গ্রামে ৭১.০৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, আখ, গম, মিষ্টি আলু, ডাল, সরিষা, তিল।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, চীনা, যব।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, জাম, জামরুল, লিচু, কলা, পেঁপে, সবেদা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৩১, গবাদিপশু ২, হাঁস-মুরগি ১৫৫, হ্যাচারি ১।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩২৫ কিমি; নৌপথ ৭০ নটিক্যাল মাইল।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, ডুলি।
শিল্প ও কলকারখানা বরফকল, চালকল, সুতাকল, পাটকল, ওয়েল্ডিং কারখানা, এ্যালুমিনিয়াম কারখানা, ব্রোঞ্জের অলঙ্কার তৈরির কারখানা।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, পিতল ও কাঁসাশিল্প, ঘানি।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২২, মেলা ৮। রাজৈর হাট, আমগ্রাম হাট, কদমবাড়ী হাট, ইশিবপুর হাট, বাজিতপুর হাট, কবিরাজপুর হাট, খালিয়া হাট, টেকের হাট এবং সেনদিয়া ও কদমবাড়ী সংক্রান্তির মেলা, খালিয়ার রথের মেলা, বাজিতপুর মাঘীপূর্ণিমা মেলা ও কদমবাড়ি গণেশ পাগলের কুম্ভ মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পাট, খেজুর গুড়, তিল, সরিষার তেল।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৮.৫৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ পিট কয়লা।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.২৬%, পুকুর ০.৭৭%, ট্যাপ ০.২৭% এবং অন্যান্য ২.৭০%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৯.৭১% (গ্রামে ৭.৭৫% এবং শহরে ২৯.১৩%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৭৮.৪৭% (গ্রামে ৮০.০৩% এবং শহরে ৬৩.০৩%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১১.২১% পরিবারের কোন ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৬, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, ক্লিনিক ৩।
এনজিও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা, ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন। [কল্যাণী রাণী চক্রবর্তী]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রাজৈর উপজলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।