রাজারহাট উপজেলা
রাজারহাট উপজেলা (কুড়িগ্রাম জেলা) আয়তন: ১৬৬.২৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৩৮´ থেকে ২৫°৫৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৭´ থেকে ৮৯°৩৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) ও লালমনিরহাট সদর উপজেলা, দক্ষিণে উলিপুর ও পীরগাছা উপজেলা, পূর্বে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা, পশ্চিমে লালমনিরহাট সদর ও কাউনিয়া উপজেলা।
জনসংখ্যা ১৬৯৫৭৯; পুরুষ ৮৫৫৯০, মহিলা ৮৩৯৮৯। মুসলিম ১৩৬০৪০, হিন্দু ৩৩৪৪৫, বৌদ্ধ ২১ এবং অন্যান্য ৭৩।
জলাশয় প্রধান নদী: তিস্তা ও ধরলা; চাকিরপাশার বিল, সারালা বিল, ঘড়িয়াল ডাঙ্গা বিল, চতলা বিল ও নাখেন্দা বিল উলেখযোগ্য।
প্রশাসন রাজারহাট থানা গঠিত হয় ১৯৮১ সালে এবং ১৯৮৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৭ | ১১০ | ১৮০ | ৮৫১১ | ১৬৯৫৭৯ | ১০২০ | ৪৭.৬০ | ৪০.২৯ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৪.৪৪ | ৩ | ৮৫১১ | ১৯১৩ | ৪৭.৫৯ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
উমর মজিদ | ৫৭৪৩ | ১৩০০৩ | ১২৭৬০ | ৪০.৭৮ | ||||
ঘড়িয়ালডাঙ্গা ৪২ | ৬৫৪৮ | ১৩৮১৬ | ১৩৩৮৯ | ৩৬.৭০ | ||||
চাকিরপাশার ২১ | ৫৮৮৬ | ১৩৩৪৫ | ১২৮২৭ | ৪০.৮৩ | ||||
ছিনাই ৩১ | ৫৭৮৬ | ১২৩০২ | ১১৯২৯ | ৩৫.৪০ | ||||
নাজিমখান ৫২ | ৪৪৩৯ | ৯৪৮৫ | ৯৫৫০ | ৪০.১৭ | ||||
বিদ্যানন্দ ১০ | ৫০৪১ | ৮১৩৯ | ৮৪০৫ | ৪০.৮৭ | ||||
রাজারহাট ৭৩ | ৭৬৩০ | ১৫৫০০ | ১৫১২৯ | ৪৩.৬৩ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ পাংগা রাজবাড়ি, ঘড়িয়ালডাঙ্গা জমিদার বাড়ি, কোটেশ্বরের শিবমন্দির, ফতে খা ও কালু খা নামে দুটি কামান (পাংগা রাজবাড়ি), চান্দামারী মসজিদ (রাজারহাট ইউনিয়ন), সিন্দুরমতি দীঘি, ব্যাপারীপাড়া শাহী মসজিদ (মুগল আমল)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৩৭, মন্দির ৩৬। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: রাজার হাট জামে মসজিদ, খানপাড়া জামে মসজিদ, চান্দামারি মসজিদ, মেকুরটারী শাহী মসজিদ, কোটেশ্বর শিবমন্দির, চতুর্ভুজ শিবমন্দির।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪০.৬৬%; পুরুষ ৪৬.৬২%, মহিলা ৩৪.৬৫%। কলেজ ৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২১, মাদ্রাসা ২৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মীর ইসমাইল হোসেন ডিগ্রি কলেজ (১৯৭৩), রাজারহাট মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৫), নাজিমখান উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০), পাংগারাণী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৯), রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৯), রতিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৪০), রাজারহাট আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯৭), রাজারহাট ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৬৩)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: গ্রামান্তর; সাহিত্য পত্রিকা: উত্তর চৈতী (অনিয়মিত)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, মহিলা সমিতি ৩, প্রেসক্লাব ১, নাট্য সংগঠন ২, খেলার মাঠ ১৬।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭০.৩২%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৯১%, শিল্প ০.৭৪%, ব্যবসা ১০.৭৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৯০%, চাকরি ৫.২০%, নির্মাণ ০.৪৫%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৬% এবং অন্যান্য ৫.৪২%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৩.৬৪%, ভূমিহীন ৪৬.৩৬%। শহরে ৫০.০৩% এবং গ্রামে ৫৩.৮২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, ভুট্টা, গম, মসুর, আলু, শাকসবজি, চীনাবাদাম, বাঁশ।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি চীনা, আউশ ধান, কাউন।
প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, আম, কলা, জামরুল, পেঁপে, কামরাঙা, সুপারি।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২১, গবাদিপশু ৪৩, হাঁস-মুরগি ২৭, মৎস্য নার্সারি ৪।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৭২ কিমি; নৌপথ ২.৭০ নটিক্যাল মাইল; রেলপথ ১০ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা চালকল, আটাকল, বরফকল, করাতকল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, পাটশিল্প, বুননশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৫, মেলা ৪। রাজার হাট, নাজিমখান হাট, সিঙ্গের ডাবরী হাট, বিদ্যানন্দ বাজার, এবং ফুলখাঁর চাকলা চড়কের মেলা, সিন্দুরমতির মেলা ও মাষাণ কুঁরার মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, পাট, আলু, সুপারি, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৯.৪৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৬৩%, পুকুর ০.২২%, ট্যাপ ০.২৯% এবং অন্যান্য ৩.৮৭%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৮.৭০% (গ্রামে ৩৮.০২% ও শহরে ৫২.২৫%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২১.৯৬% (গ্রামে ২১.৯৬% ও শহরে ২১.৫৪%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩৯.৩৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৭, ক্লিনিক ৯, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ৩।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৩০৪ সালের ভুমিকম্প, ১৯৪৪ সালের দুর্ভিক্ষ ও ১৯৯১ সালের বন্যায় এ উপজেলার ঘরবাড়ি, ফসল ও গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয় হয়।
এনজিও আশা, কেয়ার, ব্র্যাক। [মো. কামাল হোসেন]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রাজারহাট উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।